নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের কলাতলীর হোটেল মোটেল জোনে নালা দখল করে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে গণপূর্ত বিভাগ। নালার মাঝখানে নলকূপ স্থাপন করায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। একারণে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলাতলীর সৈকতপাড়া এলাকার ব্লক-এ এর ২নং সড়কের দক্ষিণ অংশে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। ওই ভবনে পানি সরবরাহের জন্য নালা দখল করে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। পানি চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ায় নালার পানি রাস্তায় উঠে যাচ্ছে। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পর্যটকরা। পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকেরাও দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চলাচলে দুর্ভোগের কারণে হোটেলগুলোতে পর্যটকেরা অবস্থান করতে চাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছে হোটেল মালিকেরা।
ওই সড়কে হোটেল এলেগ্রু সুইটস, মাসকাট প্লাজা সহ বেশ কয়েকটি ভিআইপি হোটেল আছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর অফিসও ওই সড়কেই অবস্থিত। পর্যটকের পাশাপাশি পিআইবি’র পুলিশ সদস্যরাও চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
এলেগ্রু সুইটস হোটেলের প্রায় কক্ষেই মাসিক ভাড়া থাকেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় কর্মরত বিদেশি নাগরিকেরা। এলেগ্রু’র সামনের একটি ভবনে এনজিও সংস্থা ‘টাই’ এর অফিস। সেখানেও বিদেশি নাগরিকেরা কর্মরত। তাদেরকে যাতায়াত করতে হয় জলাবদ্ধ সড়ক দিয়ে। সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তারা চরম অতিষ্ঠ।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, ওই সড়কের উত্তর পাশে এবং দক্ষিণপাশে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। উত্তরপাশের ভবনে পানি সরবরাহের জন্য ভবনের ভেতরে গভীর নলকূপ স্থাপন করলেও দক্ষিণপাশের ভবনে নলকূপ বসানো হয়েছে নালার মধ্যে। পৌর কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় গণপূর্ত বিভাগ নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা না করে নালার মাঝখানে নলকূপটি স্থাপন করেছে। হোটেল মালিকেরা বার বার আপত্তি জানালেও কর্ণপাত করেনি গণপূর্ত।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সড়কের দক্ষিণপাশে নির্মিত ভবনের সামনের নালায় প্রায় তিন মাস আগে দুটি নলকূপ স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি দুটি নলকূপ স্থাপন করায় নালার পানি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নালায় চলাচল করতে না পেরে পানি পাশের রাস্তায় উঠে যাচ্ছে। সার্বক্ষণিক পানি জমে থাকায় পর্যটকেরা যাতায়াতে কষ্টে আছে। নালার ময়লা পানিতে পর্যটনের পরিবেশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু নলকূপ স্থাপন করে ক্ষান্ত হয়নি গণপূর্ত। ভবনের ময়লা-আবজর্নাও নালায় ফেলা হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুম না হলেও রাস্তায় পানি জমে আছে। নালার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে পর্যটকেরা নাক চেপে যাতায়াত করছেন। হোটেলের সামনে পানি জমে থাকায় বিরক্ত পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা।
পর্যটকেরা জানান, এটি একটি পর্যটন শহর। এই শহরে নালার ওপর কিভাবে নলকূপ বসায়? নালার পানির কারণে সড়কে চলাচল করতে না পারা বড় দুঃখজনক। পৌরসভার দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তারা।
স্থানীয় সচেতন লোকজন জানান, জবাবদিহিতা না থাকায় সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছামত অবৈধভাবে নালা দখল করে নলকূপ বসিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এই ধরণের আচরণ কোনভাবেই মেনে নেওয়ার মত নয়।
হোটেল এলেগ্রু সুইটস এর নির্বাহী পরিচালক মং ম্যউ ন্যাই জানান, “আমাদের হোটেলে প্রায় সবাই বিদেশি নাগরিকরা থাকেন। গত তিন মাস থেকে তারা ভীষণ দুর্ভোগে আছে। কোন পর্যটক হোটেলে থাকতে চাচ্ছে না। একটি নালার কারণে সব হোটেল ব্যবসায়ী চরম বিপাকে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান দরকার।”
এবিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজারের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এস এম এ জাহিদ অপু বলেন, “নালার জায়গাটি গণপূর্তের। আমাদের জমির উপর পৌরসভা নালা করেছে। নালা হলেও জমি আমাদের হওয়ায় সেখানে নলকূপ বসানো হয়েছে। এখন নালার পানি কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে সেটি আমাদের বিষয় নয়।”
গণপূর্তের একজন দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তার এমন দায়সারা আচরণে হতাশ সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, নালাটি দীর্ঘদিনের। হঠাৎ গণপূর্ত কেন এমন আচরণ করছে তা বুঝে আসছে না তাদের।