ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগ, এরপর জাতীয় পার্টি, তারপর স্বেচ্ছাসেবক দল করেন। সর্বশেষ জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন রংপুরের আবু হেনা মুঃ এরশাদ হোসেন সাজু। একাধারে ১৮ বছর জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। গত জাতীয় নির্বাচনে লালমনিরহাট-১ আসন থেকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। তবে, জামায়াতেও স্থায়ী হতে পারলেন না মুক্তিযোদ্ধা সাজু।

এবার ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’- নামক নতুন রাজনৈতিক অভিযাত্রায় আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেছেন।

যেটির অন্যতম সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কৃত মজিবুর রহমান মঞ্জু, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী তাজুল ইসলাম।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারী) সকালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ আয়োজিত কর্মশালায় নিজ অনুসারীদেরসহ সংগঠনে যোগ দেন আবু হেনা এরশাদ হোসেন সাজু।

ওই অনুষ্ঠানেই যোগদানের বিষয়টি খোলাসা করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুইটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশী রাজনীতি হয়েছে। একটি মুক্তিযুদ্ধ, আরেকটি ধর্ম। ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবসার পণ্য বানানো খুবই দুঃখজনক। অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতিই হল প্রকৃত বাংলাদেশ গঠনের সহায়ক।

জামায়াত ত্যাগী নেতা সাজু দুঃখ করে বলেন, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের অবদান, যুদ্ধে অংশ গ্রহণ সবার কাছে স্পষ্ট। আমাদের পারিবারিক জমিতেই ৬ নম্বর সেক্টর পরিচালনা করা হয়।

দুঃখজনক হলো, শুধু আমি একজন জামায়াতের রাজনীতি করার অপরাধে পরিবারের কেউ ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি পায়নি।

তিনি বলেন, জামায়াতে মুক্ত মত প্রকাশ করা যায় না। ঠোঁটি চেপে ধরা হয়। অথচ মদিনার সনদে সব ধর্ম-বর্ণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন মহানবী (স.)। সব বিবেচনা করে আমি জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশে যোগদান করেছি। একদিন বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এই সংগঠনটি।

তিনি আরো বলেন, ১৮ বছর ধরে জামায়াতের রাজনীতি করেছি। এরআগে ছাত্রজীবনে মান্না ভাইয়ের সাথে জাসদ ছাত্রলীগ করতাম। এরশাদের জাতীয় পার্টির করেছি অনেক দিন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাও ছিলাম। সব দলেই ‘জ’ যুক্ত। এবার জনআকাঙ্খার যোগ দিলাম। এখানেও ‘জ’।

জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আবু হেনা মুঃ এরশাদ হোসেন সাজুকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়ার দৃশ্য।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মজিবুর রহমান মঞ্জু।

তিনি বলেন, আমরা জ্ঞানভিক্তিক রাজনীতির স্বপ্ন দেখি। আমরা ইতিবাচক রাজনীতি করব। দেশের চলমানধারার রাজনীতি নিয়ে মানুষ হতাশ। আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। হতাশার মাঝেই আমরা রাজনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচন করবো।

তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ অনেক কঠিন। তবু শক্ত মনোবলে আমরা এগুচ্ছি। যেখানে শেষ সেখানেই শুরু। যেখানে অন্ধকার সেখানেই আলো। অনেকে বলছে, আমরা নাকি কোন কোন দলের বি টিম, যা সত্য নয়।

জনআকাঙ্খার বাংলাদেশের অন্যতম সমন্বয়ক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মশালার প্রারম্ভে স্বাগত বক্তব্যে মজিবুর রহমান মঞ্জু এসব বলেন।

ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই সভাপতি বলেন, জনগণের চাহিদার আলোকে নতুন উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা সফল হবোই।

প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল আলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী।

দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় উপস্থিতির একাংশ

গত বছরের ২৭ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’।

এর আগে, জামায়াতে ইসলামীতে বিভক্তির অভিযোগ এনে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দল থেকে বহিষ্কার করা হয় মঞ্জুকে। ওই দিনই লন্ডনে অবস্থানরত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক স্বেচ্ছায় জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মনজু জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দলের সাংগঠনিক নেতৃত্বে তার সক্রিয়তা না থাকলেও জামায়াতের তাত্ত্বিক পর্যায়ে মঞ্জুর বেশ ভালো অবস্থান ছিল।