নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতির আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বাফুফের বাইলজ ও নির্দেশনা অমান্য করার প্রতিবাদে ডিএফএ’র নিবন্ধিত ১৬টি ক্লাবের মধ্যে ১৩টি ফুটবল ক্লাবের কর্মকর্তা/প্রতিনিধিরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে। গতকাল ১ জানুয়ারী সন্ধ্যায় শহরের একটি রেঁস্তোরায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা বলেন- আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বাফুফের নির্দেশনার চিঠি অনুযায়ী অনিয়মের কথিত দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগের অনুমোদন থেকে কক্সবাজার ডিএফএ সরে না আসলে এবং বিগত ৪ বছরের ব্যর্থ ফুটবল লীগ কমিটি বাতিল না করলে বর্তমান ডিএফএ’র অধীনে আসন্ন প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে অংশ গ্রহণ না করার কথা সাফ জানিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ক্লাব কর্মকর্তারা। পাশাপাশি স্বীকৃত ৩টি দল টাউন ক্লাব, কক্স ক্রীড়া সংঘ ও টেকনাফ খেলোয়াড় সমিতি মালিকানা পরিবর্তনে কক্সবাজার ডিএফএ’র অব্যাহত ষড়যন্ত্রও বন্ধ করার দাবী জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় কক্সবাজার ডিএফএ সভাপতি ও একজন সদস্য আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএফএ’র সাউথইস্ট ব্যাংকের একাউন্ট থেকে প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা তসরুপ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা ফুটবল ক্লাব সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মালুমঘাট ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এম আর মাহবুব জানান- বর্তমান জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের নির্বাচন বিগত ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদীর নেতৃত্বে নিবার্চিত কমিটি। কিন্তু বিধিবাম- এই কমিটির মেয়াদ আর মাত্র আড়াই মাস বাকি। বিগত ৩ বছর ৯ মাসে দায়িত্ব পালন কালে এই কমিটিকে বাফুফে বারবার তাগাদা দেয়া স্বত্ত্বেও একটি প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগও আয়োজন করতে পারেনি। তারা ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের অভ্যন্তরীণ দলাদলিতে। শুধু তাই নয়- বিগত সময় ২/৩ বার প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েও অদৃশ্য কারণে ডিএফএ পরে বন্ধ করে দেয়। এতে দলবদল কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের নিবন্ধিত ১৬টি দলের অধিকাংশ।
এতে কক্সবাজার জেলা ফুটবল ক্লাব সমিতি ও কক্সবাজার টাউন ক্লাবের সভাপতি খোরশেদ আলম জানান- ডিএফএ’র মেয়াদ আর মাত্র আড়াই মাস বাকি। অথচ বিগত ৪ বছরের প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ আয়োজনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এতে কক্সবাজারের বিকাশমান ফুটবলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি- আসন্ন ডিএফএ’র আগাম ভোটের হিসাব কষে বাফুফের বাইলজ ও তিনবারের নির্দেশনা অমান্য করে পছন্দের কর্মকতার্দের নিজেদের ৬টি দলকে নিয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে কথিত দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এতে থেকে নেই ডিএফএ- নিজেদের ৬টি দলকে বাফুফের কাছে বৈধতা দিতে তড়িঘড়ি করে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ ঘোষণা করে। বাফুফের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল আগে প্রথম বিভাগ, তারপর অন্যকিছু। এটিও কক্সবাজার ডিএফএ মানেনি। শুধু তাই নয়- ডিএফএ ঘোষিত প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের বাইলজে চার নম্বর ধারায় জঘন্য ভাবে জোড়াতালি দিয়ে শেষ করা, বাফুফের বিধি নিষেধের খড়গে পড়া কথিত দ্বিতীয় বিভাগের ২টি দলের প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের বিভিন্ন দলের হয়ে প্রথম বিভাগের দলবদল