আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ইরান দুই দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এখন গোটা বিশ্বের আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির সামরিক সক্ষমতা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ বা পরিসীমা নিয়ে রীতিমত হিসাব কষতে হচ্ছে আশপাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোকে। কারণ তেহরান হুমকি দিয়ে বলেছে, তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী আক্রমণের কোনো চেষ্টা করলে যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে যাবে এবং আক্রমণ হবে মার্কিন মূল ভূখণ্ডেও।

এই অবস্থায় বিবিসি-আল জাজিরাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ইরানের সামরিক সক্ষমতার ওপর অনুমান-নির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইরানের যে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তার আওতা এলাকারও একটি চিত্র তুলে ধরেছে তারা।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার যে ধারণা আছে, তা অনুসারে এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে আঘাত করতে সক্ষম।

যেমন, শাহাব-১ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করতে পারবে ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে। শাহাব-২ এর আঘাত করার পরিসীমা ৫০০ কিলোমিটার। ক্বিয়াম-১ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করতে পারবে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে উড়ে গিয়ে। ফতেহ-১১০ এর পরিসীমা ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। জুলফাগার আঘাত করতে পারবে ৭০০ কিলোমিটারের মধ্যে। আর সবচেয়ে বেশি পরিসীমার ক্ষেপণাস্ত্র শাহাব-৩ আঘাত করতে পারবে ২০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও।

ইরান থেকে তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ইসরায়েলের দূরত্ব ১৭০০ কিলোমিটারের মতো। সে হিসাবে বলাই যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সবচেয়ে বড় মিত্র ইসরায়েলের গোটা এলাকায় শাহাব-৩ এর আওতায়ই রয়েছে।

এছাড়া এই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে সক্ষম আফগানিস্তান, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ইরাক, মিশর, তুরস্ক এবং ইউরোপের রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও গ্রিসের মতো দেশে। এই দেশগুলোর মধ্যে মিশর ছাড়া সবদেশেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি বা উপস্থিতি রয়েছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নির্মাণ ও পরিচালনার ভার কেবল ইরানের বিপ্লবী গার্ডের হাতে। আর এই অভিজাত বাহিনী জবাবদিহি করে কেবল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর কাছে।

মার্কিন গোয়েন্দারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসর ২০০০ কিলোমিটার বললেও বুধবারই তেহরান হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার জবাব দেয় তবে সরাসরি মার্কিন ভূখণ্ডে হামলা চালানো হবে।

ক্ষেপণাস্ত্রের বাইরে সৈন্যসংখ্যা বিবেচনায়ও শীর্ষস্থানীয় সশস্ত্র বাহিনীর তালিকায় রয়েছে ইরান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মতে, প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার সক্রিয় সদস্য আছে ইরানের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার নিয়মিত আর বাকি কমপক্ষে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার বিপ্লবী গার্ডে।

মার্কিন বাহিনী ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একপাক্ষিক হামলা চালিয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর থেকে তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। সেই উত্তেজনার জেরেই বুধবার ভোরে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা দু’টি হলো।