জাগো নিউজ

যথাযথ নিয়ম পালনের পর পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া এক যুবকের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকায় ঝড় তুলেছে। কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি গলায় ফেস্টুন ও হাতে আবেদন ফরম ধরে হয়রানির নীরব প্রতিবাদ করেন।

যা পাসপোর্ট অফিসে আসা সেবাপ্রার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখে ছবি তুলে অনেকের ফেসবুক ওয়ালে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে নানাজন নানা মন্তব্য করে হয়রানির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকাতে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

জানা গেছে, প্রতিবাদী যুবক শহিদুল ইসলাম (২০) কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওর সাতঘরিয়া পাড়ার মৃত নুরুল আলমের ছেলে।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা নেই। এতিম জীবন ছন্নছাড়া চলছে। সম্প্রতি ড্রাইভিং ভিসায় স্বজনদের মাধ্যমে প্রবাসে যাওয়ার প্রস্তাব পান তিনি। কিন্তু পাসপোর্ট নেই, আগে ভোটারও হননি। তবে, ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশনের করা হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তিনি নথিভুক্ত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সার্ভারে নথিভুক্ত হওয়া তার এনআইডি নম্বর-১৯৯৯২২১২৪৩৫০০০২৪২’।

‘সেই হালনাগাদ ভোটাররা এখনো প্রিন্টেড এনআইডি পায়নি। ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য উদ্যোক্তার মাধ্যমে জানতে পারি নির্বাচন কমিশন সার্ভারে যুক্ত হওয়া নথি দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করা যাবে। সেভাবেই সরকারি ফি দিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সিলসহ সার্ভারের নথি সংগ্রহ করে যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি’।

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা করে আবেদন কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে গিয়ে থমকে যায়। প্রিন্টেড এনআইডি কপি না থাকার অজুহাতে কর্তৃপক্ষ ফরম জমা না নিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। নির্বাচন অফিসের দেয়া এনআইডির সার্ভার কপিটি সাময়িক সনদের মতো কার্যকরী জানার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ফের জমা দিতে যায়। কিন্তু একই অজুহাতে আবারো ফেরত পাঠানো হয়’।

প্রতিবাদী এ যুবক বলেন, ‘আমার মতো আরও অনেককে একই অজুহাতে বের করে দিয়েছে দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম অন্যকেউ আসুক বা না আসুক নিজেই প্রতিবাদ করব। তাই আমার আবেদন, সার্ভার নথি যোগ করে প্রধানমন্ত্রীর কয়েকটি বাণী এবং পাসপোর্টের মূল স্লোগান যুক্ত করে একটি প্ল্যাকার্ড করেছি ১৯ তারিখ। ২০ তারিখ চুপিসারে অফিসের গেইটে এসে দাঁড়িয়েছি। খবর নিয়ে দেখেছি, দালালের মাধ্যমে না আসলে পাসপোর্ট সেবাপ্রার্থীদের এভাবে একটা না একটা অজুহাতে অহেতুক হয়রানি করা হয়। তাই নীরব প্রতিবাদটি করেছি’।

শহিদুল বলেন, ‘বিষয়টি উল্লেখ করে ফরম জমা নিতে ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়ে একটি ই-মেইলও করেছি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকের কাছে’। এখনো (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত) কোনো উত্তর পাননি বলে দাবি করেন তিনি।

তার অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) মোহাম্মদ তাজ বিল্লাহ বলেন, ‘উপর থেকে নির্দেশনা রয়েছে প্রিন্টেড এনআইডি কপি না থাকলে ফরম জমা নেয়া যাবে না। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় হয়তো এমন সিদ্ধান্ত। তবে, হালনাগাদ তালিকাভুক্তরা প্রিন্ট কার্ড না পেলে সেক্ষেত্রে কি করণীয় এমন প্রশ্নে তিনি (এডি) কোনো সদুত্তর দেননি’।

jagonews24

অন্যদিকে, একইভাবে ভোগান্তিতে পড়া কক্সবাজারের পেকুয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন রাজাখালীর শফিউল আলমের ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি ভোটার হয়েছি ২০০৮ সালে। এনআইডি কার্ডও রয়েছে। সম্প্রতি বন্যায় ঘর ভেঙে গেলে অর্জিনাল কার্ডটি কাদায় নষ্ট হয়ে যায়। এর ডুপ্লিকেট কপি তুলেছি, আবার সার্ভার কপিও নির্বাচন অফিসের সিলে সত্যায়িত করে দেয়া হয়েছে। এরপরও আবেদন ফেরত দেয়া হয়েছে। বলেছে, আসল কপি থাকতে ডুপ্লিকেট কপি কেন করা হয়েছে..? কারণ বলার পর, বললো-দুটাই নকল!

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা বলেন, হালনাগাদ নথিভুক্ত হওয়াদের অনেককে এখনো প্রিন্টেড কপি দেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু যারা হালনাগাদে চূড়ান্ত হয়েছেন তাদের নথি সার্ভারে যুক্ত হয়েছে। সেই সার্ভার কপি দিয়ে প্রিন্টেড এনআইডির প্রয়োজনীয় যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। এটি সাময়িক সনদের মতোই কার্যকর। কেন সেটা মূল্যায়িত হচ্ছে না আমার বোধগম্য নয়। আগের এডি এসব নথি নিয়ে অনেক পাসপোর্ট দিয়েছেন বলে আমার জানা আছে। শুধু সঠিকভাবে চেক করার অনুরোধ করতেন।

এ বিষয়ের সমাধান কি জানতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ, অতিরিক্ত মহা-পরিচালক সেলিনা বানু ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক মো. আবু সাইদের সরকারি মুঠোফোন ও ল্যান্ডফোনে একাধিকবার কল করা হয়। রিং হলেও ফোন রিসিভ করেননি কেউ-ই।