তাওহীদুল ইসলাম নূরী

স্মরনীয় অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে বিদায় নিল ২০১৯ সাল। কিছু প্রাপ্তির সঙ্গে রয়েছে হারানোর অসংখ্য স্মৃতি। বছরের শুরুর দিকে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে যখন সকলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে ব্যস্ত, তখন পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জনের বেশীর মৃত্যু এবং এই দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছড়িয়ে বছরটি ঢাকাসহ সমগ্র দেশের জন্য স্মরণযোগ্য হয়ে উঠে। বরাবরের মতই ছিল রেকর্ড সংখ্যক খুন,ধর্ষণ, লুটপাট এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মিছিল। বরং,অনেকক্ষেত্রে পূর্বের ইতিহাসকেও হার মানিয়েছে বছরটি। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকসু নির্বাচন, ফেনীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যা এবং তার হত্যায় জড়িত ১৬ জনের ফাঁসির রায়, বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে অনান্য বছরের তুলনায় শিক্ষাঙ্গন ছিল কিছু দিন পর পর মানুষের আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দু। “পদ্মা সেতুর জন্য মাথা প্রয়োজন” গুজব এবং সে সময় নেত্রকোনায় এক যুবকের কাছ থেকে দেহ হীন এক শিশুর মাথা উদ্ধারের রেশ কাটতে না কাটতে নতুন করে যোগ হয় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান ইস্যু। চাঞ্চল্যকর এই অভিযানে বেরিয়ে আসে অজানা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক অনেক ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর তথ্য। এই অভিযান দেখে গাঁ ঢ়াকা দেয় অনেক ক্লাব এবং ক্রীড়া সংস্থা যেগুলো তথাকথিত বিনোদনের দোহাই দিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসায় করত। হঠাৎ করে পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্য (প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা) ছিল যেমনটা ছিল অকল্পনীয়, তেমনি ছিল সাধারণ মানুষের জন্য এক ধরনের নির্মমতা। বছরের শেষ দিকে এসে কয়েকটি রেল দুর্ঘটনায় নিহতের পরিমাণও ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। অন্যদিকে অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর বললেই চলে। প্রবাসীদের আয় ছাড়া অর্থনীতির অন্যসব সূচকের নিম্নগামীতাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন অর্থনীতিবীদরা। একইসাথে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন এখন থেকে যদি এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক না হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে পারে আমাদের অর্থনীতি। রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আগের মত জলাবদ্ধতা পরিলক্ষিত না হলেও যানজট নিত্যকার সঙ্গী হয়েই আছে। জাতীয় এবং স্থানীয় কোন ক্ষেত্রেই এমনটা কিন্ত কারও কখনও কাম্য ছিল না। তাই,এতসবের পরও আমাদের প্রত্যাশা একটাই ‘শুভ হোক আগামীর দিনগুলো’। যা অতীত হল,তা গেল। আমাদের সবার স্বপ্ন নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর,সুশৃঙ্খল,কল্যাণময়ী রাষ্ট্র গঠন। এই স্বপ্ন দেখার কথা আমরা যতটা মুখে বলি তার চেয়ে যে যে স্তরে আছি সেখান থেকে কাজের মাধ্যমে দায়িত্ববানের পরিচয় দিয়ে আমাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। আর,বিদ্যমান সমস্যাগুলোর ব্যাপারে স্ব স্ব স্তরের দায়িত্বশীলরা একটি যুগপৎ পরিকল্পনা নিয়ে এগুলে সমস্যাগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই নিরসন হবে এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা । ২০১৯ সালেই হারিয়েছি সামরিক শাসক জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এবং ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদসহ অনেক কৃতিমানকে।
পরিশেষে প্রত্যাশা একটাই সকল দুঃখ,গ্লানি,অশুভ এবং অকল্যাণের অন্ধকার ভেদ করে ২০২০ এ সূচনা হোক একটি সুন্দর,শুভ এবং কল্যাণময় আগামী এই প্রত্যাশায়,…
” Happy New Year 2020″.

তাওহীদুল ইসলাম নূরী,
আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত)
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।