ছবি: এভাবেই পলিথিনের ঘর তৈরী করে দীর্ঘ ৯০ বছরের দখলীয় জমিটি বেদখল করার চেষ্ঠা করছেন একটি ভূমিদস্যুচক্র।

মো: ছফওয়ানুল করিম :

দীর্ঘ ৯০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে একটি জমির মালিকনা হাত বদল হয়ে সর্বশেষ ৪০ বছর ধরে একটি পক্ষ নিজেরা শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে আছেন এমতাবস্থায় হঠাৎ করে ৯০ বছর পর এক ব্যক্তি ওই জমির মালিকনা দাবি নিয়ে হাজির হলেন! শুধু তাই নয়, তিনি স্থানীয় একটি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী গ্রুপকে দিয়ে রাতের আঁধারে জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলেও জানা গেছে।

আজ (২২ জানুয়ারী) ওই দাবিদার জমিতে পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরীর চেষ্ঠা করলে পেকুয়া থানা পুলিশ খবর পেয়ে তা পন্ড করে দেয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানায় পুলিশ।

জানাযায়, অদ্ভুত এ ঘটনাটি ঘটে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিলখালী ইউনিয়নের চড়াপাড়া স্টেশন এলাকায়। স্থানীয় লোকজন ও ভোক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, উক্ত এলাকার ৪ একর ২০ শতক জমির মূল মালিক ছিলেন আজিম উদ্দিন। ১৯২৮ সালে ওই জমি তিনি স্থানীয় জনৈক তমিম গুলাল নামের এক ব্যক্তিকে ১০ বছর মেয়াদী ‘কট বন্ধক’ দেয়। (স্থানীয়দের মতে বন্ধকের টাকা ফেরত দিতে না পারলে জমির মালিকনা হারাবে শর্তে জমি বন্ধক দেয়াকে ‘কট বন্ধক’ বলে)। পরে নিজের জমি নিস্কন্টক করার জন্য উক্ত তমিম গুলাল ১৯৪১ সালে জমিটি মূল মালিক আজিম উদ্দিনের কাছ থেকে ক্রয় করে দলিলমূলে মালিক হন। এরপর থেকে তার নামে এম আর আর ও বিএস রেকর্ডে চুড়ান্ত মালিকনা প্রচার আছে। এবং এর পর থেকে আরো ৪০ বছর জমিটি তাদের দখলে থাকে। এরমধ্যে মালিক তমিম গুলাল মারা গেলে তার ওয়ারিশদের কাছ থেকে ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দলিলে জমিটি খরিদ করেন স্থানীয় হাজি ওবায়দুল হাকিম। আরো দীর্ঘ ২৩ বছর জমিটি শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে ছিলেন ওবায়দুল হাকিম গং। ইতিমধ্যে ওবায়দুল হাকিম মারা গেলে জমিটি তার ওয়ারিশদের মাঝে ভাগবন্ঠনও হয়ে যায়।

জমির মালিকদের একজন আবুল হোছাইন। তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ৯০ বছর পর তাদের মালিকনাধীন উক্ত জমির মালিকনা দাবি করে হঠাৎ হাজির হন এক ব্যক্তি। এতে তারা কিছুটা বিষ্মিত কেননা দীর্ঘ ৯০ বছর ওই মালিকরা কোথায় ছিলেন তা তাদের বোধগম্য নয় বলে জানান। তিনি বলেন, গতকাল (২২ জানুয়ারী) মলিক দাবিদার জনৈক নাদের হোসেন নামের এক ব্যক্তির নের্তৃত্বে একদল ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী তাদের জমিতে পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরী করার সময় পুলিশী বাঁধায় তা পন্ড হয়ে যায়।

সদরের চড়াপাড়া এলাকার মৃত আবদুল জলিলের পুত্র নাদের হোসেন নামের ওই ব্যক্তির দাবি, জমির মূল মালিক আজিম উদ্দিনের কাছ থেকে জনৈক তমিম গুলাল যে দলিলে জমিটি খরিদ করেছিল সেটি সম্পূর্ণ ‘ভূঁয়া ’। আর তিনি আজিম উদ্দিন অলি ওয়ারিশ হিসেবে জমিটির মালিক তিনি এবং তার আত্মীয় স্বজনরা। তবে দলিলটি কি মূলে ‘ভূঁয়া’ সেটির কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

এদিকে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে দখলে থাকা জমির মলিক আবুল হোছাইন জানান, নাদের হোসেন গং মূলত জমির কোন মালিক নন। তাদের মালিকনার বৈধ কোন কাগজপত্র থাকলে তারা রাতের আঁধারে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জমি দখলের পাঁয়তারা না করে আদালতের আশ্রয় নিতেন। এতেই বুঝা যায়, তারা শুধুমাত্র ‘পেশী শক্তি’ ব্যবহার করে অবৈধভাবে জমিটি দখলে নিয়ে লুঠপাট করে খেতে চায়। তিনি এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম বলেন, “জায়গা জমির বিষয়গুলো কাগজপত্র ও আইন আদালতের বিষয়। এগুলো আমাদের দেখার বিষয় নয় তবে জমি নিয়ে কেউ যাথে স্থানীয় আইন-শৃংখলা বিঘœ ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে” বলে তিনি জানান।