এম.মনছুর আলম, চকরিয়া
“রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলি অটিজম শিশুদের স্কুলে ভর্তি করি” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কক্সবাজারের চকরিয়ায় অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজএ্যাবিলিটিজ (এনডিটি) বিষয়ক দিনব্যাপী উপজেলা পর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুম মিলনায়তনে মাধমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এন্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজএ্যাবিলিজ (NAAND) এর আয়োজনে এ ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার রতন বিশ্বাসের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠিত অটিজম ওয়ার্কসপে প্রাবন্ধিক বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখেন, সংগীত কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড.আলিয়া পারভীন, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প: প: কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ শাহবাজ ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা হামিদুল্লাহ মিয়া।
উক্ত ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তা, সাংবাদিক, স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ। শেষে ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অটিজম বিষয়ে বিভিন্ন মতামত গ্রহণ করা হয়।
অটিজমের দিনব্যাপী ওয়ার্কসপে বক্তারা বলেন, অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশগত সমস্যা। যেটা একটি শিশুর তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অটিস্টিক হবার সম্ভাবনা বেশি বলে তাদের অভিমত। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বয়সের তুলনায় পিছিয়ে থাকে। একই ধরনের আচার-আচরণ তারা বারবার করে। অটিজমের অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে বংশগত সমস্যা। তারা আরো জানান, অটিজম চিকিৎসায় ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। তবে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই আলাদা হওয়ায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি একজনের চেয়ে আরেক জনেরটা আলাদা। যত আগে অটিজমের বিষয়টা উপলব্ধি করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই উন্নতি করে। এমনকি অনেকে সাধারণ স্কুলে যাওয়ার মতোও হয়ে ওঠে। অটিজম আক্রান্তদের অধিকার না দেয়ার অর্থ মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারাও মেধাবী। তাদের মেধা ও শ্রমকে সব কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মূলত এই সব বিষয় নজরে রেখে অটিজম শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অটিজমে আক্রান্তদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সেলিং ও অন্যান্য সেবা এবং সহায়ক উপকরণ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ ১৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করে অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যাজনিত শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে অটিজম আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের কাউন্সিলিং ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার জন্য মা-বাবার পরে হচ্ছেন শিক্ষক। ওয়ার্কসপে উপস্থিত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে এ অটিজম বিষয়ে সচেনতন হওয়ার আহ্বান জানান।