হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর
‘সভ্যতা’ ও ‘সমাজ’ একে অপরের পরিপূরক। ‘চরিত্র’ সভ্যতার প্রাণ আর ‘যুবকেরা’ সমাজের প্রাণ। এই বাস্তবতা উপলবিদ্ধ করেই আজ সমাজ-সভ্যতার শত্রুরা অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে চরিত্র বিনাশী সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে সমাজ ও সভ্যতা বিপন্নতার মুখোমুখি। এমনই চরিত্র বিধ্বংসী অপসংস্কৃতির এক ভয়াল ছোবল ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’(১৪ফেব্রুয়ারী) তথা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিবসটির সাথে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের কোন প্রকার সামঞ্জস্যতা নেই। ভালোবাসা দিবসের নামে বহুবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত করে যুব সমাজের চরিত্র হননের অসৎ উদ্দেশ্য পশ্চিমারা এ দিবসটির প্রবর্তন করে। কিন্তু আজ ইসলামী সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উপেক্ষা করে অধিক গুরুত্বের সাথে আবেগ ও উৎসাহপ্রবণ হয়ে ভিনদেশী-বিজাতীয়দের অনুকরণে এ দেশের কতিপয় দিকভ্রান্ত মুসলিম তরুণ-তরুণীরাও দিবসটি পালনে নির্বিঘ্নে মেতে উঠে। যা রক্তে পাওয়া স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বকীয় সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার উপর এক ভয়াল আগ্রাসন।

সচেতন যুবসমাজ এ দিবসটির প্রকৃত ইতিহাস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখলেও কোন দিন এত আগ্রহচিত্তে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের নামে চরিত্র বিধবংসী নানা অপকর্মে লিপ্ত হতো বলে আমার মনে হয়না। তাই অপসংস্কৃতির ভয়াল থাবায় নিমজ্জিত যুবসমাজসহ সর্বমহলের জ্ঞাতার্থে দিবসটির সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত, উদ্দেশ্য ও অসারতা তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করি।

রোমান খৃষ্টান পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স এর নামানুসারে এ দিবসটির নামকরণ করা হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট। ৪৯৬ খৃষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারী থেকে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালিত হয়ে আসছে। রোমান খৃষ্টান পাদ্রী সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ছিলেন মূলত একজন চিকিৎসক। খৃষ্টধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোমান ক্লোডিয়াসের আদেশে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স এর মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান কারা হয়। কারাবন্দী থাকাবস্থায় এক অন্ধ মেয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় এবং তার চিকিৎসা সেবার ফলে মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। মৃত্যৃদণ্ড কার্যকরের দিন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি পত্র লিখে যান। যাতে লেখা হয়েছিল ‘‘লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন’স’’। সে দিনটিকে পশ্চিমারা ভ্যালেন্টাইন’স ডে তথা ভালোবাসা দিবস হিসেবে নামকরণ করে এবং সেদিন থেকেই প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে ভালোবাসার বাণী পাঠানোর প্রচলন শুরু হয়।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে এর এই ইতিহাসের সাথে আমাদের ধর্মীয় ও জাতীয় সংস্কৃতির দুরতম সম্পর্কও খুঁজে পাওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও আজ কতিপয় তরুণ-তরুণী তারুণ্যের জোয়ারে উৎসবটি পালনের নামে নির্বিঘ্নেই গা ভাসিয়ে দিচ্ছে অশ্লীলতার প্রবল স্রোতে। বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম প্রধান দেশে কখনও কাম্য নয়।

এ ধরনের বিজাতীয় সংস্কৃতি লালনের কঠিন পরিণাম সম্পর্কে সতর্কতা উচ্চারণ করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ স. ইরশাদ করেন ‘যারা যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখবে সে সম্প্রদায়ের সাথেই তাদের হাশর হবে’ (আল-হাদীস)। ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও বর্তমানে যুবসমাজের একটি অংশ বিজাতীয় নির্লজ্জ এই নগ্ন সংস্কৃতি যে মহাসমারোহে পালন করছে তাতে করে নিজেদের স্বকীয়তা ও ধর্মীয় ঐতিহ্য চরম ভাবে ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। যুব সমাজের বিশাল অংশ এ ধরণের নানমুখী অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতার জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়ে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিমজ্জমান। ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা, আকাশ সংস্কৃতির বিরূপ প্রভাব, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার, অসৎসঙ্গ, ভিনদেশী-বিজাতীয় অপসংস্কৃতির চর্চা ইত্যাদি কারণেই যুবসমাজ আজ অপসংস্কৃতির এমন বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত। ফলে খুন-ধর্ষণ, ছিনতাই, অপহরণ, মাদকাসক্তি, ধর্মদ্রোহীতাসহ নানা ধরণের অপরাধ উদ্বেগজনকহারে বেড়ে চলেছে। এ করুণ অবস্থা থেকে উত্তরণে যুব সমাজকে নৈতিক অবক্ষয়ের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে হবে এবং তা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আদর্শের আলোকে যুব সমাজের চরিত্র গঠন করা। সেই সাথে অপসংস্কৃতির উৎস সমূহ বন্ধ করে দিয়ে সুস্থ সংস্কৃতির উজ্জীবনে সরকারীভাবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তথাপি এবিষয়ে অভিভাবক ও সমাজপতিসহ সচেতন নাগরিকদেরও সুউদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবী বলে অভিমত সুশীল মহলের।

লেখক
খতীব, শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট জামে মসজিদ,পৌরসভা, কক্সবাজার।