ইমরান হোসাইন, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার পাহাড়ি ইউনিয়ন সুরাজপুর-মানিকপুর। এই ইউনিয়নের সুরাজপুর ও মানিকপুর এলাকাকে বিভক্ত করেছে মাতামুহুরী নদী। এ দু’এলাকার মানুষ একপাড় থেকে অন্যপাড়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সেতু ব্যবহার করেন। কাঠের এ সেতুটি পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইউপি কার্যালয়ে যেতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, এই ইউনিয়নে বসবাস করেন অন্তত ২০ হাজার মানুষ। সুরাজপুর এলাকায় রয়েছে ভিলেজার পাড়া, মগপাড়া বিল, পাহাড়তলী, নোয়াপাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, দক্ষিণ সুরাজপুর, উত্তর সুরাজপুর, মধ্যম সুরাজপুর ও শান্তিপুর গ্রাম। মানিকপুর এলাকায় রয়েছে রাখাইন পাড়া, বড়–য়া পাড়া, সিকদার পাড়া, চৌধুরী পাড়া, মিয়াজি পাড়া, হিন্দু পাড়া ও হুমায়ন কবির চৌধুরী পাড়া গ্রাম। এসব পাড়ার বাসিন্দারা নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সেতুটি এক পাড় থেকে অন্যপাড়ে যেতে সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে সড়ক পথেও এসব এলাকায় যাওয়া যায়।

ইউপি কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে মাতামুহুরী নদীতে দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। চৈত্র মাসের ১ তারিখ সেটি ইজারা দেওয়া হয়। চলতি মৌসুমে ৫৫ হাজার টাকায় রবিউল হাসান নামের এক ব্যক্তি কাঠের সেতুটির ইজারা নেন। বর্ষার সময় কাঠের সেতুটি মাতামুহুরী নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায়। এ কারণে প্রতি বছর কাঠ দিয়ে সেতু বানাতে হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, মানিকপুর বাজার এলাকায় মাতামুহুরী নদীটি ৬০০ ফুট প্রস্থ। এই নদীর ৩০০ ফুট মতো জায়গায় চর জেগেছে। বাকি ৩০০ ফুট জায়গায় মাতামুহুরী নদীর উপর চার ফুট প্রস্তের একটি কাঠের সেতু বানানো হয়েছে। এই সেতু দিয়ে মানিকপুর ও সুরাজপুর এলাকার বাসিন্দারা পারাপার হচ্ছেন। প্রতিজন পার হতে গুনতে হয় পাঁচ টাকা। মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল পার করাতে হলে ১০টাকা করে দিতে হয়। এই কাঠের সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন চলছে না। পায়ে হেটে সেতু পার হতে গিয়ে শিক্ষার্থী, শিশু ও রোগীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

সুরাজপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সুরাজপুরের নয়টি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়নের একমাত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হয় কাঠের সেতুটি পার হয়ে মানিকপুর এলাকায়। এসব গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও মানিকপুর বাজার, কমিউনিটি ক্লিনিক, মানিকপুর দাখিল মাদ্রাসা ও মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। এছাড়া মানিকপুরের কৃষিজমিতে উৎপাদিত শস্য সুরাজপুর আনতে পাড়ি দিতে হয় ১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত সড়কপথ। কাঠের সেতুর জায়গায় একটি পাকা সেতু হলে মানিকপুরের সাথে সুরাজপুরের যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে।

মানিকপুরের বাসিন্দা হামিদ হোছাইন বলেন, ‘মানিকপুরের সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ অন্যত্র যেতে হলে কাঠের সেতুটি পার হতে হয়। এতে মানুষ ভোগান্তি যেমন পোহাচ্ছে, তেমনি অতিরিক্ত সময়ব্যয়ও হচ্ছে। তাই কাঠের সেতুর স্থলে একটি পাকা সেতু তৈরি মানিকপুরবাসীর প্রাণের দাবী।’

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, ‘একটি পাকা সেতুর অভাবে ভুগছে সুরাজপুর ও মানিকপুর এলাকার হাজারো মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে কাঠের সেতু তৈরি করা হয় আর বর্ষায় সেই সেতু পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায়। বর্ষার সময় কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার বন্ধ থাকায় ১০ কিলোমিটার দূরের পথ ব্যবহার করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। এভাবে চলছে সুরাজপুর ও মানিকপুর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা।’

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে ‘লং ব্রীজ’ প্রকল্পের আওতায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মানিকপুর এলাকায় মাতামুহুরী নদীর ওপর ১৯০ মিটার লম্বা একটি পাকা সেতু চাওয়া হয়েছে। এব্যাপারে প্রয়োজনে লং ব্রীজ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের (পিডি) সঙ্গে আবার কথা বলবো।’

চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ জাফর আলম বলেন, ‘মানিকপুর বাজার সংলগ্ন মাতামুহুরী নদীতে একটি পাকা সেতু খুব প্রয়োজন। এ জন্য আমি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরপরই পাকা সেতু নির্মাণের জন্য চাহিদাপত্র (ডিও) দিয়েছিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’