সিবিএন ডেস্ক:
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজসহ কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। প্রকল্প তৈরির কিছু দিন পরপর প্রকল্পের মেয়াদ আর শত শত কোটি টাকা বাড়ানোর প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি।

সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে কার্যপত্র থেকে জানা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের মেয়াদ মার্চ-২০১৯ থেকে ডিসেম্বর-২০২১ পর্যন্ত। এটি ধীরগতিসম্পন্ন। বাস্তব অগ্রগতি হলো ০.৫০ শতাংশ। এক বছর অতিবাহিত হলেও আর্থিক অগ্রগতি হচ্ছে ০.৪০ শতাংশ। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ পর্যন্ত অগ্রগতি ৫১ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ০.৫০ শতাংশ। অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ তিন হাজার ৭৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

অপরদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। জানুয়ারি শেষে এখানে আর্থিক বরাদ্দ শূন্য, বাস্তবায়ন এবং অগ্রগতিও শূন্য, পরিদর্শন করা হয়নি।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান এক্সপোর্ট কার্গো উত্তর দিকে অ্যাপ্রোচ সম্প্রসারণ দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত। এর মূল কাজই শুরু হয়েছে ২০২০ সালে। এর অগ্রগতি মাত্র ১৩ শতাংশ।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে, ট্যাক্সওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত। কিন্তু এ দুটির কাজের অগ্রগতি শূন্য।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায় জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত হলেও মাত্র ২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প মার্চ ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত হলেও অগ্রগতি অত্যন্ত ধীরগতির, মাত্র ৭ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দায় শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত হলেও অগ্রগতি ৫ শতাংশ। পঞ্চগড় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত হলেও অগ্রগতি ০.৫০ শতাংশ।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, এতগুলো প্রকল্প তৈরি করে কিছু দিন পরপরই প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। ১৩ হাজার কোটি থেকে ২৩ হাজার কোটি হয়। দেড়-দুই বছর পর প্রকল্পগুলো আবার রিভাইজড করতে হয় অর্থাৎ প্রজেক্ট যখন তৈরি করা হয়েছে তখন সঠিকভাবে করা হয়নি। আবার তখন যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় এক বছর যেতে না যেতেই দুই-তিন গুণ বাড়িয়ে দিতে বলা হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এজন্য কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এগুলো মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শনের পরে স্থায়ী কমিটিকে জানানো হয়েছে। আইএমইডি সচিব এর ব্যাখ্যা দেবেন। কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি তৈরি করে পাঠালেও সেই কর্তৃপক্ষই ডিউ ওয়েতে দ্বৈত কারণেই এক বছর বা ছয় মাস বা ৯ মাস পরে রিভিশন করে। নতুন আইটেম যোগ হয়, আপগ্রেডিং হয়। সুতরাং খরচ বাড়ে। এটিকে ব্যয় বৃদ্ধি বলা যাবে না, এটি রিভাইজড ব্যয়। ব্যয় বৃদ্ধি শব্দটা এখানে ব্যবহার করা যাবে না।

পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, প্রজেক্টগুলো তড়িঘড়ি করে আসায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত করে কোনোভাবে অনুমোদন নিতেই সাত-আট মাস চলে যায়। বাস্তবায়নের আগেই রিভিশনের প্রস্তাব চলে আসে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় এটি কিছুটা হলেও বিশৃঙ্খলার ইঙ্গিত দেয়। এই ডিপিপিগুলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হওয়া দেশের উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম। এ বিষয়ে মন্ত্রীর নির্দেশনা প্রয়োজন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।