মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

৬ ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার, বিকেল বেলা। কলাতলী-বাসটার্মিনাল বাইপাস সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে নতুন কারাগারের বিপরীতে কক্সবাজার পুলিশ লাইন্সের ঘাস কার্পেটে ভরা বিশাল মাঠ। সেখানেই ছিলো কক্সবাজার জেলা পুলিশের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান।

আয়োজনটা বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান নাম হলেও সেখানে ফুটে উঠেছে গত প্রায় একশ’ বছরের বাংলাদেশ। চিত্রায়িত করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যূত্থান, ঐতিহাসিক বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা, স্বাধিকার আন্দোলন, মুজিব জন্ম শতবর্ষের কর্মসূচী, দেশপ্রেমের অপরূপ দৃশ্যাবলী সহ আরো অনেক রকমারী আয়োজন। যেন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশটাই কক্সবাজার পুলিশ লাইন্স মাঠ। মাঠের সবদিকেই এদেশের মানুষের বীরত্বগাঁথা সব সাফল্যের নানন্দিকতার ছাপ, আর দেশপ্রেমে উদ্বেলিত হওয়ার মতো সব বাহারী অসাধারণ আয়োজন। ক্রীড়া, বিনোদন আর দেশপ্রেমে ভরা ছিলো মনোমুগ্ধকর এই অনন্য অনুষ্ঠানমালা। কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানটি ছিলো কক্সবাজারের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী, সাংবাদিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান, আলোকিত মানুষ, বুদ্ধিজীবী জেলার ভিআইপিদের এক অঘোষিত মিলনমেলা। এ মিলনমেলায় সবার মুখে মুখে ছিলো-এ বিশাল ও নান্দনিক আয়োজনে পেশাদার পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দেশপ্রেমের প্রতি আন্তরিকতার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। অনুষ্ঠান নিয়ে উপস্থিত সুধীজনের মন্তব্য ছিলো- এভাবে সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের রক্তঝরা সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরা হলে, এদেশের মানুষের মনে দেশপ্রেমের বীজ ক্রমান্বয়ে আরো গভীর থেকে গভীরে প্রোথিত হবে। নব প্রজন্মের জানতে সহজ হবে তাদের পূর্বসূরীদের সাফল্যগাঁথা ও সমৃদ্ধ সব ইতিহাস। অপরাধ দমনের পাশাপাশি পুলিশ যে জনবান্ধব ও ক্রীড়ামুখী হয়ে উঠছে, মানবিক ও বিনোদনপ্রেমি হচ্ছে-তার একটা উজ্জ্বল প্রমাণ হলো-বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারীর এই বিশাল, ব্যতিক্রমী ও হৃদয়গ্রাহী সব আয়োজন।

আর এই বর্ণাঢ্য আয়োজন উদ্বোধনের প্রাণ পূরুষ ছিলেন এদেশের সফল আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। যিনি পুরো দেশের পুলিশ বাহিনীর অসংখ্য বিষয়ে শত সহস্র ব্যস্ততার মাঝেও কক্সবাজারের জেলা পুলিশকে তাঁর মূল্যবান সময় দিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেেন। ঋনী করেছেন, দরিয়াপাড়ের মানুষকে।

এই ব্যতিক্রমী আয়োজন উদ্বোধন করতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌকস, মেধাবী ও দূরদর্শী পুলিশ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) তাঁর প্রদত্ত মূল্যবান দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্যে বলেন, ‘আসলে পুলিশকে সত্যিকার অর্থেই জনতারই হতে হবে, এর কোন বিকল্প নাই। জনগণ যেন আস্থা পায়, বিশ্বাস পায় এবং পুলিশের কাছে দাঁড়াতে পারে।’ তাই বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সব কর্মকান্ড আমজনতাকে ঘিরেই নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের প্রতি আগে মানুষের যে একটা অনীহা ছিল, ভীতি ছিলো, নেতিবাচক মনোভাব ছিলো, সেটা কিন্তু এখন আর খুব একটা নেই। বরং পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। আসলে পুলিশের এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এটি পুলিশের জন্য বিশেষ বছর। ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন জনবান্ধব কর্মসূচী। তারমধ্যে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু হওয়ায় মানুষের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস এসেছে। কোথাও কেউ কোনো অন্যায়, অপরাধ দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করছে এবং পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ ৯৯৯ চালু হওয়ার পর ২ কোটিরও বেশী মানুষ সেবা চেয়েছে। তারমধ্যে ৮/৯ লক্ষ মানুষকে যথার্থ পুলিশী সেবা দেয়া হয়েছে। এতে বড় বড় অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগে প্রপার পদক্ষেপ নিতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশকে জনতার আরও কাছে নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিস্ময়কর প্রতিভাসম্পন্ন ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)।

