সোয়েব সাঈদ, রামু :

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিলেও এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি রামুর মনির আহমদ। তিনি রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম কাউয়ারখোপের মৃত হাজ¦ী গোলাম শরীফের ছেলে। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭০ বছর। বয়সের সাথে তিনি মানসিকভাবেও অসুস্থ। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি চান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু। ইতিপূর্বে তিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়ে আবেদনও করেছিলেন।

মনির আহমদ জানান, তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসনে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই হলে তিনি অবগত না হওয়ায় তাঁর নাম জামুকা’র তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়নি। তাঁর অনেক সহযোদ্ধা মুক্তি লাল বার্তায় অন্তভূক্ত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তিনি রামু থানায় যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র (এসএলআর, রাইফেল ও কার্টিজ) সমর্পন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ০১ নং সেক্টরের সুবেদার নুর আহমদের নেতৃত্বে তিনি রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গহীন জনপদ নাইক্ষ্যংছড়ি জুমখোলা, সালামীপাড়া কাঠের ব্রীজ, জোয়ারিয়ানালা সহ বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

তিনি আরো জানান, ইতিপূর্বে ১৯৭১ সালে ১১৭ নং গ্রুপে স্থানীয় কমান্ডার সুবেদার নুর আহমদ ইস্ট বেঙ্গল রেজিম্যান্ট এর আওতায় মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেয়া কক্সবাজার, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করা হয়। ওই তালিকায় ১৭ নং ক্রমিকে তাঁর (মনির আহমদ) নাম রয়েছে।

২০০০ সালের মুক্তিযোদ্ধা মনির আহমদ সহ রামুর ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি লিখিত আবেদন জানান। ওই আবেদনে ‘সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে সুপারিশ করছি” মর্মে লিখিত সুপারিশ করেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কক্সবাজার জেলার সাবেক সভাপতি মরহুম এ,কে,এম মোজাম্মেল হক।

জেলার বরেন্য রাজনীতিক সাবেক সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ২০০১ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় বাদপড়া রামুর ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি আবেদন পত্র প্রেরণ করেন। ওই আবেদনে ১৩ নং ক্রমিকে মনির আহমদের নাম রয়েছে।

এ আবেদনে মুক্তিযুুদ্ধের সংগঠক মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মনির আহমদ সহ উল্লেখিত ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা চোরাগোপ্তা হামলা করে রাজাকার-আলবদর ও পাক হানাদারদের নিধনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েও তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়া দূঃখজনক। গ্রামের সরল, গরীব ও অশিক্ষিত মানুষ হওয়ায় তাঁরা জেনারেল ওসমানীর মুক্তিযুদ্ধের সনদপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তুভূক্ত করতে হবে। ওই আবেদনে মনির আহমদসহ ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি অঞ্চলের কমান্ডার (অবঃ) সুবেদার নুর আহমদ।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মনির আহমদ দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন শাখার উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা তিনি এখনো সব বলতে পারেন। শেষ বয়সে হলেও তিনি চান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, মনির আহমদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি অনেকে তাঁকে স্বীকৃতি দিলেও রহস্যজনক কারনে তিনি তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি। এটা দূঃখজনক। তাই আগামীতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইকালে তাকে অর্ন্তভূক্ত করার জন্য সহযোগিতা করা হবে।

রামু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক জানিয়েছেন, মনির আহমদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ১নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। অনেক পাকহানাদার ও রাজাকারকে আটক করে তার কাছে জিম্মায় রাখা হয়েছিলো। মনির আহমদের কাছে থেকে চাবি নিয়েই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সুবেদারের অবহেলার কারনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হননি।

কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, মনির আহমদ সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এটা এলাকার সবার জানে। তার সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়া অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হলেও রহস্যজনক কারনে মনির আহমদ বাদ পড়েছেন। তাই সরকারের উচিত জীবনের শেষ লগ্নে হলেও তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।

মনির আহমদের ছেলে আবদু শুক্কুর জানান, ছোটবেলা থেকে শুনে আসছেন তাঁর বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের বাবা সাহসী ভূমিকার কথাও এলাকার সবার মুখে মুখে। তবে দূর্ভাগ্য বাবা সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু পাননি। যে কারনে বাবার সহাসী অর্জন আর ত্যাগের বিষয়টি তাদের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। তাঁর বাবা এখন বয়সের কারনে শারীরিকভাবে সুস্থ নন। এরপরও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। ছেলে হিসেবে তিনিও চান দেশমাতৃকার জন্য বাবার অসীম ত্যাগের স্বীকৃতি।