বলরাম দাশ অনুপম ॥

ইংরেজী বর্ষবরণ ও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার। পাশাপাশি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উৎসবের। তবে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সমুদ্র সৈকতসহ উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম সিবিএনকে জানান-থার্টি ফাস্ট নাইট উদ্যাপনে কোন আতশবাজি, পটকা ফুটানো যাবেনা, কোন উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠানও করা যাবে না। পাশাপাশি রাত ১২টার পর উচ্চস্বরে কোন মাইক কিংবা সাউন্ড বাজানো যাবে না। থাটি ফাস্ট নাইট ও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন-সোমবার সকাল থেকে জেলা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা শুরু হয়েছে যা অব্যাহত থাকবে ১ জানুয়ারী পর্যন্ত। যাই হোক কেন অন্য বছরগুলোর চেয়ে এবার পর্যটক উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসায়ীরা। থার্টি ফাস্ট নাইট উদ্যাপন ও ইংরেজী নববর্ষকে বরণ করতে একসাথে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা তাদের। সবমিলিয়ে কক্সবাজারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। রাজধানীর উত্তরা থেকে রবিউল ইসলাম স্ব-পরিবারে বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজারে। তিনি বলেন, প্রথম কক্সবাজার এসেছি। বেশ ভালো লাগছে। কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ বলেও জানান। কক্সবাজার সৈকতে ভালো সময় কাটছে বলে জানান নারায়নগঞ্জ থেকে আসা রফিক-আয়েশা পর্যটক দম্পতি। জানা গেছে, কক্সবাজারে এবার শীত মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের ঢল নেমেছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবার বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে আমরা বেশ খুশি। এদিকে থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিনে দেশী বিদেশী পর্যটকের ঢল নেমেছে। সরকারী ছুটি এবং বছরের শেষ দিন উদযাপন করতে পরিবার ও পরিজন নিয়ে পর্যটকেরা ছুটে আসছেন সেন্টমার্টিনে। রাত্রিকালীন সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ভোরের নির্মল হাওয়া উপভোগ, দ্বীপের নীল জলরাশি, শৈবাল, প্রবাল এবং জীবন্ত কোরাল দর্শনে নদী-সাগর পাড়ি দিয়ে হাজারো পর্যটক সেন্টমার্টিনে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে দ্বীপের শতাধিক আবাসিক হোটেল এবং কটেজসমুহ পর্যটকে ভরে গেছে। সেন্টমার্টিনে বাংলার নন্দিত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের সমুদ্র বিলাসের কেয়ারটেকার পাপন খাঁন জানান, বছরের শেষ দিন উদযাপন করতে আগে থেকে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকেরা সেন্টমার্টিনের হোটেল কটেজগুলো বুকিং দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ৩১ ডিসেম্বর তারা সৈকতের বালিয়াডিতে রাত কাটাবেন। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক বছরের শেষ দিন উদযাপন করতে সেন্টমার্টিনে ছুটে আসেন। নৌ ভ্রমণ এবং দ্বীপে রাত যাপনের স্বাদটাই আলাদা। বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে পর্যটকরাও আপনজনদের নিয়ে প্রবালদ্বীপে এসে থাকেন। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পর্যটকদের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে। ইতোমধ্যে কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন, এলসিটি কুতুবদিয়া, গ্রীণলাইন, দোয়েল পাখি, এমভি ফারহান,পারিজাত, আটলান্টিকসহ স্পীড বোটে করে পর্যটকেরা সেন্টমার্টিনে এসেছেন। এদের অনেকে দিনে এসে দিনে সেন্টমার্টিন ছেড়ে চলে এসেছেন। বেশীর ভাগ পর্যটক একান্তে বছরের শেষ দিন উদযাপন করতে প্রবালদ্বীপে অবস্থান করছেন। রাত্রিকালীন সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য্য উপভোগ, এবং বছরের শেষ দিন উদযাপনে আজও অনেক পর্যটক প্রবালদ্বীপে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানাগেছে। ‍সেন্টমার্টিন হোটেল কটেজ মালিক সমিতি ও দ্বীপ আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: মুজিবুর রহমান জানান, থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করতে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকেরা প্রতিবছর সেন্টমার্টিনে আসেন। এবছর তার ব্যতিক্রম হবে না। দ্বীপের হোটেল-কটেজ মালিক সমিতি সব সময়ই পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ জানান, থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করতে ৭ হাজারেরও বেশী পর্যটক দ্বীপে এসেছেন। বছরের শেষ দিনকে স্মৃতিময় করতে এসব পর্যটক ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবালদ্বীপে অবস্থান করবেন। আর অনেকেই হোটেল-কটেজে জায়গা না পেয়ে তাঁবু ভাড়া নিয়েছেন। তারাও ৩১ ডিসেম্বর সৈকতের বালিয়াডিতে রাত কাটাবেন। টেকনাফ ট্যুরিষ্ট পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসাইন জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্রতিদিন পুলিশ কাজ করছে। বিশেষ দিনটি যেনো পর্যটকরা ভালোভাবে উদযাপন করতে পারে সেই জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাইফ জানান, সেন্টমার্টিনে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘেœ অবস্থান করতে পারে সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্বীপে অবস্থানকারী পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারীর পাশাপাশি সেখানকার জনপ্রতিনিধিদেরও সর্তক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।