কার্যক্রমে অংশ নেয়া অধিকাংশ ফুটবলারকে ডিএফএ নিয়ম বহিভর্ূত ভাবে বাফুফের অনুমোদনহীন কথিত দ্বিতীয় বিভাগে নিজেদের দলের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএফএ সাধারণ সম্পাদক ও রামু ফুটবল একাডেমি সভাপতি মঙ্গল বড়–য়া জানান- সভাপতির এক নায়কতন্ত্রে চলছে ডিএফএ। যার কাছ কাজ তাকে করতে দেয়া হয় না। নিজেদের ৬টি দলকে বৈধতা দিতে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ আয়োজনে এখন মরিয়া কক্সবাজার ডিএফএ’র একটি অংশ। আমরা ১৩টি ফুটবল দল ইতোমধ্যে ডিএফএ ঘোষিত প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে অংশ গ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়েছি। কিন্তু আমরা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে অংশ নিলে অনিয়মের ৬টি দল বৈধতা পাবে। আমরা নিবন্ধিত ১৩টি ফুটবল দল আর্থিক অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার ডিএফএ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ ১৫ ডিসেম্বর বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে ন্যাশনাল কক্স ক্রীড়া সংঘের সভাপতি মোঃ করিম উল্লাহ জানান- ডিএফএ’র নিবন্ধিত দল টাউন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং সাবেক ডিএফএ সদস্য খোরশেদ আলম, টেকনাফ খেলোয়াড় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বর্তমান রানিং ডিএফএ অর্থ সম্পাদক ফরহাদুজ্জামানের এবং কক্স ক্রীড়া সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং সাবেক ডিএফএ যুগ্ম সম্পাদক সিরাজদ্দৌল্লার বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্র করে আসছে। এই ৩টি দল অনিয়মের প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে না বলায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ডিএফএ সভাপতি তিন জনের সাধারণ পরিষদের সদস্য পদ কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে টেকনাফ খেলোয়াড় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বর্তমান ডিএফএ’র কোষাধ্যক্ষ ফরহাদুজ্জামান জানান- কক্সবাজার ডিএফএ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অধিভূক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ডিএফএ বাফুফে বাইলজ মানতে বাধ্য। সম্প্রতি ডিএফএ’র অভ্যন্তরের আর্থিক অনিয়ম ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল বড়–য়াকে ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষর ক্ষমতা অর্পণ থেকে বাদ দিয়েছে। ব্যাংক হিসাব নং এসএনডি-১০২৩ সাউথইস্ট ব্যাংক, কক্সবাজার শাখা। যা বাফুফের প্রদত্ত বাইলজের ১৮ নম্বর ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি গতকাল ব্যাংক গিয়ে দেখেছি ইতোমধ্যে ডিএফএ’র সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী ও সদস্য পিডিবি ছিদ্দিকের নেতৃত্বে চক্রটি উক্ত ব্যাংক একাউন্ট থেকে মাত্র কয়েক দিনেই ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ আয়োজনের জন্য এই টাকাগুলো বাফুফে কক্সবাজার ডিএফএ কে অনুদান হিসাবে দিয়েছিল। তিনি জানান- সাউথইস্ট ব্যাংক, কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার বাবর হোছাইন সিদ্দিকী অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক হিসাবটি গতকাল পহেলা জানুয়ারী স্থগিত করে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অল স্টার ফুটবল ক্লাবের দেলোয়ার হোসেন, ঢেমুশিয়া ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, বাঁশকাটা খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি ছৈয়দ করিম, কোটবাজার খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি শফিউল আলম, উখিয়া উপজেলা খেলোয়াড় সভাপতি সিরাজুল হক, পাহাড়লী ক্রীড়া পরিষদের প্রতিনিধি ইসমাইল জাহেদ, কক্স ক্রীড়া সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সিরাজদ্দৌল্লা, রামু যুব একাদশের তরুপ বড়–য়া প্রমুখ।