মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি’র বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল ‘অরুণোদয়’ পরিদর্শন কক্সবাজারের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। অরুণোদয় পরিদর্শনকালে স্পীকার মহোদয়ের আন্তরিকতা, আগ্রহ ও দীর্ঘক্ষন সময় দেওয়া, পুরো অরুণোদয় পরিবারকে কৃতজ্ঞতার পরশে আবদ্ধ করছে। একইসাথে ঋনী করেছে অরুণোদয় এর শিক্ষার্থীদের পরিবারকে। যা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও মনোবলকে বৃদ্ধি করেছে। এ পরিদর্শন আমাদের প্রেরণা ও প্রত্যয়ে সমৃদ্ধ করেছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে ব্যাপকভাবে।’

রোববার ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল ‘অরুণোদয়’ পরিদর্শনের পর কেমন অনুভূতি লেগেছে-তার জবাবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও অরুণোদয় এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ কামাল হোসেন সিবিএন-কে একথা বলেন। জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, অরুণোদয় এর ২২০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে আমি আমার ঔরসজাত কন্যা প্রতীতি কামাল ও প্রমিতি কামালর প্রতিচ্ছবি প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। তাদের যখন রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা সম্পন্ন মাননীয় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি ওনার হাজারো রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার মাঝে দেখতে গেলেন, তখন আমি যেন আকাশের চাঁদটা হাতে পাই। মনের সেই আনন্দ বুঝাবার কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের একজন ক্ষুদ্র কর্মচারী হিসাবে কক্সবাজার জেলার ২২ হাজার অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য যখন কক্সবাজারে অরুণোদয় স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি, তখন মহান আল্লাহতায়লার কাছে ফরিয়াদ করেছিলাম, আল্লাহ সমুদ্রপাড়ের ২২ হাজার অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের ভাগ্য খোলার জন্য, তাদেরকে বোঝা থেকে দেশের সম্পদে পরিণত করার জন্য আমার এই স্বপ্ন পুরণ করিও। যখন মাননীয় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি আগ্রহভরে, উচ্ছ্বাস ও আন্তরিকতার সাথে অরুণোদয় এ সময় দিচ্ছলেন, তখন আমার মনে হয়েছে-মহান আল্লাহতায়লা হয়ত আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। রাষ্ট্রের একজন ভিভিআইপি’র অরুণোদয় স্কুল পরিদর্শন নিঃসন্দেহে এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য ছিলো বিশাল প্রাপ্তি। যা মাননীয় স্পীকারের পরিদর্শন বইতে লেখা মন্তব্যে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, সরকারি চাকুরীর সহজাত নিয়মে কোন এক সময় কক্সবাজার ছেড়ে চলে গেলেও সন্তানসম এদের জন্য মনটা দরিয়া নগরেই পড়ে থাকবে সবসময়।

সোমবার ৬ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল ‘অরুণোদয়’ পরিদর্শনের পর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস ও পরিদর্শনের কিছু ছবি দেওয়া হয়েছে। নিম্মে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
“কৃতজ্ঞ ও অনুপ্রাণিত মাননীয় স্পীকার। আপনার পরিদর্শন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্বপ্ন পূরণে ও আমাদের কর্মপ্রেরণায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল অরুণোদয় স্কুল পরিদর্শন করে স্কুলের ভিজিটরস বুকে লিখেছেন :

“বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত “অরুণোদয়” বিদ্যালয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক অনন্য উদ্যোগ। আমি আশাকরি বিদ্যালয়টি সফলভাবে শিশুদের গড়ে তোলায় অবদান রাখবে। সার্বিক সাফল্য কামনা করছি। শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, স্পীকার, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, ০৫/০১/২০২০।”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি গত ৫ জানুয়ারি সোমবার কক্সবাজারে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল “অরুণোদয়” পরিদর্শন করেন। এসময় অটিস্টিক শিশু আল আমিনের সুমধুর কন্ঠে “মধু হই হই বিষ খাবাইলা, হন হারনে ভালাবাসার দাম নদিলা”-জনপ্রিয় গানটি শুনে স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি উপস্থিত অন্যান্যরা রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছেন। গান শোনার সময় অবাক বিস্ময়ে অটিস্টিক শিশু আল আমিনের দিকে থাকিয়ে ছিলেন-স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি।

ঐদিন অরুণোদয় পরিদর্শনকালে স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল “অরুণোদয়” সারাদেশের জন্য একটা রোল মডেল। এ বিশেষ প্রতিষ্ঠানটিকে অনুসরণ করে সারাদেশে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের জন্য আরো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে। এদিন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী অরুণোদয় এ পৌঁছালে অরুণোদয় এর শিক্ষার্থীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি অরুণোদয় এ সঙ্গীত ক্লাস, ভোকেশনাল কার্যক্রম, ফিজিওথেরাপি ও চিত্রাঙ্কন কার্যক্রম দেখেন। এসময় বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জিদানের অংগভঙ্গী দিয়ে করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষন, মৌমিতা আইচ বাধনের অঙ্কিত বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে দারুণ অভিভুত হন স্পীকার।

পরিদর্শনের সময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন অরুণোদয় এর মতো একটি কল্যাণধর্মী ও ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি দরকার। স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সেই মানবিক মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে অদম্য প্রচেষ্টায় অরুণোদয় গড়ে তুলেছেন। যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। যে প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনকে চিরদিন স্মরণ রাখবে।