হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

চলমান এসএসসি পরিক্ষায় টেকনাফে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র নিয়ে পরিক্ষা নেয়ার অভিযোগে কেন্দ্র সচিব, হলসুপার ও কক্ষ পরিদর্শককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এরা হলেন কেন্দ্র সচিব টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নুরুল আবসার, হলসুপার উক্ত স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শব্বির আহমদ এবং কক্ষ পরিদর্শক উক্ত স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আজিজুল হক। এই আদেশ ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে কার্যকর করা হয়। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার পাশাপাশি ২৪ ঘন্টার মধ্যেই দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণ দর্শাতে শো-কজ করা হয়েছে।

৬ ফেব্রুয়ারী বিকালে উক্ত তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দময় ভৌমিক জানান, বিষয়টি গোচরে আসার পর টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পরিক্ষা নিয়ন্ত্রককে অবহিত করা হয়েছে। তাঁদের নির্দেশনা মতে টেকনাফ এজাহার সরকারী গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রের (এসএসসি পরিক্ষা কেন্দ্র নং-২) কেন্দ্র সচিব টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নুরুল আবসার, হলসুপার উক্ত স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শব্বির আহমদ এবং কক্ষ পরিদর্শক উক্ত স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আজিজুল হককে সাসপেন্ড করা হয়। তদস্থলে নয়াবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রুপন কান্তি বড়–য়াকে কেন্দ্র সচিব, সাবরাং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মফিজ-উদ-দৌল্লাহকে হল সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভুল প্রশ্ন নিয়ে পরিক্ষা নেয়া পরিক্ষার্থীদের রোল নম্বর পরিক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে জরুরী ভিত্তিতে পাঠানো হয়েছে।

নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিব নয়াবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রুপন কান্তি বড়–য়া এবং হল সুপার সাবরাং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মফিজ-উদ-দৌল্লাহ জানান, এসএসসি পরিক্ষার টেকনাফ এজাহার সরকারী গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রে (কেন্দ্র নং-২) ১৪ নম্বর কক্ষে পরিক্ষার প্রথম দিন ৩ ফেব্রুয়ারী নিয়মিত পরিক্ষার্থী থেকে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র নিয়ে পরিক্ষা নেয়া হয়েছে। উক্ত কক্ষে মোট ৩০ জন পরিক্ষার্থী ছিল। তম্মধ্যে সাবরাং হাইস্কুলের ১৬ জন এবং নয়াবাজার হাইস্কুলের ১৪ জন পরিক্ষার্থী ছিল। সকলেই ছিল নিয়মিত পরিক্ষার্থী। কিন্ত ৩০ জন পরিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জন ২০২০ সালের এবং ২০ জন পরিক্ষার্থী ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্রে পরিক্ষা দেয়। এ ২০ জনের মধ্যে সাবরাং হাইস্কুলের ১৬ জন এবং নয়াবাজার হাইস্কুলের ৪ জন পরিক্ষার্থী। রোল নম্বরগুলো হচ্ছে ৩২৮৮৩২, ৩২৮৮৩৩, ৩২৮৮৩৪, ৩২৮৮৩৫, ৩২৮৮৩৬, ৩২৮৮৩৯, ৩২৮৮৪০, ৩২৮৮৪১, ৩২৮৮৪২, ৩২৮৮৪৩, ৩২৮৯৩৯, ৩২৮৯৪০, ৩২৮৯৪১, ৩২৮৯৪২, ৩২৮৯৪৩, ৩২৮৯৪৬,৩২৮৯৪৭, ৩২৮৯৪৮, ৩২৮৯৪৯, ৩২৮৯৫০। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানাজানি হয়নি। পরে পরিক্ষার্থীদের পরষ্পর আলোচনায় প্রকাশ হয়ে যায়।

জানা যায়, ৩ ফেব্রুয়ারী পরিক্ষার প্রথম দিন এ ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র নিয়ে পরিক্ষা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কোমলমতি পরিক্ষার্থীরা ভেঙ্গে পড়ে। তবে মারাতœক ব্যাপার হচ্ছে বিষয়টি ঘটে যাওয়ার পর তা সুরাহা করার পরিবর্তে গোপন করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় সাবরাং এলাকার এসএসসি পরিক্ষার্থীর ৩জন অভিভাবক টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করেন। ইউএনও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন।

টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নুরুল আবসার বলেন, ‘এটি সম্পুর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভুল। বিষয়টি গোচরে আসার সাথে সাথে কেউ কিছু বলার আগেই করণীয় নিয়ে প্রস্ততি নিয়েছিলাম। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও মহোদয়কে জানানো হয়নি’।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, ‘উক্ত কেন্দ্রের ৩জনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং শো-কজ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে’।

এদিকে পরিক্ষার্থীরা জানান, ৬ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্রে (এসএসসি পরিক্ষা কেন্দ্র নং-১) পরিক্ষা চলাকালে দুপুর ১২টার পর উক্ত স্কুলের অফিস সহকারী জসিম পরিক্ষা কেন্দ্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত এন্ড্রয়েট মোবাইল সেট নিয়ে ১নং কক্ষের জানালা দিয়ে কয়েকজন পরিক্ষার্থীকে নকলে সহযোগিতা করেছেন। বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাইফকে অবহিত করা হয়েছে। তবে উক্ত কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব, হল সুপার ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।