সিবিএন ডেস্ক:

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ৮৮ কোটি ডলারের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) ভাসানচর ও প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশে জাতিসংঘ কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সে বিষয়েরও উল্লেখ থাকছে এবারের জেআরপিতে। তবে সরকার বলছে, এ তিনটি বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া জেআরপির একাধিক জায়গায় ব্যবহৃত ‘রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু’ শব্দটিতে আপত্তি তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গত মাসের শেষ দিকে জেআরপিতে কী কী বিষয় থাকছে তা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেয় জাতিসংঘ। ওই প্রেজেন্টেশনে ভাসানচর, প্রত্যাবাসন ও রাখাইনে তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ওই বৈঠকে বিষয়গুলোকে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে জেআরপিতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানাই।’ উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের ওই বৈঠকে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ভাসানচরের বিষয়টি জেআরপিতে পরিষ্কারভাবে না থাকার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জেআরপি পর্যালোচনা করে কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত এবং কয়েকটি বিষয় বাদ দেওয়ার জন্য তাদের জানাবো।’ কী কী বিষয় বাদ দিতে বলা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা কয়েকটি জায়গায় ‘রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। এটি আমরা তাদের বাদ দিতে বলবো।’’ আশা করা হচ্ছে, আগামী মার্চে জেনেভায় ২০২০ সালের জন্য জেআরপি ঘোষণার মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ শুরু হবে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে পর্যালোচনার জন্য জেআরপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছে।

ভাসানচর

ভাসানচরের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আবাসস্থল তৈরি করেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের সরাসরি আপত্তি না থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। আমরা চাই তারা এ বিষয়ে সরকারকে সহায়তা করুক।’

জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম ভাসানচর পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেওয়ার কথা এবং সেটির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এক লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারবে এমনভাবে ভাসানচরের আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানে স্বেচ্ছায় যারা যেতে চাইবে শুধু তাদের পাঠানো হবে।’

প্রত্যাবাসন

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার এবং এ লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। এ বিষয়ে সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের জেআরপিতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল না। এবারে আমরা এ বিষয়টি জোর দিয়েছি এবং জাতিসংঘকে বলেছি এবারের জেআরপিতে এটি যেন বেশি আকারে ফোকাস পায়।’

প্রত্যাবাসনকে জাতিসংঘও গুরুত্ব দেয়, কিন্তু জেআরপি একটি মানবিক সহায়তার আহ্বানের কারণে তারা এ বিষয়টি এখানে বেশি গুরুত্ব দিতে চায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন ও মানবিক সহায়তা একসঙ্গে যেন বিবেচনা করা হয় এজন্য সরকার জেআরপিতে এর উল্লেখ চায়।’

রাখাইনে জাতিসংঘের কার্যক্রম

জাতিসংঘ কক্সবাজারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার বিস্তারিত বর্ণনা দিলেও রাখাইনে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে চায় না। কিন্তু এবারের জেআরপিতে সেটির উল্লেখ থাকছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাখাইনে তাদের কার্যক্রম আছে কিনা, যদি থাকে তবে সেটির বর্তমান অবস্থা কী, রাখাইনে কাজ করার জন্য জাতিসংঘের চ্যালেঞ্জ কী কী, এসবসহ অন্যান্য বিষয়গুলো জেআরপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি আমরা।’

রাখাইনে কাজ করার জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, জাতিসংঘ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি আছে। কিন্তু রাখাইনের মাঠ পর্যায়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করার কারণে মিয়ানমার সরকার তাদের কাজ করতে দিচ্ছে না।

পরবর্তী কর্মপন্থা

বাংলাদেশ জেআরপিতে যে যে বিষয় পরিষ্কারভাবে দেখতে চায় সেটির উল্লেখ থাকলে জেনেভাতে তহবিল সংগ্রহের জন্য সহায়তা করবে সরকার। এ বিষয়ে সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে জেআরপি ঘোষণার সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করেছিলেন এবং এবারও সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি জেনেভায় যাবেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে ৯৫ কোটি ডলারের এবং ২০১৯ সালে ৯২ কোটি ডলারের জেআরপি ঘোষণা করা হলেও যথাক্রমে ৬৯ শতাংশ ও ৬৭ শতাংশ তহবিল সংগ্রহ সম্ভব হয়। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী এবারের জেআরপি আগের দুই বছরের থেকে কম হবে। জাতিসংঘের নিয়ম হচ্ছে যত সময় অতিবাহিত হবে সহায়তার পরিমাণ তত কমতে থাকবে।