মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে উখিয়া- টেকনাফে পালিয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের প্রাক্কালে রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডাব্লিউ জি) বৈঠক করতে চায় বাংলাদেশ সরকার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্বৃতি দিয়ে কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা সিবিএন-কে বলেন, ‘মিয়ানমার রাজি থাকলে আমরা ফেব্রুয়ারি মাসেই দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠক করতে চাই। এজন্য ইতোমধ্যে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, গত বছর আমরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছি, কিন্তু তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।

আরেকজন কর্মকর্তা সিবিএন-কে বলেন, ‘বহুপাক্ষিকভাবে আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি কিন্তু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দরজা আমরা কখনও বন্ধ করিনি।’ ২০১৮ সালে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একাধিক বৈঠক হয়েছে কিন্তু মিয়ানমারের অনীহার কারণে আমরা রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন এখনো শুরু করতে পারিনি বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘যাচাই বাছাই করার জন্য আমরা গত দুই বছরে ৫৫ হাজারেরও বেশী রোহিঙ্গা শরনার্থীর তালিকা দিয়েছি মিয়ানমারকে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই বাছাই শেষ হয়নি।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে না মিয়ানমার সরকার। এজন্য বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা তাদের দেশে যেতে আগ্রহী নয় বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে সুত্রটি আরো বলেন, ‘প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন। এটি যেন টেকসই হয় এবং রোহিঙ্গা শরনার্থীরা যেন আর ফিরে না আসে। সেজন্য ২০১৭ সালে আমরা একটি চুক্তি সই করেছি। তার আলোকে আমরা কাজ করবো।’
এদিকে, গণমাধ্যম সুত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের আদেশ রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরাতে এবং তাদের ফেরত যেতে উৎসাহিত করবে।’ কোর্টের সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়ন রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে এবং রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে নিশ্চিত করবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলায় চারটি অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছে। আদেশগুলো হচ্ছে-(১) গণহত্যা কনভেনশনের ২ ধারা অনুযায়ী মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের হত্যা, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করতে পারবে না এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সম্প্রদায়ের কোনও ক্ষতি করবেনা, (২) আদেশটি হচ্ছে- মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা অন্য কোনও ধরনের বাহিনী গণহত্যা করবে না, গণহত্যা করার ষড়যন্ত্র করবে না বা গণহত্যাকে উৎসাহিত করে এমন কোনও ঘৃণামূলক বক্তব্য দেবে না, (৩) আদেশ হচ্ছে- গণহত্যা সংক্রান্ত কোনও প্রমাণ নষ্ট বা ধ্বংস করা যাবে না, এবং (৪) আদেশ হচ্ছে-চার মাস পরে মিয়ানমার এগুলো পালনের জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে এবং মামলা চলাকালীন সময়ে প্রতি ছয় মাস পরপর প্রতিবেদন দেবে। আদালত আরও জানিয়েছে, মিয়ানমারের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর গাম্বিয়া মন্তব্য করতে পারবে। যা আদালতে বিবেচ্য হবে।