ফাইল ছবি

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের সন্তান সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইনকে আবারো সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়বারে ইয়াবাকারবারীকে আত্মসমর্পণে সফল মধ্যস্থতাকারী হিসাবে তাঁকে এ সম্মাননা প্রদান করা হবে। সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারী বিকেলে অনুষ্ঠিতব্য টেকনাফ কলেজ মাঠে ইয়াবাকারবারীদের ২য় দফায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইনকে এ সম্মাননা প্রদান করবেন। ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণের সাথে জড়িত বিশ্বস্ত একটি সুত্র সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিগত দেড় বছরে জানাবাজ এই সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইন জলদস্যুদের ২ টি ও ইয়াবাকারবারীদের ২ টি সহ জগন্য অপরাধীদের মোট ৪ টি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সফল মধ্যস্থতাকারী ছিলেন।

তারমধ্যে, বিগত সালের ২৩ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছরা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে আত্মসমর্পণ করা ৯৬ জন ভয়ংকর জলদস্যু, শীর্ষ অস্ত্রের কারিগর এই দুঃসাহসী গণমাধ্যম কর্মীর মধ্যস্থতায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) এর কাছে ১৫৫ অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম ও প্রচুর গোলাবারুদ সহ আত্মসমর্পণ করে। এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি এ দুঃসাহসিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এম.এম আকরাম হোসাইনের হাতে তুলে দেন বিশেষ সম্মাননা পদক। যা ছিল কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য একটা গর্বের বিষয়।

ইয়াবানগরী খ্যাত টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবাবাজ ও হুন্ডিবাজকে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি’র উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন বিগত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ হাইস্কুল মাঠে। এটা ছিল সর্বপ্রথম দেশের মাদকবাজ ও হুন্ডিবাজদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। যেটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে কৌতুহল, আলোচনা-সমালোচনার অন্ত ছিলোনা। এ আত্মসমর্পণেরও সফল মধ্যস্থতার কারিগর ছিলেন সাংবাদিক এম. এম আকরাম হোসাইন।

এছাড়া ১৯১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে আত্মসমর্পণকৃত ৬ টি কুখ্যাত সশস্ত্র জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন জলদস্যুর মধ্যে ৫ টি সশস্ত্র ভয়ংকর বাহিনীর ৩৭ জন জলদস্যুকে মধ্যস্থতা করে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলেন এই দেশপ্রেমী গণমাধ্যম কর্মী, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী এম.এম আকরাম হোসাইন।

টিভি রিপোর্টিং এ চট্টগ্রাম বিভাগের বর্ষসেরা এওয়ার্ড পেয়েছেন ২০১৯ সালে। চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন (টিসিজেএ) এর উদ্যোগে সংগঠনটির যুগপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের ভূমিপুত্র এম.এম আকরাম হোসাইনকে শ্রেষ্ঠত্বের এ মর্যাদাবান এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড় স্কয়ার কনভেনশন হলে তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এম.এম আকরাম হোসাইনকে এ এওয়ার্ড তুলে দিয়েছিলেন। উপকূলের ভয়ংকর জলদস্যুকে নিয়ে রিপোর্টিং এর উপর এম.এম আকরাম হোসাইন এ গুরুত্বপূর্ণ এওয়ার্ড অর্জন করেছিলেন।

কুখ্যাত অপরাধীদের অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে ফেরানোর নেশায় মগ্ন এম.এম আকরাম হোসাইনকে সম্বর্ধিত করা হয়েছে-নিজ জম্মস্থান পেকুয়াতেও। ২০১৯ সালের বছরের ১১ এপ্রিল উপকূলের ‘শান্তির অগ্রদূত’ স্বীকৃতি পাওয়া সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইনকে সর্ম্বধিত করা হয়।

