মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:
শত বাধা পেরিয়ে প্রথম বারের মত পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দুই খুমি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী উচ্চাশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোয়ান্টামম কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায় তারা। যা এ সম্প্রদায় থেকে প্রথম। তাই উচ্ছ্বাসিত এ জনগোষ্ঠীর মানুষ। ভবিষ্যতে নিজের পরিবার ও সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দেশের জন্য কাজ করতে চান এ দুই শিক্ষার্থী।

সুইতং খুমী। বাড়ী জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাচা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি মংয়উ পাড়ায়। ছোট বেলায় হারান বাবাকে। মা ও দুই ভাইবোনকে নিয়ে অনেক কষ্টে চলছে পড়াশোনা। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের বদিছড়াস্থ কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। আবার এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যে তিনি ভর্তি হন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইনে। শিক্ষার্থী সুইতং খুমী বলেন, খুমি সম্প্রদায়ের মাঝে আমি একজন বাংলাদেশের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে খুবই আনন্দিত। ভাইয়ের এমন সাফল্যে আনন্দিত তাঁর ছোট বোন তং সুই খুমী। লামার কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পড়ে আমার ছেলে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। যা খুমী গোষ্ঠীতে প্রথম। এতে খুশি হওয়ার পাশাপাশি কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজের সকল শিক্ষকসহ কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সুইতং খুমীর মা লিংসাই খুমী। এদিকে সুইতং খুমীর মতো একই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে সিলেট শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিদ্যায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পান অংহো খুমী। বাড়ী জেলার থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি কামশিং পাড়ায়। তিনি কোয়ান্টামম কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে বলেন, এ অর্জন দেখে আমাদের ছোট ভাই-বোনের অনুপ্রেরণা পাবেন।

দুই খুমি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে কোয়ান্টাম কসমো কলেজের ইনচার্জ ছালেহ আহম্মদ বলেন, এরা দু জনেই শিশু কালেই কোয়ান্টাম স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়। কোয়ান্টামম কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্বাবধানে তাদের গড়ে তোলা হয়। গেল এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করে ২০১৯-২০ সেশনে বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় দুই কোয়ান্টা। তিনি আরো বলেন, মেধা কোন বিশেষ জাতি বা ধর্মের বা বর্ণের উপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করের ইচ্ছা শক্তি আর কঠোর পরিশ্রমে।

শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তাদের এ সাফল্যে যেমন খুশি এ জনগোষ্ঠী ও তাদের শিক্ষকরা। তেমনি শংকা পড়লেখায় তাদের ব্যয়ভার নিয়েও। এ বিষয়ে সমাজ সেবক ও লেখক লেলুং খুমী সাংবাদিকদের বলেন, আমি জানি না তাঁরা কিভাবে তাঁদের পড়াশোনার খরচ চালাবে, কারণ তাঁরা খুবই গরীব পরিবারের সন্তান।