মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মো. আবদুল মান্নান। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বে আছেন। গত শুক্রবার ১০ জানুয়ারি এসেছেন কক্সবাজার সফরে। এসেই যোগ দিয়েছিলেন শুক্রবার ১০ জানুয়ারি বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর ক্ষণগণনার বর্ণাঢ্য জমকালো অনুষ্ঠানে। পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ করে অনুষ্ঠানটিকে মর্যাদাবান করে তুলেছেন। রূপ দিয়েছেন ভিন্ন মাত্রায়।

কক্সবাজার ডিসি কলেজের স্বপ্নদ্রষ্টা কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের অনুরোধে শনিবার ১১ জানুয়ারি সকালে পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার ডিসি কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস (কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে)। সেখানে তাঁকে ফুল দিয়ে উঞ্চ অভ্যর্থনা জানান, কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইব্রাহিম হোসেন। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সাথে ছিলেন কক্সবাজার ডিসি কলেজের রূপকার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব, উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকালীন অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি প্রমুখ।

পরিদর্শনকালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান কক্সবাজার ডিসি কলেজ-এর শিক্ষার্থীদের তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের গল্প শোনান। গল্পতো নয়, যেন স্বপ্নে বুনা রূপকথার জাল।
গল্প শোনাতে গিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় নেতা সৃষ্টির জেলা হিসাবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার চান্দপুর গ্রামে ১৯৬২ সালের ১৫ নভেম্বর এই মেধাবী মানুষটির জন্ম। তাঁর গর্বিত পিতা ছিলেন-আলহাজ্ব মো. ছিদ্দিক হোসেন, মাতা ছিলেন-মরহুমা আয়েশা খাতুন। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে আজকের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এইচএসসি পাশ করেছেন কৃতিত্বের সাথে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন সফলতার সাথে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন কোর্স করে নিজের একাডেমিক ক্যারিয়ারকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। একজন সফল সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, কলাম লেখক, কথাশিল্পী মো. আবদুল মান্নান দেশের সবচেয়ে বুনিয়াদি ও সিদ্ধান্তগ্রহনকারী ক্যাডার হিসাবে পরিচিত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে ৮ম ব্যাচের পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন গর্বিত সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সরকারি চাকুরি জীবনের শুরুতে তিনি সহকারী কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও পরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাঠ প্রশাসনে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ নেই এই দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তা চাকুরী করেননি। সচিবালয়ে গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে ছিলেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিক্ষা ও রাজনৈতিক উপদেষ্টার একান্ত সচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব ও অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। সেখান থেকেই সর্বশেষ পদায়ন হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে। সেরা বিভাগ হিসাবে ‘তথ্য অধিকার পদক-২০১৯’ পেয়েছেন। রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন ও ব্যবস্থাপনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে গঠিত জাতীয় পর্যায়ের কমিটি “জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ” এর ডিপুটি টিম লিডার হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন গত ২ বছর ধরে। এই সফল উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁর জীবনসঙ্গিনী হিসাবে বেচে নিয়েছেন, কামরুন নাহার কে। মো. আবদুল মান্নান ও কামরুন নাহার দম্পতি ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী। তাঁদের প্রথম কন্যা ডা. যারিন তাসনিম, প্রথম পুত্র ডা. ইমতিয়াজ আবদুলল্লাহ। ২ জনই পেশাদার চিকিৎসক। কনিষ্ঠ সন্তান ইশতিয়াক জবিউল্লাহ দেশের বিখ্যাত উচ্চতর বিদ্যাপীঠ নটরডেম কলেজে অধ্যায়নরত।
মো. আবদুল মান্নান শুধু সফল কর্মকর্তা নন। একজন সুলেখক, কথা সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, গল্পকার হিসাবেও খ্যাতি রয়েছে তাঁর। লিখেছেন ‘অন্তরালে দৃশ্যপট’, ‘সক্রেটিসের জল্লাদ’, ‘অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া’, ‘দুইবর্ণ’ ইত্যাদি গ্রন্থ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বের করেছেন ‘সরোদ’ আর চট্টগ্রামে বের করেছেন ‘সাম্পান’ নামক সাময়িকী। বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় মো. আবদুল মান্নানের কলাম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। বিটিভি ও প্রাইভেট চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে অনেক নাটক। দেশ বিদেশে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অনেক।
মো. আবদুল মান্নানের এসব জীবনকাহিনী বলার সময় ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভোর স্বপ্নে ভাসছিলেন। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান সংক্ষেপে যখন তাঁর জীবনগল্প বলছিলেন, তখন তারা ভাবছিলেন, এগুলো কি নিছক গল্প, নাকি বাস্তবতা। কারণ সবক্ষেত্রেই অবিশ্বাস্য সফলতা। জীবনের জয়গান গাইতে থাকাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ভাবছিলেন, একটা মানুষের জীবনে আর কতো সফলতা আসতে পারে। প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীই এসময় অবাক বিস্ময়ে সফলাতায় পরিপূর্ণ বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের দিকে থাকিয়েছিলেন। কোন টু শব্দ নেই। তাঁর জীবনের এই গল্প শোনে ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখেন। দেশপ্রেম ও জ্ঞান অর্জনের পিপাসায় উদ্বুদ্ধ হন।

বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান যে কত সুলেখক, তা-কক্সবাজার ডিসি কলেজ পরিদর্শন বইতে তাঁর লেখনিতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। পরিদর্শন বইতে তিনি যা লিখেছেন তা নিন্মে হুবহু তুলে ধরা হলো :
“কক্সবাজার ডিসি কলেজের যাত্রাকাল দেখলাম। শুরুটা এমনই হয়। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ভাল উদ্যোগ অনেকটা আকস্মিকভাবেই হয়ে থাকে। অসাধারণ মুগ্ধতা, চমৎকার অনুভূতি মনে হয়। আজকের সকালটা আমার জীবনের সেরা সকালের একটি। ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকার আন্তরিক উপস্থিতি ও প্রছন্ন অঙ্গীকার আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসছে।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এবং তার সহযোগী সহকর্মীদের এমন প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।
প্রতিষ্ঠানটি ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই বেঁচে থাকবে অনাগতকাল। কল্যাণ ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশা থাকলো। ধন্যবাদ, মো. আবদুল মান্নান, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম। ২৭ পৌষ,১৪২৬ বঙ্গাব্দ, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ খ্রি।”