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব উজানটিয়ার মালেকপাড়ার হাজী মোহাম্মদ আমিন সিকদার ও হোসনে আরা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র এম.এম আকরাম হোসাইনের জন্ম ১৯৯২ সালের ২৯ মে। সে হিসাবে তাঁর বয়স প্রায় ২৮ বছর। চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ থেকে কৃতিত্বের সাথে এস.এস সি পাশ করেন। চিটাগাং মেট্রোপলিটন কমার্স কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইসএসসি পাশ করেন ২০০৯ সালে। চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন সফলতার সাথে। কিন্তু ছোটকাল থেকেই সখ ছিল মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করবেন। তাই এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করার পরও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ডিগ্রী নিয়েছেন দুঃসাহসী জানবাজ এই গণমাধ্যমকর্মী।

২০১৫ সাল থেকেই নিজেকে সাংবাদিকতা পেশার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে ফেলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাথে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত থেকে প্রাইভেট চ্যানেল বিজয় টিভিতে কাজ করেছেন-২০১৬ সাল থেকে প্রায় দু’বছর। ২০১৭ সালের শেষ দিকে এম.এম আকরাম হোসাইন যোগ দেন-দেশের অন্যতম বেসরকারি টিভি চ্যানেল-২৪ এ। বিগত সালের অক্টোবর মাসে তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকে চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হিসাবে যোগ দেন বেসরকারি টেলিভিশন আনন্দ টিভি’তে। জীবনের একাকীত্ব ঘুছিয়ে মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুমাইয়া আকতার সুমু’কে জীবনসঙ্গী করেছেন প্রায় ২ বছর আগে। বড়ভাই এডভোকেট মোকাররম হোসেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সিনিয়র সদস্য ও দুদকের প্যানেল আইনজীবী। তাঁর সহধর্মিণী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক।
মানুষ অপরাধ করতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে নিষিদ্ধ ও অন্ধকার জগতের বাসিন্দা হয়ে যায়। সেই নিষিদ্ধ জগতের মানুষের সাথে সুকৌশলে সম্পর্ক করে জীবনবাজী রেখে তাদের আলোর মুখ দেখিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনাই এম.এম আকরাম হোসাইনের নেশা। অপরাধ জগতের ভয়ংকর ও দুধর্ষ মানুষ গুলো স্বাভাবিক জীবনের যখন ছোঁয়া পায়-তখনি তিনি তৃপ্তির ঢেকুর গিলতে থাকেন। নিজের অনাগত কর্মের জন্য আরো উৎসাহী হয়ে উঠেন। আইনপ্রয়োগকারী বাহিনী যখন এসব পেশাদার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হিমশিম হয়ে পড়েন-তখন একজন সাধারণ মানুষ হয়ে নিষিদ্ধ ও অন্ধকার জগতের এসব কুখ্যাত অপরাধীদের সাথে তিনি দূতিয়ালি করে নির্ভয়ে জানবাজী রেখে তাঁদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইন। আর যখন তিনি দেখতে পান, দূতিয়ালি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া ভয়ংকর সশস্ত্র অপরাধী, মাদককারবারীরা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যস্ত, তখনি তিনি নিজেকে একজন সফল সমন্বয়কারী হিসাবে গর্ববোধ করেন, পুলকিত হন। কারণ-এই প্রক্রিয়াতে অপরাধী, রাষ্ট্র ও জনগণ সবাই খুবই উপকৃত হন। পেশা, জস,খ্যাতি কিংবা অর্থের জন্য নয়, শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ, বিবেকের তাড়না ও দেশপ্রেম থেকেই এই বিশাল ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজটি তিনি করে থাকেন। এ উপকূলে শান্তি ফিরাতে এম.এম আকরাম হোসাইনের এ দুঃসাহসিক কাজ তাঁকে এনে দিচ্ছে একের পর এক বিরল সম্মাননা।

এ বিরল সম্মাননা প্রাপ্তির জন্য সাংবাদিক এমএম আকরাম হোসাইন মনোনীত হওয়ায় তার প্রতিক্রিয়ায় সিবিএন-কে তিনি বলেন, এ সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য আমি নই, মানবিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধ থেকে এ কঠিন মিশনের কাজ করছি। তাতে যখন সফল হই, তখন নিজে তৃপ্তি পায়। দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হয়ে একাজ করি বলে ঝুঁকির বিষয়টি কাজ করার সময় আর আমার মাথায় থাকেনা।