শাহিদ মোস্তফা শাহিদ

কক্সবাজার সদরের সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ইসলামপুরে চিংড়ি ও মৎস্য ঘেরে ৪ ঘন্টা ব্যাপী তান্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ব্যাপক গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ভাংচুর, লুটপাট করা হয়েছে ঘেরের বাসা।

তাতে শেষ নয়, স্বশস্ত্র দুর্বৃত্তের দল ৪ জনকে মারধর এবং দুই শ্রমিককে তুলে নিয়ে একজনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে।

৩ ফেব্রুয়ারী সদরের ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর নাপিত খালী গোল্ডেন ফার্ম এসোসিয়েট নামের একটি চিংড়ি ও লবন মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

রাত ৮ টা থেকে দফায় দফায় ১২ টা পর্যন্ত চলে এ ডাকাতির ঘটনা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশ এলাকা থেকে গুলির খালী খোসা, এবং ডাকাতদলের ফেলে যাওয়া একটি ওয়াকিটকি (ওয়ারলেস) উদ্ধার করেছে ঈদগাঁ পুলিশ। তবে ডাকাত দলের সদস্যদের বাড়ি খুটাখালী হলেও একজনকেও আটক করতে পারেনি চকরিয়া থানার পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি ব্যবহৃত কোন অস্ত্র।

সংগঠিত ডাকাতি ও লুটপাটে বাঁধা দেওয়ায় লবন চাষা মোস্তাক আহমদ (৫০) এবং নাজু নামের অপর এক শ্রমিককে তুলে নিয়ে যায়। সে সময় ফের বাঁধা দেওয়ায় আমানু, রমজান, সোহেল, আবছার নামের আরো ৪ জনকে মারধর করেছে বলে জানা গেছে। রাতের অন্ধকারে প্রহৃত নাজু’কে ছেড়ে দিলেও সকালে মুমূর্ষু অবস্থায় ছেড়ে দেয় মোস্তাক আহমদকে। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে আশংকাজনক হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে বাঁশখালী এলাকার হাকিম আলীর ছেলে এবং ঐ লবন মাঠের বর্গা।

গোল্ডেন ফার্ম এসোসিয়েট এর পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী জানান, ইসলামপুর ইউনিয়নের জুম নগর এলাকার মৃত ফজল করিমের ছেলে আক্তার আহমদের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন অস্ত্রধারী ডাকাত এসে প্রথমে উপর্যপুরী গুলি বর্ষন করে ভীতি প্রদর্শন করে। তারপর ঘেরের দুটি বাসায় ভাংচুর চালিয়ে পানি উত্তোলনের ৪ টি মেশিন, চুলাসহ গ্যাস সিলিন্ডার দুটি, সৌর বিদ্যুৎ দুটি, মাছ শিকারের ১০ টি জাল, কলবোট জাল দুটি, লবন বিক্রির নগদ ৭৫ হাজার টাকাসহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার সরঞ্জাম ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, ডাকাতি কাজে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে দুই শ্রমিককে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় এবং আরো ৪ জনকে মারধর করে আহত করে। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও মোস্তাক আহমদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খবর পেয়ে ঘেরটির অংশীদাররা এক হয়ে ধাওয়া করলে ডাকাত দলের সদস্যরা পাকা গুলি বর্ষন করে পশ্চিম দিকে পালিয়ে যায়।
ঘেরের অংশীদার জসিম উদ্দিন জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা জলপথে বোট যোগে এসে ডাকাতি করেছে। তাদের ধারণা সবার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হতে পারে।সংগঠিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ডাকাত দল পালিয়ে নদী পার হয়ে চকরিয়া উপজেলা খুটাখালীর দিকে চলে যায়। এসময় ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে ৩ টি গুলির খালী খোসা, এবং একটি ওয়াকিটকি (ওয়ারলেস) উদ্ধার করা হয় ।যদিও বা পরে চকরিয়া থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কাউকে আটকের চেষ্টা চালায়নি বলে অভিযোগ করেন অংশীদাররা।

জানতে চাইলে ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। সদর এবং চকরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকা হওয়ায় দুর্বৃত্তরা দ্রুত খুটাখালী ইউনিয়নে পালিয়ে যায়। আটকের চেষ্টা চালানো হয়েছে অনেক্ষণ। তিনি বলেন, ২৫/৩০ রাউন্ড মত গুলি বর্ষন হয়েছে। ৩ টি খালী খোসা ও একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘের মালিক অথবা অংশীদার এবং চাষার পক্ষে কেউ মামলা করলে তদন্ত পূর্বক আইনের আওতায় আনা হবে।