হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গৌরবময় ও আলোকিত একটি নাম মাওলানা নুরুল হক আরমান রহ। দেখতে দেখতে এই কীর্তিমান রাজনীতিবিদের ইন্তেকালের ১৮ টি বছর পূর্ণ হয়ে গেল। ২০০২ সালের (৫ ফেব্রুয়ারি ) তাহাজ্জুদের সময় ৫৭ বছর বয়সে এই মনীষী ইন্তেকাল করেন।

মাওলানা নুরুল হক আরমান রহ. ১৯৪৫ ইংরেজীতে কক্সবাজার জেলার খুরস্কুল ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি মরহুম আবদুল হালিম ও মরহুমা দিলদার বেগমের মেজ পুত্র। ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন ও জনগণের মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রসেনানী হিসেবে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পরিমণ্ডলে তাঁর অসমান্য অবদান ও কুরবানীর নজির রয়েছে।

ছাত্রজীবন:
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী মাওলানা নুরুল হক আরমান রহ. ছাত্রজীবনে প্রথমে কক্সবাজারের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম চাকমারকুলে কিছুকাল অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে উপ-মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাকেন্দ্র জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটাহাজারীতে সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা অর্জন করেন। সেখানে তিনি তাফসীর, হাদিস, আরবী ব্যাকরণ ও তর্কশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। তিনি কওমী মাদ্রাসা বোর্ড থেকে দাওরায়ে হাদিস ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে হাদিস বিভাগে কামিল ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর সুযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে জামিয়া ইসলামিয়া হাটহাজারীর প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি সাহেব (দা.বা.), আল্লামা হামেদ সাহেব রহ., শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল কাইয়ুম রহ., শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল আজীজ সাহেব রহ., চাকমারকুল মাদ্রসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আখতার কামাল রহ., মরহুম পরিচালক মাওলানা সুলাইমান রহ. ও মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ শফি রহ. অন্যতম।

শিক্ষকতা ও শিক্ষার প্রসার:
বহুমূখী প্রতিভাসম্পন্ন এই আলেমেদ্বীন কক্সবাজার হাশেমিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় বহুকাল যাবৎ দ্বীনি শিক্ষার মহৎ খেদমত আঞ্জাম দেন। কওমী ঘরনার আলেম হয়েও তিনি শিক্ষা বিস্তারের নিমিত্তে আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে বড় মনের পরিচয় দেন। এছাড়াও তিনি দ্বীনি শিক্ষার প্রচার-প্রসারের লক্ষে নিজ এলাকায় মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা নামে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আমৃত্যু তিনি এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনীতি:
ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছিলেন কুরআন-সুন্নাহ্’র আলোকে কুসংস্কারমুক্ত সুন্দর সমাজ গঠনে নিবেদিতপ্রাণ। নব্য জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছাত্রসমাজকে ইসলামী আদর্শের অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে উপ-মহাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়েকেরামের তত্ত্বাবধানে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামী ছাত্রসমাজ’এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়কের দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পিত হলে তিনি হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ সংগঠনকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষে নজিরবিহীন ঝুঁকি ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ছাত্রজীবন শেষে উপ-মহাদেশে ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃৎ আল্লামা আতহার আলী রহ., খতীবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ., আল্লামা সৈয়দ মুছলেহ্ উদ্দিন রহ. এর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি ঐতিহ্যবাহী নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগদান করেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে শাণিত করার লক্ষ্যে নেজামে ইসলাম পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য তাঁর সার্বক্ষণিক প্রয়াস ছিল প্রশংসনীয়। তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, মহাসচিব এবং ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কৃতিত্বের নজীর পেশ করেন। সর্বস্তরে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের প্রতিরোধ এবং দূর্নীতি ও দুঃশাসনসহ যাবতীয় অপকর্মের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা জনতার মিছিলে বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেন।রাজধানীর মুক্তাঙ্গন, পল্টন ময়দান, বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রাম ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান ও কক্সবাজার পাবলিক হল ময়দানে তার জ্বালাময়ী ভাষণ জনতার হৃদয়কে দারুণভাবে আকর্ষণ করত। সৌদি আরব হতে মার্কিন এবং কুয়েত থেকে ইরাকী সৈন্য প্রত্যাহারের দাবীতে ১৯৯০ ইংরেজী সনে ঢাকায় মার্কিন দুতাবাসের সামনে আয়োজিত নেজামে ইসলাম পার্টির এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি ১৮ জন নেতা-কর্মীসহ গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেছিলেন ।

তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলামী নেজাম প্রতিষ্ঠার মধ্যেই ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। তাই চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে বিলাসী জীবন যাপনের পরিবর্তে তিনি ইসলামী নেজাম প্রতিষ্ঠার কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও দৈন্যতা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি দ্বীনি ময়দান থেকে এক মূহুর্তের জন্যও বিচ্যুত হননি। পৈত্রিক সহায় সম্পত্তি পর্যন্ত বিক্রি করে তিনি ইসলামী আন্দোলন ও জনহিতকর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে বেড়াতেন।ফলে অনেক সময় তিনি বাড়ি ঘরের খবরও নিতে পারতেন না। এভাবে মরহুম মাওলানা আরমান সাহেব ইসলাম ও জাতির কল্যাণে ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করে গেছেন। তাঁর এই বিরল ত্যাগ ইতিহাসের পাতায় চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও সহযাত্রীদের মধ্যে আল্লামা সৈয়দ আব্দুল মালেক হালিম, আল্লামা সরওয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা হাফেজ অছিয়র রহমান রহ. ,মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ রহ. ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসেন, মাওলানা হাফেজ ছালামতুল্লাহ, মাষ্টার মুহাম্মদ শফিকুল হক, মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, মাওলানা আব্দুল খালেক নিজামী, আ,হ.ম. নুরুল কবির হিলালীর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ইসলামী ছাত্রসমাজের সাবেক নেতা কর্মীদের মধ্যে তাঁর সান্নিধ্যধন্যদের মাঝে রয়েছেন অধ্যাপক রেজাউল করিম ছিদ্দিকী, মাওলানা ইয়াছিন হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী প্রমুখ।

বাতিল-অপসংস্কৃতির প্রতিরোধ:
জীবনের অন্তিমকালে অসুস্থ হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত মাওলানা নুরুল হক আরমান রহ. ছিলেন বাতিলের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন লড়াকু সৈনিক। তাঁর বিশ্বাস ছিল সংস্কৃতির নামে অশ্লীল নৃত্য, নগ্ন ছবি প্রদর্শন, গানের আসর ও নাটক ইত্যাদি অনৈতিক তৎপরতার কারণে জাতির ভবিষ্যত প্রজন্ম ছাত্র ও যুবসমাজ চারিত্রিক অধপতনের শিকার হয় এবং সমাজে সৃষ্টি হয় চরম নৈতিক অবক্ষয়। ফলে এব্যাপারে তিনি ছিলেন একেবারেই আপোষহীন। যে কোন বাতিল ও অপসংস্কৃতির প্রতিরোধে আলেম-ওলামা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সাথে নিয়ে তিনি রাজপথে নেমে আসতেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-উৎসবের নামে অশ্লীলতা ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড নির্মূলে মাওলানা আরমান সাহেব আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৮০ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আনন্দ মেলার নামে অপসংস্কৃতির এক বিশাল আয়োজনকে তিনি ১০/১৫ হাজার তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে পণ্ড করে দেন। এব্যাপারে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলেও তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হননি। ১৯৮৯ সালে কুখ্যাত লেখক সালমান রুশদী কর্তৃক পবিত্র কোরআন মজিদ, মহানবী স. ,সাহাবায়েকেরাম ও রাসুল স. এর সহধর্মীনিগণের ব্যাপারে কুটুক্তির প্রতিবাদে কক্সবাজার পাবলিক হল মাঠে বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজনের মাধ্যমে মাওলানা আরমান সাহেব তেজোদীপ্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন।

সমাজসেবা:
মরহুম মাওলানা আরমান সাহেব শুধু রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত সমাজ দরদী ব্যক্তিত্ব। তিনি সুখে দুঃখে সমাজের অসহায় দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতেন। ১৯৯১ সালে সর্বগ্রাসী ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সমূহের পুনর্বাসন ও বিধ্বস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ পুনঃনির্মাণের দাবীতে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর চাকমারকুল মাদ্রাসার মরহুম পরিচালক মাওলানা সুলাইমান রহ. সহ বিশিষ্ট ওলামায়েকেরামের এক প্রতিনিধিদল নিয়ে তিনি এব্যাপারে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা এবং এলাকার রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে মরহুম মাওলানা নুরুল হক আরমান রহ. এর অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে।

সাহিত্য-সাংবাদিকতা:
মুসলিম মিল্লাতের বিরুদ্ধে মিডিয়া আগ্রাসন মোকাবিলায় সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও মননশীল সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্র তৈরির নিমিত্তে তিনি “সাপ্তাহিক নাজাত” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনিই ছিলেন এই পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। তাঁর স্বপ্ন ছিল অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেসসহ একটি উঁচুমানের প্রকশনা সংস্থা গড়ে তোলা। এ উদ্দেশ্যে তিনি আরব আমিরাত,সৌদিআরব,বাহরাইন,ভারত ও পাকিস্তান সফর করে প্রবাসী মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে অসূস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর এই কাঙ্খিত উদ্যোগ আর বাস্তবায়িত হয়নি।

