সিবিএন ডেস্ক:

আয়েশা সিদ্দিকা শেলী ও আসমা সিদ্দিকা মিলি। যমজ দুই বোন। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তাদের পৃথিবীতে আগমন। নয় ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম আয়েশা, তারপর আসমা। একসঙ্গে যেমন তারা পৃথিবীতে এসেছেন, তেমন সফলতায়ও দুই বোন রয়েছেন প্রায় সমপর্যায়ে। বর্তমানে আয়েশা সিদ্দিকা শেলী ঢাকা কর অঞ্চল ১১ পরিদর্শী রেঞ্জ-২-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম, পিপিএম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডেপুটি পুলিশ কমিশনার পদে কর্মরত।

মাগুরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে দুই বোনই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আয়েশা সিদ্দিকা লোকপ্রশাসন এবং আসমা সিদ্দিকা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পড়াশোনা শেষে আয়েশা ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী কর কমিশনার পদে নিয়োগ পান। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ডেপুটি কমিশনার এবং তারপর এক বছর যুগ্ম কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম ও কল্যাণ শাখার কূটনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেছেন। দেশে এসে দুই মাস ট্যাক্স একাডেমির যুগ্ম পরিচালক, তারপর থেকে অতিরিক্ত কর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় রয়েছেন। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুর, ঢাকা অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ঢাবির পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাসোসিয়েশন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি এবং মাগুরা জেলা সমিতির সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের ২০১৪-১৬ মেয়াদের নির্বাহী সদস্য এবং ঢাকার অ্যারোমা রোটারি ক্লাবের আসন্ন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া স্তন ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সহযোগিতা এবং তাদের অনুপ্রাণিত করতে প্রতিষ্ঠা করেন দ্য ব্লু স্কাই চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন। ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পর্ষদের ২০২০-২১ মেয়াদের নির্বাচনে মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আয়েশা সিদ্দিকা শেলী।

অন্যদিকে আসমা সিদ্দিকা মিলি পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে পেশাজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৫ সালে ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। তিনি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), রাজবাড়ির পুলিশ সুপার ও দীর্ঘদিন এমিগ্রেশন নিয়ে কাজ করেছেন। সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পেয়েছেন। পেশাজীবনের পাশাপাশি ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের গত ২০১৮-১৯ নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ২০২০ সালে নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাবা জেলা রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ায় ভাই-বোন সবারই ঝোঁক ছিল সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার। হয়েছেনও তাই। এ বিষয়ে আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আসলে পরিবারের সুবাদে আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের পরিমণ্ডলে বড় হয়েছি। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মাগুরায়ই ছিলাম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। এ আয়কর ক্যাডারেই একসময় আমার মামা, ভাই ও দুলাভাই ছিলেন। সব মিলিয়ে ভালো একটা পরিবেশের মধ্যে আমরা বেড়ে উঠেছিলাম। আর শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনেও তেমন কোনো বাধা অনুভব করিনি। মেয়ে হিসেবে অনেকেই নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়। আমি বা আমাদের ক্ষেত্রে তেমন কিছু ছিল না। তার পরও ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষেই কিছু বাধা তো থেকেই যায়। সেগুলো জয় করেই এ পর্যায়ে আসা।

চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বড় বোন আইরিন পারভিন বাঁধন ছিলেন ১১তম বিসিএস ক্যাডারের। তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং নব্বই দশকের ছাত্রলীগের ডাকসু নির্বাচনে শামসুন্নাহার হলের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ২০১৬ সালে অদম্য মেধাবী আইরিন পারভিনকে স্তন ক্যান্সারের কারণে হারিয়েছি। এ রোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ওই বছরের ২৬ মে দ্য ব্লু স্কাই চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে আমরা স্তন ক্যান্সার মুভমেন্ট পরিচালনা করছি। সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে এ রোগে মৃত্যুর হার কমছে না। সবাই যেন স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে পারে, বুঝতে পারে, আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে এবং সচেতনতা ও স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকি। আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা, যেখানে শুধু স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা চিকিত্সা সেবা পাবেন।