সিবিএন ডেস্ক
সেলফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ বা পিসির মতো ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। আজকাল অল্পবয়সীরা এসব নিয়ে বেশি মেতে থাকছে বলে চোখের নানা সমস্যা হচ্ছে। তবে একটু সতর্ক থাকলে জটিলতা এড়ানো যায়।
পিসি বা ল্যাপটপে অনেকক্ষণ ধরে নিয়মিত কাজ করলে চোখের যে ধরনের সমস্যা হয়, তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বা সিভিএস। কম্পিউটারের সামনে বেশি সময় থাকা, মোবাইলে অতিরিক্ত গেম খেলা, ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ করায় শিশু ও স্কুল পড়ুয়াদের চোখে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে চোখের পলক মিনিটে ১২ থেকে ১৬ বার পড়ে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে টানা কম্পিউটারে কাজ করার ফলে মিনিটে মাত্র ৬ থেকে ৮ বার পলক পড়ে। এর ফলে চোখ তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে পড়ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় কম্পিউটারে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের ৯০ শতাংশেরই এই সমস্যা হয়। কম্পিউটারে অনেকক্ষণ গেম খেললে বা কাজ করলে চোখের পেশি বিরতি না পাওয়ায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এতে চোখে খারাপ হয়। চোখ জ্বালা, ঝাপসা ভাব হয়।
অভিভাবকদের উচিত স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করানোর আগে একবার চক্ষু পরীক্ষা করানো। কম্পিউটারের দূরত্ব ঠিক করে নেওয়া দরকার।কোনও জিনিস যখন মন দিয়ে দেখি তখন চোখের পাতা বন্ধ করি না। এক দৃষ্টে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকাকে বলে স্টেয়ারিং। আমাদের চোখের ল্যাক্রিম্যাল গ্রন্থি এবং অন্যান্য গ্রন্থি থেকে নির্গত জল চোখের মণি ও সাদা অংশকে সবসময় ভিজিয়ে রাখে। ভিজে থাকার ফলে বাইরের উত্তাপে চোখ শুষ্ক হয় না। এই ভিজিয়ে রাখার কাজটা করতে সাহায্য করে চোখের পাতার নড়াচড়া। এক্ষেত্রে মিনিটে অন্তত ১০–১২ বার চোখের পলক পড়া জরুরি। এটা যদি কমে যায় তখনই চোখ শুষ্ক হবে। চোখের সাদা অংশ এবং কালো তারার (‌কর্নিয়ার)‌ ক্ষতি হয়। বেশিক্ষণ কাছে দেখলে চোখের পেশির ভারসাম্যও নষ্ট হয়। কম্পিউটার যে দূরত্বে রয়েছে সেই অনুযায়ী চোখের পাওয়ারের চশমা পরা উচিত।
কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের ফলে মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া ও ক্লান্তি বোধ করা, ঝাপসা দেখা বা মাঝেমধ্যে দুটি দেখা, ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথা ইত্যাদি ছাড়াও নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন—

রেটিনার ক্ষতি-
অন্ধকারে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, পিসি বা টিভি ব্যবহার করলে এর নীল আলো সরাসরি চোখের ওপর পড়তে থাকে। ফলে রেটিনার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলতে থাকলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে।

যাঁরা রাতের বেলায় বিছানায় জেগে জেগে অন্ধকারে সেলফোনের রঙিন আলোয় দীর্ঘ সময় কাটান, তাঁদের এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক হতে হবে।

মায়োপিয়া –
ইদানীংকার প্রবণতা হলো, শিশুরা অনেক সময় ধরে সেলফোন, ট্যাবলেট বা পিসিতে গেম খেলে বা কার্টুন দেখে সময় কাটায়। এভাবে সারাক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে তাদের চোখে কম দেখার প্রবণতা তৈরি হয়, যাকে বলে ‘ইনডিউস মায়োপিয়া।

ডাঃ মোঃ রাশেদুল করিম
এমবিবিএস,বিসিএস ( স্বাস্থ্য), এম এস (কোর্স,চক্ষু) পিজিটি (চক্ষু)
রেসিডেন্ট, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
এমও, মউহেক, কক্সবাজার।
চক্ষুরোগ চিকিৎসক ও সার্জন, ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতাল, কক্সবাজার।