মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

ঘুষের টাকা সহ র‍্যাব কর্তৃক গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ধৃত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল শাখার সার্ভেয়ার ওয়াসিমকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। কক্সবাজারের কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ পিপিএম সিবিএন-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি আবু মোঃ শাহজাহান কবির সিবিএন-কে জানান, বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারী বিকেলে র‍্যাব-১৫ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মোঃ হারনর রশিদ বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন আইন, যাহা ১৮৬০ সালের ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪০৯/১৬১/১০৯/৩৪ ধরায় পটুয়াখালীর বউফল উপজেলার দলিল উদ্দিন খান ও মরিয়ম বেগমের পুত্র সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে ধৃত আসামী আসামী দেখিয়ে এবং সার্ভেয়ার মোঃ ফয়সাল খান ও সার্ভেয়ার মোঃ ফরিদ উদ্দিনকে পলাতক আসামী উল্লেখ করে আরো ৪/৫ জন অজ্ঞাত আসামী দিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। একইসাথে সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে সদর মডেল থানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। এজাহারটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে হওয়ায় থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি মামলা আকারে নেওয়ার কোন এখতিয়ার নেই। ওসি আবু মোঃ শাহজাহান কবির জানান, অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সার্ভেয়ার ওয়াসিমকে কোর্ট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে সন্ধ্যায় আদালতে প্রেরণ করা হয়।

কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ পিপিএম সিবিএন-কে জানান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ভা.) ও কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-তামান্না ফারাহ চার্জ ওয়ারেন্ট মূলে সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিমকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ওসি আবু মোঃ শাহজাহান কবির আরো জানান, র‍্যাব-১৫ এর প্রদত্ত এজাহারটি থানা কর্তৃপক্ষ ফরওয়ার্ডিং দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে শিঘ্রী প্রেরণ করবেন। নিয়ম অনুযায়ী দুদক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করবেন।

পরে সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে রাত ৮ টার দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন।

প্রসংগত, ঘুষের টাকা সহ র‍্যাব-১৫ কর্তৃক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল শাখার সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ওয়াসিমকে শহরের বাহারছরা বাসা থেকে ৬ লাখ নগদ টাকা সহ ধৃত, একই শাখার সার্ভেয়ার মোঃ ফেরদৌস খানের তারাবনিয়ার ছরা বাসা থেকে ২৭ লাখ ঘুষের অর্থ ও সার্ভেয়ার মোঃ ফরিদ উদ্দিনের বাহারছরার বাসা থেকে ৬০ লাখ ৮০ হাজার ঘুষের টাকা উদ্ধার করা হয়। বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারী বিকেলে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পৃথক ৩ টি অভিযানে প্রায় ৯৪ লক্ষ ঘুষের টাকা, ১৫ লক্ষ টাকার ৪ টি চেক ও কিছু মূল্যবান নথি উদ্ধার করা হয়। এসময় সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ওয়াসিম খানকে হাতেনাতে আটক করা হয়। বাসা থেকে ঘুষের টাকা উদ্ধারের পর সার্ভেয়ার মোঃ ফেরদৌস খান ও সার্ভেয়ার ফরিদ উদ্দিন পলাতক রয়েছে।

এ বিষয়ে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ পিপিপি বার, পিএসসি গণমাধ্যমকে বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করেছেন।

এদিকে, ধৃত ও পলাতক সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার সিবিএন-কে জানান, ২০ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত এ বিষয়ে তারা কোন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় জেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। লিখিতভাবে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে বিন্দু পরিমানও শৈথিল্য প্রদর্শন করবে না বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে সিবিএন-কে জানান।