শফিক আজাদ, উখিয়া: 

কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ উন্নয়নের কাজ চলছে ধীরগতিতে। বিশেষ করে ২মাস যাবৎ কুতুপালং বাজারে আরসিসি পেভমেন্ট ঢালাইয়েরর কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে সড়কের যান চলাচল বিঘ্নিত হয়ে দুর্পাল্লার যাত্রীসহ স্থানীয় পথচারী এবং স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র/ছাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে কুতুপালং বাজারে উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে কাজ আবার শুরু করা হবে।

জানা গেছে,অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে নাজুক হয়ে পড়ে কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ সড়ক। তাই কক্সবাজারের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে একাধিক জরুরি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।

গত ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজার- উখিয়া ও টেকনাফে হঠাৎ কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি দেশী-বিদেশী উন্নয়ন সেবা সংস্থাগুলোর (এনজিও) কর্মকান্ড বেড়ে কয়েক গুণে দাড়ায়। এতে সড়কগুলোয় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে যানবাহনের সংখ্যা ও চাপ।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে সওজের অধীনে থাকা সড়ক-মহাসড়কের পরিমাণ ৫৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৫৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক। জাতীয় এ মহাসড়কের ১৫৮ কিলোমিটারের মধ্যে কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ সড়কের দৈর্ঘ্য ৭৯ কিলোমিটার। এ সড়ক দিয়েই কক্সবাজার শহর ও দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে সড়ক পথে চট্টগ্রাম হয়ে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত করেন দেশী-বিদেশী এনজিও সহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার কর্মী ও ত্রাণ সামগ্রী। মাত্র ১৮ ফুট প্রস্তের এ সড়ক দিয়ে দৈনন্দিন নিয়মিত চলাচল কারী প্রাইভেট, গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াত ছিল । তাছাড়াও এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্য পরিবহন হয়ে আসছে। জাতিসংঘ সহ দেড় শতাধিক দেশী বিদেশী উন্নয়ন সহযোগী সেবা সংস্থা গুলোর কর্মীদের এক হাজারের মত যানবাহন চলাচল করছে। এতে অতিরিক্ত যাত্রী ও ভারী পণ্যবাহী যানবাহনের চাপে সড়কটিতে সৃষ্টি হয় প্রচুর যানজট। এসময়ের মধ্যে অতিরিক্ত এ ধরণের যানবাহন যাতায়াতের কারণে ইতিমধ্যে এ সড়কের উখিয়ার কুতুপালং, মরিচ্যা,কোটবাজার,উখিয়া সদর, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালী বাজার ও বাস স্টেশনে সড়কের চিহ্ন খুজে পাওয়া কঠিন।

ভারী ও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ সড়কের উখিয়া অংশের মরিচ্যা বাজার থেকে পালংখালী পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের প্রায় সবখানে বড় বড় গর্ত,খানা,খন্দক,সড়ক জুড়ে ফাঁটলের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচল রীতিমত চরম ঝুঁকির মূখে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। এসব কারণে দ্রুত সময়ে সড়কটি সম্প্রসারণ ও সংস্কারের লক্ষ্যে একটি জরুরি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সওজ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) জরুরি অর্থায়নে ৭৯ কিলোমিটার সড়কটি বিদ্যমান ১৮ ফুট থেকে উভয় পাশে ৩ ফুট করে সম্প্রসারণ করে ২৪ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে।

বাজার ও বাস স্টেশন অংশগুলোয় এটি প্রায় ২৮ থেকে ৪৫ ফুটে বর্ধিত করা হবে। বাজার ও বাস স্টেশন অংশে সম্প্রসারিত সড়ক হবে আরসিসি পেভমেন্ট ঢালাই। যা বিটুমিন সড়কের চেয়ে অনেক টেকসই ও অধিক ধারণ ক্ষমতা সক্ষম বলে সওজ সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি এ সড়কের ২৭টি ছোট-বড় কালভার্টকে সড়কের চেয়েও বড় আকারে সম্প্রসারণ করা হবে। তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হবে ৪৫৮ কোটি টাকার ৭৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে এ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পেরর কাজ চলমান রয়েছে।

তবে কিছু কিছু জায়গায় সড়কের কাজ খুলে রাখলেও কাজ না করায় যাত্রী সাধারণ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার এমন চিত্র দেখা গেছে, কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ সড়কের কুতুপালং স্টেশন এলাকায়। জনবহুল এই স্টেশনের দক্ষিণাংশের কিছু অংশ আরসিসি পেভমেন্ট ঢালাই করেছে প্রায় ২ মাস পূর্বে। কিন্তু বাকী কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার উধাও হয়ে গেছে বলে জানান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি আরো বলেন, যাত্রীর পাশাপাশি গাড়ীর চাপে দিনভর যানজট লেগে থাকে কুতুপালং স্টেশনে। ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন সদোত্তর দেয়না। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে সামনে এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় ছাত্র/ছাত্রীর মারাত্নক সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মোঃ আনিস বলেন, টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে কাজ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। তবে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

কাজের তদারকিতে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জলিল এ প্রতিবেদককে জানান, ঠিকাদারের কারনে কাজ বন্ধ ছিল। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে পুনরায় কুতুপালং স্টেশন এলাকায় আরসিসি পেভমেন্ট ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ -সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার সাথে এ বিষয়ে জানার জন্য মোবাইলে চেষ্টা করা হলে সংযোগ না পাওয়া বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।