মোহাম্মদ ফারুক:

চলতি শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে অস্বাভাবিকভাবে ইলিশ ধরা পড়েছে। ইলিশের মৌসুম নাহওয়ায় এতে জেলে ও ব্যবসায়ীরা তাজ্জব। তবে ইলিশের আকার ছোট হলেও খুশি জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তবে গবেষকরা বিষয়টিকে নিষেধাজ্ঞার সুফল হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে এই সুফল ভোগ করতে পারেনি কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। দায়সারাভাবে রাজস্ব আদায়ে দিনে লাখো টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ব্যাপক ইলিশের ঢল। ওই সময়ে ব্যবসায়ীরা ওইখানে হাঁটাচলা করার মত যায়গা পাচ্ছেনা। বাড়তি ইলিশের চাপে বেশ সরগরম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। মৎস্য অবতরন কেন্দ্রের মার্কেটিং সুত্রে জানা যায়,গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ শত ৩৪ টন ইলিশ ওই কেন্দ্র থেকে সাপ্লাই হয়েছে।

কিন্তু গত ১৫ দিনে ৬ শত ৩৪ টন ইলিশ মাছ সাপ্লাই হলেও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ টাকা।কিন্তু ব্যবসায়ীদের মতে কেজি প্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা করে তাঁেদর কাছ থেকে রাজস্ব নেয়। সেই হিসেবে ৬ শত ৩৪ টন মাছের রাজস্ব হয় হিসেবে ৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা।২ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকা রেকর্ডে ঘাটতি। এছাড়া গত ১৬ তারিখ ৭০ টন ইলিশ সাপ্লাই হয়।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দাদন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক নুরুল হুদা বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে প্রতিদিনিই শত শত মণ ইলিশ এই অবতরণ কেন্দ্র থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই হচ্ছে।দামও মোটামোাটি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন হতাশা নাই বলে জানান। তিনি বলেন, আগে আমাদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ১ টাকা করে ট্যাক্স নিতো। সম্প্রতি কেজি প্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা করে ট্যাক্স নেয়।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পুরানো পদ্ধতিতেই মাছের রাজস্ব নিয়ে থাকি। জুড়ি বা গাড়িতে আইডিয়া করে পরিমাপ করে থাকি। রাজস্ব ঘাটতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকে কত কথা বলবে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা যে কথা বলছে সে কথা সত্য নয়। সটিক ওজন করে রাজস্ব নিতে গেলে ব্যবসায়ীদের সাথে গন্ডগুল হয়। এরা আমাদের সাথে অসৎ আচরণ করে। পুরানো পদ্ধতিতেই আমরা রাজস্ব আদায় করে যাচ্ছি। রাজস্ব’র ঘাটতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঠিক ওজন দিয়ে রাজস্ব আদায় করতে পারলে এই ১৫ দিনে ১২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা যেতো। আর বাকি কিছুই তিনি জানেন না।

অপরদিকে বোট মালিক আমান মাঝি জানান, এই সময়ে তাঁর দেখা অস¦াভাবিক ইলিশ পড়েছে, তবে দাম নি¤œমূখী। তিনি আরো বলেন, সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভবিষ্যতে আর সাগরে মাছের কমতি দেখা যাবেনা।

এবারের শীত মৌসুমে ইলিশ বেশি পাওয়ার পক্ষে বেশ কয়েকটি যুক্তি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মর্কতা এহসানুল করিম বলেন, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। গত বছরে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, আগে একটি মা ইলিশ বাচঁতো এক থেকে দেড় বছর তারপর ধরা পড়ে যেতো। সম্প্রতি দুই থেকে আড়াই বছর বাঁেচ।ইলিশ আকারে ছোট হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাই, আগষ্ট, সেপ্টেম্বর এই তিন মাস ইলিশের ডিম দেওয়ার মৌসুম অক্টোবরে ডিম দিয়ে নেমে যায়। ওই ডিমের মাছগুলি এখন নদী থেকে নেমে যাচ্ছে। এগুলো এখন ধরা পড়ছে তাই আকারে ছোট। তবে এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে অনেক বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।