শাহেদ মিজান, সিবিএন:
অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক। শহরের লালদিঘির এলাকা থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের পুরো অংশ খানাখন্দে সয়লাব হয়ে গেছে। সদ্য হওয়া বৃষ্টি এই সড়কের কপিনে শেষ পেরেক মেরেছে। বৃষ্টির পর পর থেকে পুরো সড়কটি সম্পূর্ণভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে! তবুও জীবনের প্রয়োজনের এই খানাখন্দ মাড়িয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও যাত্রীরা। এতে দুভোর্গের সীমা ছাড়িয়েছে। এই নিয়ে কঠোর সমালোচনা মুখে পড়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। যাত্রীরা চলাফেরায় দুর্ভোগের প্রাক্কালে কউককে প্রকাশ্যে গালি দিচ্ছে!
কউক সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পিত নগরায়নের অংশ হিসেবে কক্সবাজার শহরের ‘হলিডের মোড়-বাজারঘাটা হয়ে লারপাড়া বাসস্ট্যান্ড’ পর্যন্ত প্রধান সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে। শহরের সৌন্দর্য বর্ধন ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২৯৪ কোটি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় সড়কটি চার লেন করার প্রকল্প নিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। গত বছরের ১৬ জুলাই একনেক সভায় প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে প্রকল্পটি। গত ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা বলেছিলেন কউক চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। এমনকি নিকট সময়েও শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, এই সড়কটি দীর্ঘদিন সড়ক বিভাগের অধীনের ছিলো। তারা সড়কটি বহুকাল পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না করলেও মাঝে মাঝে জোড়াতালি দিয়ে চলাচলের কোনো রকম উপযোগী রাখতেন। বেশি ভঙ্গুর হয়ে পড়লে কক্সবাজার পৌরসভাও মাঝে মাঝে সহযোগিতা করতেন। কিন্তু কউক’র অধীনে চলে যাওয়ার পর সড়ক বিভাগ ও পৌরসভা এই সড়কের দিকে আর চেয়েও দেখেনি। বরং আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে তারা নিজেদের দায় গুছিয়ে নিয়েছেন। নিজেরদের অধীন থেকে চলে যাওয়ায় তারা বরং বেশ ক্ষুব্ধতাই প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নিজেরদের অধীনে নিয়ে নেয়ার পর কউক কয়েকবার বড় বড় খান্দখন্দে ইটের খোয়া ফেলেছেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুম বিদায়ের গত চার/পাঁচ মাসেও একটি ইটের খোয়া বা এক মুঠো মাটিও কোথাও দেয়নি কউক। বরং কউক চেয়ারম্যানের দাবি ছিলো ইটের খোয়া ফেলে যে ‘সংস্কার’ করা হয়েছিলো সেখানে যে পরিমাণ টাকা গেছে তার সুফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু এ কারণে প্রল্পের কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো সংস্কার করছে না তাও তারা বলছে না। এতে শহরের প্রধান সড়কটি কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দাবি শহরবাসীর!
বর্ষা পেরিয়ে পর্যটন মৌসুম আসলেও শহরের এই প্রধান সড়কের সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এতে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়ে যায় সড়কটি। ফলে শহরবাসী এবং পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে শিকার হয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের লালদিঘির পাড় এলাকা থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। এর মধ্যে রয়েছে ভংয়কর বিপদসংকুল গর্তও। বার্মিজস্কুল সংলগ্ন স্থান এবং বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পশ্চিম অংশ একেবারে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বার্মিজ স্কুল সংলগ্ন স্থানে কিছুদিন আগে সড়কের কয়েক গজ স্থানের মধ্যখানে সিসি ঢালাই দেয় কউক। কিন্তু এতে বিপর্যয় আরো বেড়েছে। মধ্যখানে ঢালাই দেয়া দু’পাশে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। ওই খাদে পড়ে প্রতিনিয়ত উল্টে যাচ্ছে টমটম। অন্যদিকে ঢালাইয়ের পশ্বিম অংশে সরু না হওয়া যানবাহনগুলো চলাচলে চরম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই স্থানে প্রায় সময় টমটম উল্টে যাওয়া ঘটনা ঘটে আসছে। এতে বহু মানুষ আহতও হয়েছে। এছাড়াও অন্য সব স্থানে যেসব খানাখন্দ রয়েছে তার কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে শহরের সর্বত্র সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্তও লেগে রয়েছে তীব্র যানজট। একদিকে খানাখন্দের গ্লানি, অন্যদিকে যানজটের দুভোর্গ- সব মিলে শহরে চলাচল সম্পূর্ণ রূপে অচল হয়ে পড়েছে। তাই দুর্ভোগের শিকার শহরবাসী প্রতিনিয়ত কক্সবাজার উন্নয়ন কতর্ৃপক্ষকে প্রকাশ্যে গালি-গালাজ করছে।
শহরবাসী বলছেন, শহরের চলাচলের একমাত্র সড়কটি মরে গেছে। কিন্তু কউক পড়ে আছে পুকুর উন্নয়নে। এটাকে অতি ‘আজাইরা’ বলে অবহিত করে মানুষের সাথে কউক তামাশা করছে বলেও দাবি শহরবাসীর। তাই সব কিছু বন্ধ রেখে সড়কের উন্নয়নের আহ্বান তাদের।
শহরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পর্যকেরা কক্সবাজার শহরে ঢুকে মারাত্মকভাবে হতাশ হচ্ছেন। সড়কের এই ভঙ্গুর দশা তাদের ভ্রমণের আনন্দকে ফিকে করে দিচ্ছে। তারা খুব বিরক্ত অনুভব করছে। এই কারণে চরম নেতিবাচক একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে তাদেরকে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার থেকে ফিরতে হচ্ছে। এটা সামগ্রিক পর্যটন শিল্পের উপর বেশ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার শহরবাসী মারাত্মক সময় পার করছে। শহরের সড়কের এমন করুণ দশা আগে কখনো হয়নি। বর্তমানে সড়কের যে অবস্থা তাতে মানুষের চলাচলের উপায়ও নেই। বিভিন্ন লোকজন আমাকে বললেও আমার করার কিছু নেই। এটা কউকের অধীনে রয়েছে। কউক দ্রুত সড়কের উন্নয়ন করে শহরবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিক।
এ ব্যাপারে জানতে সোমববার রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঢাকায় ব্যস্ত ত থাকায় এই বিষয়ে কথা বলেননি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ।