বিদায় ২০১৯

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০২:১৭ , আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০২:২২

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


শাহেদ মিজান, সিবিএন:

নানা ঘটন-অঘটন পেরিয়ে আজকের সূর্যাস্তের মাধ্যমে কালের গহŸরে হারিয়ে যাবে আরো একটি ইংরেজি বর্ষ। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিবে পৃথিবীজুড়ে আলোচিত ২০১৯ সাল। আগামীকাল যে নূতন দিন শুরু হবে তার মধ্যে দিয়েই ২০১৯ সালের সব ঘটনা ঠাঁই নিবে স্মৃতিপাতায়। বিগত এই বছরের পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ সবকিছু কেবলই স্মৃতির পেন্ডুলাম হয়ে ঝুলবে অনন্তকাল পর্যন্ত! তবে সুখ-দুঃখ যাই হোক- সবকিছু দোলা দিবে মনের গহীনে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে/ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে/আমায় তারা ডাকে সাথে- আয় রে আয়।/সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়…।’ সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে আছে এমন আনন্দ-বেদনার কাব্য। সেটা বর্ষবিদায়ের বেলায়ও।

আজ আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেবে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর। ২০১৯ সালের শেষ সূর্যটি গোধূলির পর হারিয়ে যাবে মহাকালের গর্ভে। আর রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০২০।

আমাদের জীবনের সব কর্মকাÐ ইংরেজি সালের গণনায় হয় বিধায় খ্রিস্টীয় বছর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন অনেকেই। ভালো, মন্দ, আনন্দ, বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।

বিদায় সমাগত ২০১৯ সালেও কক্সবাজারের নানা ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে গত বছরের মতো এই বছরও বেশ প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী যে গণহত্যাসহ অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছিল তা নিয়ে চুপ থাকা এবং সংকট নিরসনে ভূমিকা না রাখায় অং সান সু চিকে তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেকবার। শুধু তাই নয়; গাম্বিয়ার দায়ের করা এক মামলায় আন্তর্জাতিক বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন অংসান সুচি।

পাশাপাশি ২০১৯ সালে পরিবেশ সংকটের বিষয়টি পুরো বছরজুড়ে ছিলো ব্যাপক আলোচনায়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে উখিয়ায় বিস্তীণং পাহাড় ও বন-জঙ্গল ধ্বংস করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত উখিয়া ৮ হাজার একরের বেশি বন-জঙ্গল ধ্বংস করা হয়েছে। একই সাথে কেটে বিলীন করে দেয়া হয়েছে এসব বন-জঙ্গলের পাহাড়গুলোও। বন-জঙ্গল ধ্বংস ও পাহাড় বিলীন করা ওই এলাকার জীববৈচিত্রও চরমভাবে ক্ষতির হয়েছে। সব মিলে ২০৪০কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে দৃশ্যগতভাবে ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি বলে দাবি পরিবেশবাদিদের।
অন্যদিকে মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনালের স্টেশন নির্মাণ করার জন্য ধ্বংস করা হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকার পাহাড় ও বন-জঙ্গল। উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের এই বন-জঙ্গল ও পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে। একই সাথে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন একটিসহ মোট ১৬টি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এই নিয়ে আগামী ৩০ বছর পর মহেশখালীতে মানুষের বসবাস বিলুপ্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ বুদ্ধিজীবি ড.সমিলুল্লাহ খান। এছাড়াও পরিবেশবিদ, পরিবেশবাদী এবং দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোর পর্যবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে একই তথ্য। কক্সবাজারের পরিবেশের এই সংকটপূর্ণ বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত বেশ আলোচনা হয়েছে।
এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনা, সংঘাত-সংঘর্ষ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ নিত্য ঘটিত আরো বেশ ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হওয়ায় সেগুলোও বেশ আলোচিত হয়েছে।

পৃথিবীর নিয়ম মতে, সময় চলমান। কোনোভাবেই সময়কে আটকে রাখা যায় না। তাই ২০১৯ সালও আমাদের মাঝ থেকে অতীত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এই বছর সব মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতা গেছে। কিন্তু সব ব্যর্থতা মুছে আগামী ২০২০ সালটা সবার জন্য সফল ও মঙ্গলময় হয়- সেই প্রত্যাশাই রইল।