সিবিএন ডেস্ক:
ওয়াজ মাহফিলে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে বিএনপি ধর্মের বিষয় তুলছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘটনা ঘটে।

পয়েন্ট অব অর্ডরে ফ্লোর নিয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘‘সংবিধানের প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম। এর বাংলা অর্থ ছিল, দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। সেটির পরিবর্তন করে সংযোজিত হয়েছে ‘দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে।’ এ বিষয়টির ব্যাপারে আপত্তি করেছিলাম। প্রকৃত অর্থ সংযোজন হওয়া উচিত।’’

বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিল প্রসঙ্গে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন থেকে লক্ষ করছি, সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অনেক সদস্য বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজকে বিভিন্ন তাফসির মাহফিলে কোরআন-হাদিসের আলোকে যেসব আলোচনা আসছে, সেগুলোকে আপত্তিজনক, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। কোন বিষয়টি? কোরআন ও হাদিস মৌলিক বিষয়। এখানে আমি আমার মতো ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই।’

হারুনুর রশীদ বলেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আমরা মুসলমান। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান তারা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, তাফসির মাহফিল করতে গেলে সেখানে নিষেধাজ্ঞা আসছে, আপত্তি আসছে। যেসব বিষয় নিয়ে আপত্তি আসছে, সেগুলো নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।’

এ সময় সরকারি দলের বেঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা হারুনুর রশীদের কথার প্রতিবাদ জানান।

পরে ফ্লোর নিয়ে সরকারি দলের আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘এটা সত্য বাংলাদেশে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হয়। কোরআনের তফসির নিয়ে যে কথা তিনি বললেন, বাংলাদেশে সব জায়গায় মাহফিল হচ্ছে। সেখানে ধর্মের, ইসলামের কথা বলা হচ্ছে। শুধু জামায়াতি পন্থায় মানুষকে শিক্ষা দিতে না পারে, যেন দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে, সে দিকটাকে আমরা বলে থাকি, এটা যেন না হয়। ইসলামের কাজে কোনও বাধা দেওয়া হচ্ছে না।’

হারুনুর রশীদের উদ্দেশে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘মাননীয় সদস্য জামাতপন্থীদের কথার মতোই কিছু কথা তুলেছেন। মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে দেখাতে চাইছে।’

পরে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ফ্লোর নিয়ে বলেন, ‘বিরোধী দলের সদস্য ধর্মের নামে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহর অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, চিরাচরিত একই রাজনীতি, ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেশতের টিকিট পাওয়া যাবে। নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না। নবীর মৃত্যুর পর কোনও হাদিস পৃথিবীতে আসেনি। বিএনপির জন্মের পর বলা হলো, ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেশত পাওয়া যাবে। এমন কোনও হাদিস নেই।’

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আরও বলেন, ‘আগামী ১ তারিখ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে ঢাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য হঠাৎ এমন একটি পয়েন্ট উত্থাপন করলেন, যার সঙ্গে সংসদের কার্যক্রমের কোনও সম্পর্ক নেই। সারা বাংলাদেশে ওরস, তাফসির মাহফিল হয়। আমরা ওরসে বোমা হামলা করতে দেইনি। আমরা হজরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলা করতে দেইনি। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে যারা বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলছেন।’ যারা তাফসির মাহফিল করছেন, যারা জলসা করছেন, রাষ্ট্র তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।