সিবিএন ডেস্ক:
দ্রুতই খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার— এমনটি আশা করা হলেও এখনই তা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বুধবার দেশটির (মালয়েশিয়া) মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগেরানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির’ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

হঠাৎ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগ এবং পরে তাকে ফের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বৈঠকটি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে দেশটির সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক হয়েছে। ২৬ তারিখে (ফেব্রুয়ারি) ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির’ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদসহ তার ক্যাবিনেটের (মন্ত্রিপরিষদ) পদত্যাগের কারণে বৈঠকটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

‘আশা করি দ্রুত এটি অনুষ্ঠিত হবে এবং দেশটিতে ফের আমরা শ্রমিক পাঠাতে পারব’- যোগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেছিলেন, চলতি মাস অথবা আগামী মার্চ থেকেই দেশটিতে নতুন করে শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে। কিন্তু দেশটিতে বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক নাটকীয়তায় সহসা সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আসা মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরাও নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

সোমবার দুপুরে আচমকা পদত্যাগ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। ভেঙে দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদও। পদত্যাগের পর স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল ৫টায় তিনি মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করতে রাজপ্রাসাদে যান। এ সময় পুনরায় তাকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন রাজা।

গতকাল রোববার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগেরান প্রবাসী বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া এই মুহূর্তে কর্মী সংকটে রয়েছে। দ্রুত বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার খুলতে আগ্রহী তারা। একই সঙ্গে গৃহকর্মী নেয়ারও আগ্রহ দেখান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমার দেশের (মালয়েশিয়া) শ্রমবাজার ফের চালুর ব্যাপারে কিছু বিষয়ে এক মত হয়েছি। এর মধ্যে আছে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এটি অনুষ্ঠিত হবে। আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আসবেন, মিটিংয়ে কয়েকটি বিষয় ফাইনালাইজড করতে। এরপর আমি পুরো বিষয়টি আমাদের মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করব।

‘জরুরি বিষয় হচ্ছে, আমরা (মালয়েশিয়া) বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চাই। এজন্য আমি বাংলাদেশে এসেছি। এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি আছে। আমাদের অর্থনীতির আকার বাড়ছে এবং আমাদের আরও কর্মী দরকার।’
‘এর চেয়ে বড় বিষয়, আমরা শ্রমবাজারের পরিধি বৃদ্ধি করেছি। আমরা গৃহকর্মী নিতে আগ্রহী। আমরা আশা করি, দ্রুত আমরা সব নির্ধারণ করতে পারব।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা এক জায়গায় এক মত হয়েছি যে, মার্কেট আমাদের দ্রুত খুলতে হবে। আমরা গৃহকর্মী পাঠাব মালয়েশিয়ায়।

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক আলাপ হয়েছে, এগুলো আগামী বুধবার জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সভায় চূড়ান্ত হবে। শিগগিরই আমরা যেকোনো একটা সিস্টেমে মালয়েশিয়ার বাজার খুলব।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রম রফতানি বন্ধ রয়েছে। এরপর বাজারটি উন্মুক্ত করতে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালির পরও বাজারটি উন্মুক্ত হয়নি। গত বছরের ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় দু’দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগেরান বলেন, বাংলাদেশ থেকে শূন্য ব্যয়ে কর্মী নিয়োগ করতে শিগগিরই চুক্তি হবে। নেপালের সঙ্গে যেভাবে চুক্তি হয়েছে ঠিক একইভাবে চুক্তি বাংলাদেশও চাচ্ছে।

তিনি বলেন, শূন্য ব্যয়ে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা বেশ অগ্রগতি হয়েছে এবং শিগগিরই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। কর্মী নিয়োগের সার্ভিস চার্জ, যাওয়া-আসার বিমান ভাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুরক্ষা স্ক্রিনিং এবং শুল্ক চার্জগুলো দেবে নিয়োগকর্তারা।