অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন:
আঞ্চলিক গানের সৃস্টি কখন ঠিক নির্দ্দিস্ট করে বলা যায়না।ওরে সা্ম্পান ওয়ালা, ও শ্যাম রেঙ্গুন ন যাইও এমন জীবন ঘনিষ্ট গান মুখে মুখে ফেরে চট্টগ্রামের মানুষের। এই গান যেমন তাদের মনের কথা বলে তেমনি কথায় সুরে উঠে আসে জীবন সংস্কৃতিও।শত শত বছর ধরে তাই চাটগাইয়া গান মানেই নিটোল বিনোদনের খোরাক, যার সুর ছড়িয়েছে ভীন দেশেও।কালের স্রোতে এই আঞলিক গানের সংখ্যা কমলেও কমেনি তার কদর।তাইতো এই তিনকোটি মানুষের প্রানের গান এই আঞ্চলিক গান।আঞ্চলিক গান প্রানের গান জীবনের গান। বলা হয়ে থাকে দেশে যে কটি ধারার লোকগান সবচেয়ে জনপ্রিয় তার একটি চট্গ্রামের আঞ্চলিক গান।চট্টগ্রামের মুখের ভাষায় রচিত বলে এটি চাটগাইয়া গান বলে পরিচিত।চট্টগ্রাম অঞ্চলে অন্তত তিনকোটি মানুষ কথা বলে আঞ্চলিক ভাষায়।তাই তাদের সুখ দু:খ হাসি কান্না প্রেম বিরহ, জীবন বোধ সবকিছু বিমুর্ত এই গানে।তার শুরুটাও কয়েকশ বছর আগে। তবে এটা ঠিক বাংলা গানের সমান বয়েসী হতে পারে আঞ্চলিক গান।মধ্যযুগে আঞ্চলিক গান দ্রুত বিকশিতহয়েছে।বিশেষ করে মধ্যযুগের যে পুথি যেমন কবি আলাউলের পদ্মাবতি সৈয়দ সুলতানের জ্ঞান চুতিষা এই রকম কাব্য গুলি আঞ্চলিক গান বিকাশে যথেস্ট ভুমিকা রেখেছে।কানু শাহ আসগল আলী পন্ডিত , রমেশ শীল, মলয় ঘোষদস্তীদার, মোহাম্মদ নাসিমদের হাত ধরে যে গানের শুরু আবদুল গফুর হালি এম এন আখতারদের প্রচেস্টায় তার প্রচার এখন বহুদুর।আঞ্চলিক গান চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে মন মাতিয়েছে।মোহাম্মদ নাসিরের মাধ্যমে আঞ্চলিক গানের বিশ্বায়নটা হয়েছে,যেমন “চানমুখে মধুর হাসি দেবাইল্লা বানাইল মোরে সাম্পানের মাঝি”।পরবর্তীতে সত্তুরের দশকে মলয় ঘোষ দস্তীদার, মোহনলাল দাস,অচিন্তকুমার চত্রুবর্তী আঞ্চলিক গান প্রসারে একটা বড় ভুমিকা রেখেছেন।অচিন্ত কুমারের সূর্য উড়েল্লে ভাই লাল মারি খুবই জনপ্রিয় গান। মোহনলাল দাসের ওরে সাম্পান্ওয়ালা তুই আমারে করলি দেওয়ানা , মলয় ঘোষ দস্তিদারের চোড় চোড় ঢেউ তুলি পানিত এই গুলি খুবই জনপ্রিয় গান। সত্তুরের দশকে মাঝামাঝি এসে আঞ্চলিক গানে একটা পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এম এন আখতার এবং আবদুল গফুর হালি।সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আঞ্চলিক গানকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্টিত করার জন্য শেফালিঘোষ শ্যামসুন্দর জুটির অবদান সবচেয়ে বেশী।চট্টগ্রামের এই আঞ্চলিক গান যুগে যুগে তৈরী করেছে শ্যামসুন্দর বৈষনব, শেফালি ঘোষ, কল্যানী ঘোষ,সিরাজুল ইসলাম আজাদ,সনজীত আচার্য্যর মতো সঙ্গীত শিল্পী।যারা এই গান দিয়েই হয়ে উঠেছেন গন মানুষের প্রানের মানুষ।এর মধ্যেই এই শ্যাম শেফালি ছিলেনি এই আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তী।তবে হতাশাও আছে এই আঞ্চলিক গানকে ঘিরে । কারন দিনে দিনে কমছে আঞ্চলিক গানের সংখ্যা।কমছে শিল্পীও।বিশেষ করে গেল শতাদ্বীর শেষ দিক থেকে জৌলুষে কিছু ভাটা পড়েছে এই আঞ্চলিক গানে।আগেকার দিনে শ্যামসুন্দর বৈষনব শেফালি যেভাবে গানগুলিকে দর্শকদের কাছে প্রানবন্ত করে তোলেছিলেন ,সেভাবে আমরা কিন্তু গানগুলিকে তুলে ধরতে পারছিনা।এখন শব্দযন্ত্রের আধুনিকতা হয়তো আছে,কিন্তু গানের শ্রুতি বা আকর্ষন আগের মতো নেই।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সঠিক সংখ্যা কতো জানা না গেলেও গবেষকদের মতে তা দশহাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশ্বাস।তার অনেকগুলোই সংরক্ষন হয়নি।