ডেস্ক নিউজ:

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব এবং ইরাকের অনিশ্চিত পরিস্থিতির বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি বাংলাদেশ। স্পষ্ট হয়নি ঢাকার অবস্থান। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পুরো পরিস্থিতির ওপর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিবৃতি দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে সেটি কোনো দেশের পক্ষে নয়, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইরান দ্বন্দ্বে বিশেষ কোনো পক্ষ নেবে না বাংলাদেশ। দুই পক্ষই আমাদের মিত্র। দুদেশের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের বিবাদ নিষ্পত্তিকে সমর্থন করে।’এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশের এ অবস্থান সঠিক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে, সেটাই ঠিক আছে বলে আমি মনে করি।’

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কাজ করেছে তাতে প্রকাশ্যে তাকে সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই। আবার ইরানকে সমর্থন দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট হতে পারে। এছাড়া সৌদি আরবের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কেননা সে দেশে প্রচুর বাংলাদেশি কাজ করে,’ বলেন তিনি।

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইরান দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে কোনো অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে তা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসবে। পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, আমদানি-রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা দেখা দিলে বাংলাদেশের প্রচুর শ্রমিক, যারা দেশগুলোতে কাজ করে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাকি সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যে পরিস্থিতি, তাতে আমার মনে হয় জনমত ইরানের পক্ষে গেছে। এখন ইরান বিষয়টা কীভাবে কাজে লাগায় সেটাই দেখার বিষয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এমন এক অবস্থানে থাকা উচিত, যেখানে কোনো পক্ষ যাতে মনে না করে বাংলাদেশে তার প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়েছে।’

বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ বলেও মনে করেন ঢাবির এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার। কেননা বড় সংখ্যক বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যে থাকে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দ্বন্দ্ব আজকালের নয়। এটি অনেক আগের। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে- কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করার মধ্য দেয় এই শত্রুতা আরও বেড়েছে।

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানিকে ইরাকে হত্যার- পর ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে।

কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ৫২টি স্থাপনা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিশানায়- রয়েছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে ইরান জেনারেল সোলেইমানি হত্যার জবাব- যথাসময়ে, উপযুক্ত পরিবেশে সামরিক উপায়ে দেয়া হবে বলে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন।

ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে ওয়াশিংটন-তেহরানের উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে- বলে আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

তবে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটা এমন একটি মুহূর্ত, যেখানে বিশ্ব নেতাদের সর্বোচ্চ সংযম দেখানো জরুরি। উপসাগরীয় অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধের ভার বহনের সক্ষমতা বিশ্বের নেই।

এদিকে কুদস ফোর্সের প্রধান মার্কিন হামলায় নিহত হওয়ার পর রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির শর্ত না মানার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। একই সঙ্গে, পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ারও অঙ্গীকার করেছে ইরান।