রাজা সূর্য খাঁ

কক্সবাজার ব্যয়বহুল শহর হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনের রহস্য হচ্ছে কক্সবাজারের সরকারি অামলাদের বেতন -ভাতা বাড়ানো!! ব্যয়বহুল বলার যৌক্তিকতা দেখানো হয়েছে অতিরিক্ত পর্যটক, রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ, দেশি-বিদেশি এনজিওর প্রতিনিধি দল অবস্থান ইত্যাদি। এইসব কারণে নাকি কক্সবাজারের গাড়িভাড়া, বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাই সরকারি গেজেটে ‘কক্সবাজারকে’ ব্যয়বহুল স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি আমলাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির রাস্তাটা পরিষ্কার করলো! সাথে সাথে পণ্য বা সেবার পর্যাপ্ত চাহিদা পূরণের ক্ষমতা থাকার পরেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যে যার মতন দাম বৃদ্ধির লাইসেন্স দিয়ে দিলো সরকার!!! এই লাইসেন্স মধ্যবিত্তদের আরো শোষণ করার সাহস দিবে নিশ্চয়! সরকারি আমলাদের বেতন বাড়িয়ে তাদের অতিরিক্ত ব্যয় সামলানোর দায়িত্ব নিলেন, মধ্যবিত্তদের জন্য কি’বা করলেন???? এই কক্সবাজারে রুহিঙ্গা ও এনজিওদের দোহাই দিয়ে যে যার মতন দাম হাঁকিয়ে লাখপতিরা রাতারাতি কোটবপতির কাতারে চলে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে মধ্যবিত্তরা আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে না পেরে নিরবে কৃত্রিম সংকটের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছেন। না পারছেন এই শহর ছেড়ে চলে যেতে না পারছে থাকতে।

আমার পরিচিত অনেকেই তাদের দৈনন্দিন আর ছেলেমেয়েদের লিখাপড়ার খরচ চালাতে না পেরে নিজেদের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। পৌরসভা ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) আছেন নিজেদের তালে! কোন বাজার দামের তদারকি নেই, নেই কোন বাড়িভাড়া আইনের সচেতনতা!! তাই যে যার মতন দাম বাড়াচ্ছে। যে জিনিসের একবার দাম বাড়ে সে জিনিসের দাম আর কেউ কমাতে পারেনা। তাদের ক্ষমতার কাছে জনপ্রশাসন কিছুই না। তারা কোন আইনকে পাত্তায় দেয়না। কারণ তারাও জানে মামুদের খাতিরে রেখে সব করা যায়। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে গুটিকয়েক অভিযানে কিছু টাকা জরিমানার নামে নিজেরা জায়েজ করে। এই জায়েজ করা টাকার বিনিময়ে কোন দুর্নীতিই ঠেকানা সম্ভব নয়। কয়েক দশক এনালাইসিস করেন আমার সাথে আপনিও মেলাতে পারবেন। মনে করেন সকালে কোন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করলো, বিকেলে দেখবেন কোন না কোন উপায়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে তার অতিরিক্ত টাকা ঠিকই তুলে আনছে! তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বদৌলতে কার লাভ হচ্ছে??? বাজারের দাম ও ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই স্থায়ী নিয়মিত কমিটি থাকা দরকার। নয়লে কোনদিনও সম্ভব নয়। কিন্তু জনপ্রশাসন জনগণের সুবিধার্থে এখনও ভাবার প্রয়োজন করছেননা! আর ভাবলেও সেটা সর্বাধিক নয়, একটি নির্দিষ্ট দল বা গুষ্টির জন্য।

গত এক যুগে সরকারি আমলাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রায় ১০০%। তাদের বেতনের এক চামচ তথ্য তুলে ধরা হলো- সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা সুপারিশ করা হলেও, এই স্কেলের বেতন ভাতাসহ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। একইভাবে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৮ হাজার ২৫০ টাকা সুপারিশ করা হলেও সব মিলে দাঁড়ায় ২০ হাজার ১০ টাকা। 😉

সাথে সাথে বেকারত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ হারে। এইসব আমলাদের বেতন ১০০% না বাড়িয়ে বেকারত্বের পার্সেন্টেজ কমানোতে যদি সরকার নজর দিতেন তাহলে অপরাধ ও সন্ত্রাস প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পেতো। তাহলে এই বেকারত্ব নিয়েও এক চামচ তথ্য খাওয়া যাক- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার
(আই এলও) প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল পাকিস্তান। বর্তমানে এই হার আরো বেগবান!! 😥

আমরা বেতন ভাতা বৃদ্ধির বিপক্ষে নই। কিন্তু সেই বেতন ভাতা যদি সাধারণ জনগণের জন্য অভিশাপে নিয়ে আসে তাহলে অবশ্যই বিপক্ষে থাকবো। কক্সবাজারকে ব্যয়বহুল শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি আমলাদের বেতন বৃদ্ধি ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবার দাম বৃদ্ধির লাইসেন্স দেয়াটা কতটুকু সুফল বয়ে আনবে কক্সবাজারের জন্য! 😡
এইসব বেতন ভাতা বৃদ্ধির পায়তারা না করে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুন। দেশ দশের শান্তি এমনিই আসবে।

অথচ সরকার জনগণ যেখানে অাঘাত পায় সেখানে ব্যান্ডেজ না করিয়ে চার আঙ্গুল দূরে গিয়ে ব্যান্ডেজের ব্যবস্থা করছে। ক্ষত সারা তো দূরের কথা ক্ষতের সংক্রমণের সাথে ভালো অংশটিও অহেতুক ব্যান্ডেজের কারণে ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে।

 

(প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব- কক্সবাজার নিউজ)