ইফতেখার শাহজীদ, কুতুবদিয়া:

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় অবশেষে স্বস্তি ফিরেছে। শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে দ্বীপজুড়ে। খুবই চমৎকার দ্বীপের পরিবেশ এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি খুবই উন্নত। ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলেই দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে ছুটে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনির সদস্যরা। দ্বীপ ছাড়াও জেলার সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে কুতুবদিয়া থানা পুলিশের ব্যতিক্রমি উদ্যোগ ‘আপনার ওসি আপনার দোরগোড়ায়’ প্রোগ্রামটি। এর মাধ্যমে সাধারণ জনগনের সাথে পুলিশের দুরত্ব অনেকটা কমে গেছে। ফলে ছোটখাটো অপরাধ করতেও সাহস করছেনা অপরাধীরা।

যেখানে গত তিন বছর আগেও মাদক কারবারি এবং জলদস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। সরকার যখন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছিল তখন মাদক কারবারিরা টেকনাফ থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছিল কুতুবদিয়াকে। মরণ নেশা ইয়াবা বিষাক্ত ছোবল বসিয়েছিল দ্বীপের আনাচে কানাচে। সাগর ঘেরা দ্বীপটির জনমানুষের মনে ভয়াবহ আতঙ্ক ছিল জলদস্যু। দ্বীপের পঞ্চাশ ভাগ মানুষই জীবিকার তাগিদে সাগরে যায় মাছ ধরতে। সেখানে জলদস্যুদের কবলে পড়ে কতো মা হারিয়েছে আদরের সন্তান, কতো সন্তান হারিয়েছে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে। কেউবা হারিয়েছে শেষ সম্বল বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋনে কেনা মাছ ধরার ট্রালারটি। দ্বীপের আইন শৃংখলা রক্ষায় আইন প্রয়োগকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন একপ্রকার হিমশিম খাচ্ছিল।

এ অবস্থায় বিগত ২০১৭ সালের ১৩ আগষ্ট বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনির চৌকস অফিসার মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদাউস জাতিসংঘের দারফুর মিশন শেষে ৩৫তম অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে কুতুবদিয়া থানায় যোগদান করেন। যোগদানের পরই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। তাঁর নির্দেশে উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদীনসহ সাহসী অফিসারদের নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কুতুবদিয়া উপকূলের কুখ্যাত প্রায় অর্ধশতাধিক বাঘা বাঘা জলদস্যুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় কুতুবদিয়া থানা পুলিশ। পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় কয়েকজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র। এতে করে পাল্টে যেতে থাকে পুরো উপজেলার চিত্র।

দিদারুল ফেরদাউস দ্বীপের আইন শৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক অবক্ষয়, যৌতুক ও বাল্য বিয়ে রোধ, মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী জনমত সৃষ্টিমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন সর্বদা। ফলে খুব অল্প সময়েই সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। দ্বীপের শিক্ষার্থীদের মাঝে আধুনিক শিক্ষার আলো ছড়াতে কুতুবদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুলেছেন ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব। কুতুবদিয়াকে মাদকমুক্ত মডেল থানায় রূপান্তর করতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি।

পরিশ্রমী ও সাহসী এ পুলিশ কর্মকর্তা ২০১৭ সালের প্রশংসনীয় ও ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ হতে “আইজিপিএস ব্যাজ” অর্জন করেন।

মাদক পাচারের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট হলেও তিন বছর আগে থানায় মাদক মামলা ছিল নগণ্য গত আড়াই বছরে শতাধিক মামলা করে প্রায় ৩ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ইয়াবা, ১শ ৩০ লিটার মদ ও ৬ কেজি গাজা।

উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী মুকুল বলেন- ‘একজন মেধাবী পরিশ্রমী আর সাহসী পুলিশ অফিসার দিদারুল ফেরদৌস। বিগত আড়াই বছরে কুতুবদিয়ায় মাদক এবং সন্ত্রাস দমনে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মত সুদক্ষ অফিসারই কুতুবদিয়ায় প্রয়োজন।’

কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস বলেন, ‘মানব সেবার অন্যতম প্লাটফর্ম পুলিশের চাকরি। সেবা প্রার্থীদের সকল ধরনের সহযোগিতা করার জন্য থানার সকল অফিসারকে নির্দেশ দেয়া আছে। পুলিশ ক্লিায়ারেন্স ও সাধারণ ডায়েরি করতে টাকা লাগেনা। যদি কেউ টাকা দাবি করে তাহলে সরাসরি আমাকে জানান।’

মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূল করে পরিচ্ছন্ন কুতুবদিয়া গড়তে সবার সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।