আধ্যাত্মিকতা:
আধ্যাত্মিক জগতের অন্যতম রাহ্বার আল্লামা আতহার আলী রহ. এর এই সুযোগ্য উত্তরসূরী রাজনীতি ও শিক্ষকতার শত ব্যস্ততার মাঝেও আল্লাহকে স্মরণ করতে ভুলে যেতেন না। তিনি নামায,রোজা,কোরআন তেলাওয়াত,যিকির-আযকার প্রভৃতি ইবাদত-বন্দেগী পালনে সচেষ্ট ছিলেন। দিনের বেলায় ইসলামী আন্দোলন ও জাতির কল্যাণে বিভিন্ন তৎপরতায় অংশগ্রহণ এবং রাত্রে মহান আল্লাহ তা’আলার যিকির-আযকার ও তাহাজ্জুদের নামায আদায় ছিল তাঁর অনন্য বৈশিষ্ট। তিনি বহুবার পবিত্র হজ্ব ও ওমরা পালন করেন।

গুণাবলী:
রাজনৈতিক নেতা হয়েও আড়াম্বরপূর্ণ জীবন যাপনের পরিবর্তে সাদাসিদে সুন্নাতি পোষাক পরিধান ও সহজ-সরল জীবন যাপনে তিনি সাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। কোন প্রকার পার্থিব মোহ ও অহঙ্কার তাঁকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। সদা হাস্যোজ্জ্বল, নম্র, ভদ্র স্বভাবের অধিকারী মাওলানা আরমান রহ. আন্তরিকতা দিয়ে সহজে নেতাকর্মীদের মন জয় করতে পারতেন। তিনি নিজের অভাব কখনও নেতাকর্মীদের কাছে প্রকাশ করতেন না বরং নিজে না খেয়ে তাদেরকে খাওয়াতেন। খানা খাওয়ার সময় হঠাৎ কোন কর্মী এসে পৌছলে এক প্লেট ভাতকে ভাগ করে তিনি নিজেও খেতেন, কর্মীকেও খাওয়াতেন। তিনি তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনো কোনরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন করতেন না। কর্মীদের যে কোন সমস্যায় তিনি এগিয়ে আসতেন।

মূল্যায়ন:
সর্বোপরী মাওলানা আরমান রহ. এর বর্ণাঢ্য জীবনে ইসলামী নেতৃত্বের প্রয়োজনীয় গুণাবলীর সফল সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। তিনি ছিলেন একাধারে নববী আদর্শ ও সাহাবা জীবনের সার্থক অনুসারী, বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন,দূরদর্শী রাজনীতিবিদ,ইসলামের দ্বীপ্তিময় নক্ষত্র, দ্বীনি আন্দোলনের সাহসী যোদ্ধা ও নিঃস্বার্থ সমাজসেবক। তাঁর মত ত্যাগী ব্যক্তিত্ব বর্তমান সমাজের বিরল। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে উচ্চ রক্তচাপের প্রতিক্রিয়ায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লে তাঁর বাকশক্তি রহিত হয়ে যায়। এর পর থেকে কখনও তাঁকে আর জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে দেখা যায়নি, অংশগ্রহণ করতে পারেননি বৃহত্তর রাজনৈতিক কোন কর্মসূচিতে। অসূস্থতার আগ পর্যন্ত তিনি নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা সভাপতির দায়িত্বও আনজাম দেন। তিনি ইন্তেকাল করলে মাওলানা হাফেজ ছালামতুল্লাহর উপর জেলা সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয়। যা তিনি দক্ষতা ও সুনামের সহিত পালন করে চলেছেন।

ইন্তেকাল:
২০০২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী, মঙ্গলবার তাহাজ্জুদের সময় ৫৭ বছর বয়সে এই মনিষী ইন্তেকাল করেন-(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী, ৪ পুত্র ও ৩ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী,আত্বীয় স্বজনও ছাত্র-শিষ্য রেখে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালে জাতি ইসলামের এক বীর সেনানী, নিষ্ঠাবান সমাজসেবক, নিঃস্বার্থ রাজনীতিবিদ ও ইসলামী আন্দোলনের এক দক্ষ সংগঠককে হারালো।
চট্টগ্রাম জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়ার প্রধান পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীর ইমামতিতে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক তৌহিদী জনতার অংশগ্রহণে নামাজে জানাযা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। আল্লাহ পাক মরহুমকে তাঁর যাবতীয় নেক আমল কবুল করে জান্নাতুল ফেরদাউসের সুউচ্চ মকামে অসীন করুন। আমিন!