সিবিএন ডেস্ক:
বিজিবির ব্রিফিংগত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সকাল পর্যন্ত দেশের সীমান্ত এলাকায় ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা হয়েছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরে বাহিনীর পরিচালক (পরিকল্পনা) লে. ক. সৈয়দ আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক সীমান্তে হত্যা হয়েছেন।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে হত্যাকাণ্ডে যেটা সাধারণভাবে বোঝা যায় যে, সীমান্তের সন্নিকটে, তা কিন্তু না। অনেক সময় দেখা যায় ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটারের ভেতরেও হয়। হয়তো দেখা যায় কোন নিরীহ মানুষ ভারতের সীমান্তে ঢুকে যাচ্ছে, হয়তো গরু আনার জন্য গেছেন, তাই অনেক সময় দেখা যায় আমাদের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যখন আমাদের ওপাশ থেকে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়, তখনই আমরা জানতে পারি। এই সংখ্যাটা বেশি ঘটে যারা গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের ক্ষেত্রেই। আমরা এটা দেখছি।’

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসফ ও বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মধ্যে এ বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। মহাপরিচালক পর্যায়ে যে সম্মেলন হয়েছে, সেখানেও সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আবারও আলাপ আলোচনা করছি।

তিনি বলেন, ‘সীমান্তে চোরাকারবারি অনেকে চিহ্নিত, অনেকে চিহ্নিত না। তবে সীমান্তে যারাই এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন, তাদের আমরা নজরদারিতে রেখেছি। তারা যখনই কোনোকিছু পাচারের চেষ্টা করছে, তখনই আমরা তাদের গ্রেফতার করছি। গণমাধ্যমে তা জানানোও হচ্ছে।’

পরিচালক বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা নিয়মিত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়াও আমরা আমাদের সীমান্ত এলাকার মানুষদের সচেতন করছি, যাতে ভুল করে বা অন্য কোনও কারণে তারা যেন সীমান্ত এলাকা অতিক্রম না করেন। এছাড়াও আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় যেসব স্পর্শকাতর জায়গা রয়েছে, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে আমরা জনবল বৃদ্ধি করেছি। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক উপায়েও কাজ চলছে।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত জানুয়ারিতে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্য স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ৯৭ কোটি ১৮ লাখ তিন হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। এছাড়াও সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৭২ জন চোরাচালানিকে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৩৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ২ জন ভারতীয় নাগরিককে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বিজিবির মাদকবিরোধী অভিযানে জব্দকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে সাত লাখ ২৩ হাজার ৬৮৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪০ হাজার ৭৪২ বোতল ফেনসিডিল, ১১ হাজার ৭৯২ বোতল বিদেশি মদ, ২৯৮ লিটার বাংলা মদ, ৫৪৯ ক্যান বিয়ার, ৭৬২ কেজি গাঁজা, ৬৬৫ গ্রাম হেরোইন, চার হাজার চারটি ইনজেকশন এবং দুই হাজার ৪৩১টি সেনেগ্রা ট্যাবলেট।

জব্দকৃত অন্যান্য চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১৪ কেজি ৪৮২ গ্রাম সোনা, পাঁচ হাজার ৮২৮টি ইমিটেশন গহনা, ৩৩ হাজার কসমেটিক সামগ্রী, ১৫০০টি শাড়ি, ২৭ হাজার শার্ট ও থ্রিপিস, কাঠ, চা পাতা, পাথরের মূর্তি, ২১টি ট্রাক, ছয়টি পিকিআপ, একটি প্রাইভেটকার, ১১টি অটোরিকশা। এছাড়াও দুটি পিস্তল, চারটি বন্দুক, দুটি ম্যাগজিন, ১০ রাউন্ড গুলি এবং ৫৪টি মোটরসাইকেল।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক আশিকুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাস বিষয়ে সীমান্তে কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে বিজিবি অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।