আয়োজনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম বার (পিপিএম) বলেছেন, সারা বছর দেশ ও মানুষের সেবায় ব্যস্ত থাকে পুলিশ। শুধুমাত্র একটি দিন তাদের ক্রীড়া চর্চার জন্য রাখা হয়। ক্রীড়া চর্চায় বিকশিত হয় মেধা, প্রতিভা ও মননের, সমন্বয় হয় দেহ ও বিনোদনের। এতে ভাতৃত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি দক্ষতার পরিচয় ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি যত শক্তিশালী ও মজবুত হবে, তত বেশি আমরা আমাদের সব প্রতিষ্ঠানকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আজ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা আমাদের ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে, যাতে উন্নয়নশীল দেশের স্থায়ী স্বীকৃতি অর্জন করতে পারি ইনশাআল্লাহ।

মাতৃভূমিকে ক্রীড়াক্ষেত্রেও ফুটিয়ে তোলার এই অসাধারণ, ম্যাজিকময় ও নান্দনিক আয়োজনের যিনি রূপকার ও পরিকল্পক, তিনি হলেন, এ বছরের জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে সারাদেশের একমাত্র এসপি হিসাবে বিপিএম (সেবা) পদক পাওয়া-কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার)। এ বিশাল ও উপভোগ্য আয়োজনে সভাপতিত্ব করে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) অনুষ্ঠানের সৌন্দর্যকে আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানকে শতভাগ সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে তাঁর সাথে আরো যাঁরা মেধা, শ্রম, সময়, সমন্বয় ও পরিকল্পনা দিয়ে নিরন্তর সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা হলেন-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ান আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইন-সার্ভিস) মোঃ মশিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আদিবুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজি মতিউল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল চন্দ্র বণিক, সহকারী পুলিশ সুপার (মহেশখালী সার্কেল) বাবুল চন্দ্র দাশ গুপ্ত সহ জেলা পুলিশের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ।

এ বছরের জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে আইজিপি ব্যাজ (IGP’s Exemplary Good Services Badge) প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত সন্তান মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের নান্দনিক সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) এর সহধর্মিনী, পুলিশ নারী কল্যান (পুনাক) সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভানেত্রী বেগম হাবিবা জাবেদ, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এ্যথিন রাখাইন, পুলিশ সুপার (ট্যুরিস্ট পুলিশ) জিল্লুর রহমান, এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) এর সহধর্মিণী ও জেলা পুনাক এর সভানেত্রী জেনিফার মাসুদ মুন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সৈকত সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, জেলার সকল থানার অফিসার ইনচার্জবৃন্দ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক উৎসব ছিল বেশ জমজমাট ও আনন্দদায়ক। আয়োজনকে ঘিরে পুরো পুলিশ লাইন্সকে সাজানো হয় অন্যরকম ভাবে। দিনের চেয়েও রাতের পুলিশ লাইন্স ছিল আরো দৃষ্টিনন্দন, চোখ ধাঁধানো, আলোকোজ্জ্বল। যে দিকে থাকায় মন জুড়িয়ে যায়। এই হৃদয়ছোঁয়া, নান্দনিক অনুষ্ঠানের সফল আয়োজক-কক্সবাজার জেলা পুলিশকে অজস্র ধন্যবাদ।