মোহাম্মদ শফিক:

তৎকালীন পাকিস্তানী বাহিনী ও তার দোসরদের হাতে কক্সবাজার শহরের প্রথম শহীদ, ডা.কবির আহম্মদের স্ত্রী বীরঙ্গনা আলমাছ খাতুনকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার  নিজ কার্যালয়ে তাকে চিকিৎসাবাবদ প্রাথমিকভাবে আর্থীক অনুদান হিসেবে নগদ চেক তুলে দেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো: আমিন আল পারভেজ, কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কাউছারুল হক জুয়েল, সাংবাদিক শফিকসহ অন্যান্যরা। এসময় আলমাছকে কাছে পেয়ে তার শাররীক খবরা-খবর নেন এবং সদর উপজেলার পক্ষ থেকেও সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান করেন চেয়ারম্যান জুয়েল।

এদিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ‘অরুণোদয়’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ডিসি কলেজ, ছিন্নমূল শিশু বিদ্যালয় ও প্রবীণ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, বিপদ-আপদে সাধার মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াসহ বহুমাত্রিক নজীর বিহীন সেবা প্রদানের কারণে দারুন প্রশংসিত হয়েছেন ডিসি কামাল হোসেন। এছাড়াও অত্যান্ত জনবান্ধব একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে জনশ্রুতি অর্জন করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, “তার জীবনে মূল টার্গেট হলেন যে কোন বিপদ-আপদে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা। কারন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যে মানসিক শান্তি ও আত্ম তৃপ্তি পাওয়া যায়, পৃথীবির অন্য কোন সুখ এর তুলনা করা যায়না। তাই কক্সবাজারের প্রথম শহীদ ডা. কবির আহম্মদের স্ত্রী আলমাছ খাতুনকে একটি ঘরসহ সরকারি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ১২ মে দিনটি ছিল শুক্রবার। সেদিন বিকালে পাকহানাদার বাহিনী তার স্বামী ডা. কবির আহম্মদকে ধরে নিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে ৪ বছর বয়সী শাহেনা আকতার ও ৯ মাসের ছেলে নাছির উদ্দিনকে নিয়ে ছুটে যান, কক্সবাজার শহরের পুরোনো সিভিল রেস্টহাউস পাকিস্তানি ক্যাম্পে। সেখানে স্বামীর সাথে দেখা করারতো দুরের কথা! কথাও বলতে দেয়নি হানাদার বাহিনী। বরং ওসময় তিনিও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। পরে কৌশলে নিজের জীবন ভিক্ষা পেলেও, বাঁচাতে পারেনি স্বামীর জীবন। স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদাররা। সেই থেকে স্বামী হারানোর পর আয়ের আর কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কাটছে তাঁর। ছেলে-মেয়ে থাকলেও অভাবের সংসার। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে ৭১ বছর বয়সেও এখনো অসুস্থ শরির নিয়ে প্রতিদিন লাঠিতে ভর দিয়ে কুজো হয়ে সাগর পাড়ে ঝিনুক কুড়ান আলমাছ খাতুন। এগুলো মালা গেথে বিক্রি করেই চলে তার সংসার। এমননিক বয়স্ক ভাতাটুকুও জোটেনি তার ভাগ্যে। বর্তমানে অসুস্থ রয়েছেন আলমাছ খাতুন। অর্থাভাবে তার নুন্যনতম চিকিৎসা করানো কঠিন হচ্ছে তার। এখনো পায়নি শহীদ পরিবার ও বীরঙ্গনার মর্যদাও।