হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক ফ্রি ডেলিভারী সেবা শুরু হয়েছে। যা উক্ত এলাকার জন্য বিরল ঘটনা। ১৯৬০ সালে সাব-সেন্টার হিসাবে প্রতিষ্টার পর এটাই প্রথম ঘটনা। এই প্রশংসনীয় কাজের উদ্যোক্তা হলেন উক্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আলহাজ¦ ডাঃ আজাদ মোহাম্মমদ নুুরুল হোসাইন প্রকাশ ডাক্তার আজাদ। আর এই মহতী কাজের যাবতীয় সহযোগিতা করছেন এনজিও সংস্থা আরটিএমআই। এমনকি সেবা গ্রহীতাদের সুবিধার্থে হ্নীলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেলিভারি কার্যক্রমের জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে ০১৭৭৫৪৬৮৮৪৯ এবং ০১৮৫৫৮৬২৮৫৯ ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হয়েছে। এ জন্য আরটিএমআই ৪ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। আরও ১জন ডাক্তার নিয়োগ দেবে।
জানা যায়, হ্নীলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারি সেন্টার হিসেবে গত ২৯ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে। এদিন দুপুরে হ্নীলা পশ্চিম সিকদারপাড়া গ্রামের মৌলভী মোহাম্মাদ ইউনুছের স্ত্রী আয়েশা আক্তার (৩৫) নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন। মেডিকেল অফিসার ডাঃ শংকর চন্দ্র দেবনাথের তত্বাবধানে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আলহাজ¦ ডাঃ আজাদ মোহাম্মমদ নুুরুল হোসাইনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিনামূল্যে নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। সহোযোগিতায় ছিলেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) নুসরাত জাহান (খুকি), আরটিএমআই এর মিডওয়াইফ মনি আক্তার (মনি), আয়া হাসিনা বেগম, খুর্শিদা বেগম, নাইট গার্ড শামশুল আলম। এর মধ্যে মিডওয়াইফ মনি আক্তার (মনি) নেত্রকোনার বাসিন্দা এবং অপর ৩ জন স্থানীয়।
মেডিকেল অফিসার ডাঃ শংকর চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে মনোরম পরিবেশে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ডেলিভারি সেন্টারে বিনা মূল্যে সেবা প্রদানের দৃষ্টান্ত বিরল। মহিলারা সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে অনেক শিশু শারিরীক প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলে কোন সমস্যা হয়না’।
সেবাটির উদ্যোক্তা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) আলহাজ¦ ডাঃ আজাদ মোহাম্মমদ নুুরুল হোসাইন বলেন, ‘সেবাটি চালু করার পর প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে গর্ভবর্তী মায়ের চেকআপ, ডেলিভারীসহ স্বাস্থ্য সেবা সেন্টারের পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা, সেবার ধরন এবং চিকিৎসা পদ্ধতির মান সন্তোষজনক। কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়া এখন থেকে এই হাসপাতালে যে কেউ ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসবের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। হ্নীলা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ডেলিভারি কার্যক্রমের জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে ০১৭৭৫৪৬৮৮৪৯ এবং ০১৮৫৫৮৬২৮৫৯ নাম্বার দু’টি ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হয়েছে। গর্ভবতী মহিলাদের নরমাল ডেলিভারির প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আরটিএমআই। এনজিও সংস্থা আরটিএমআই সেবাটি চালু করতে মিডওয়াইফ হিসাবে মনি আক্তার (মনি), আয়া হাসিনা বেগম, খুর্শিদা বেগম, নাইট গার্ড শামশুল আলম নিয়োগ দিয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে একজন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেবে। সেই থেকে প্রতিদিন গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসব করছেন। সন্তান প্রসবকালীন শিশুদের জন্য রয়েছে ছ্যাকনী। রক্তক্ষরনে মাতৃ মৃত্যু প্রতিরোধে মিশোপোষ্টল ট্যাবলেট, আইভি স্যালাইনসহ সন্তান প্রসবের আধুনিক যন্ত্রাংশ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে ফ্লোরম্যাট, নাগরিক সুবিধার সিটিজেন চার্ট রয়েছে। এখানে গর্ভবতী মায়ের চেকআপ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জোরালো ভূমিকা পালন করছে। হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে নতুন এই সেবা চালু করা হয়েছে। নতুন এই সেবা পেয়ে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা অত্যন্ত খুশি। সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার-নার্সরাও। এই সপ্তাহে ১টি ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক ডেলিভারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এমনিতে পলিসিই হলো স্বাভাবিক ডেলিভারিকে উৎসাহিত করা। গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নির্বিচারে সিজারিয়ান অপারেশনের অভিযোগ যখন অধিকাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে জোরালো, ঠিক তখনই এই কেন্দ্রে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির নতুন যুগের সূচনা হয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে। নতুন এই সেবায় ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা এবং রীতিমত স্বাভাবিক গর্ভবতী চেককাপ নিয়মিত হচ্ছে। ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির জন্য বাচ্চা গর্ভধারণের পর থেকে আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা জরুরি। আমরা নিয়মিত চেকআপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গর্ভের বাচ্চার অবস্থান পর্যবেক্ষন করি। যদি সব কিছুু স্বাভাবিক থাকে তাহলে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। অস্বাভাবিক ও জঠিল রুগীদের নিকটস্থ আইওএম হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। হ্নীলা এলাকাটি জনবহুল। প্রসূতীদের যথাসময়ে হাসপাতালে পৌঁছানো কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তা নিরসনে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমনকি দুর্গম এলাকার কোন গরীব প্রসূতী হাসপাতালে আসতে অপারগ হলে গাড়ি পাঠানোরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা সফলকাম হবই’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলহাজ¦ হোছাইন আহমদ বলেন, ‘উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় বিশেষতঃ এলাকার অসহায় গরীব প্রসূতীদের জন্য একটি মাইলফলক। এখানে স্বাস্থ্য সম্মত ও নিরাপদে বিনামুল্যে প্রসব ছিল অকল্পনীয়। আমি উদ্যোক্তা ডাঃ আজাদ, দাতা সংস্থা আরটিএমআই ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে কাজটি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের হলেও তাদের তৎপরতা এবং আগ্রহ তেমন পরিলক্ষিত হচ্ছেনা’।