এইচ এম আবু ছিদ্দিক

প্রত্যেক মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ থাকে। এরমধ্যে পারিবারিক দায়িত্ব অন্যতম। আমাকেও বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া-আসাসহ পরিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই একটু ফুরসত পেলেই সংসারে হালধরা প্রিয় মানুষটাকে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে সাগরপাড়ের মেরিনড্রাইভরোডসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া আমার স্বভাব।

সেদিন আদরের ছেলেমেয়েসহ প্রিয় মানুষটা তার বাবার বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে একাই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছিলাম। পরিবারের আপনজন ছাড়া কোথায় গেলে শান্তি পাব, সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে সাগরপাড়ের মেরিনড্রাইভ সড়কে রওয়ানা দিলাম।

মহান সৃষ্টিকর্তার নিখুঁত সৃষ্টি, মেরিনড্রাইভ সড়কের দুই পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অন্যতম আকর্ষণ সবুজ পাহাড়সহ সমুদ্র সৈকতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও সাগরের উত্তাল ঢেউ দেখতে দেখতে কখন যে শাহপরীরদ্বীপে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তা ডুবন্ত সূর্যের অপূর্ব দৃশ্য আকর্ষণ না করলে হয়তো বুঝাই যেতনা, বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে যখন প্রবেশ করলাম। তখনই শুনতে পেলাম, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার সেদেশের আদিবাসী রোহিঙ্গাদের গণকবরগুলো থেকে বিশ্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওয়াজ আসছে। মাটিতে চাপা দেয়া শত শত রোহিঙ্গা লাশের আত্মাগুলো চিৎকার দিয়ে বিশ্বনেতাদের আহবান জানাচ্ছে। গণহত্যাকারী মিয়ানমার জান্তা সরকারের শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়।

মিয়ানমারের বৌদ্ধ সেনারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা চালিয়ে থেমে নেই। তাদের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দিয়ে বসত ভিটা দখলে নেয়াসহ অসংখ্য নারীদের ধর্ষণ ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে প্রায় বার লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমার সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সীমান্তে গড়ে তুলেছে কয়েক’শ অবৈধ ইয়াবা কারখানা।

আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো যেদেশে ইয়াবা উৎপাদন হচ্ছে, সেদেশের মানুষ তা সেবনের সুযোগ পাচ্ছেনা। সবগুলো ইয়াবা পাচার করে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। এসব মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে যুবক-যুবতীরাও।

ইয়াবার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের জিরোটলারেন্স অভিযানে কিছু চুনোপুঁটি আত্মসমর্পণ করলেও তালিকার শীর্ষে থাকা গডফাদাররা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। মিয়ানমার জান্তা সরকার একদিকে মানববিধ্বস্তি মরণনেশা ইয়াবা উৎপাদন ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাপ-দাদার আমলের ভিটে-মাটিসহ জায়গা-জমি কেড়ে নিয়েছে। অন্যদিকে তাদের হেলিক্যাপ্টারও বাংলাদেশের আকাশসীমা বেশ কয়েকবার অতিক্রম করেছে।

সুচির জান্তা সরকারের সা¤্রাজ্যবাদী মনোভাব দেখে যেমনি ঘৃণা ও ক্ষোভে আক্রান্ত হলাম। তেমনি আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সুযোগে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মিয়ানমার বাংলাদেশে ঢুকতে সাহস পেয়েছে কিনা, তা ভাবতে ভাবতে ফিরতি পথে রওয়ানা দিলাম।

যাওয়ার সময় সাগরপথে গেলেও রাত্রিবেলা সেই পথে আসতে মোটেও মন চাইছে না। সিদ্ধান্ত নিলাম মহাসড়ক দিয়েই চলে আসব। আসার পথে যাত্রা বিরতিতে টেকনাফের একটি রেষ্টুরেন্টে রাতের খাবারটা সেরে নিলাম।

মহাসড়ক দিয়ে কিছুদূর আসতেই খানাখন্দকে ভরা সড়কের যাত্রা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। রাস্তার দু’পাশে বনজঙ্গলের গাছ-গাছালি ও মাঝে মাঝে কিছু বাড়িঘর ছাড়া কোথাও কোন যানবাহন বা মানুষের ছাড়াশব্দও নেই।

জনশূন্য রাস্তা যতই অতিক্রম করছিলাম, ততই পুরো শরীর ভারী হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল পিছন থেকে কেউ ডাকছে আর টেনে ধরতে চাইছে। সাহস করে পেছনে থাকালে দেখা যায় কিছুই নেই। শুধু মনের কল্পণাই আমাকে ভূতপ্রেতের ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

উকিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আশেপাশে আসতেই দেখা গেল। রোহিঙ্গা উগ্র্রকর্মা একটি দল বিদেশী পিস্তলসহ অস্ত্রশস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দুইজন সুন্দরী তরুণীকে টেনেহেঁচড়ে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্য একটি দল স্থানীয় বাসিন্দাদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও ক্ষেতখামারসহ মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করছে। আর কিছু রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীরা অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে দিচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এসব অপকর্ম দেখে এতজোরে চিৎকার দিলাম। বিশ্বের অন্যতম সংগঠন জাতিসংঘ পর্যন্ত ভূ-কম্পনে নড়েচড়ে বসলো। কিন্তু আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়া ছাড়া কেহই বাস্তবে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলোনা।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে জীববৈচিত্র্যসহ বাংলাদেশের যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, তা কখনো পূরণ হবার নয়। বাংলাদেশ চাইলে বিশ্ব পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সহায়তায় মিয়ানমারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারে। প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নালিশ দিতেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক আইনে কোন বাঁধা নেই। বাংলাদেশ সরকার এখনো পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কেন আন্তর্জাতিক মহলে উত্থাপন করছেনা, সেই রহস্য জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার ও তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনসহ মানবাধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও দায়িত্ব এড়াতে পারে না। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে হতভঙ্গ হয়ে হতাশ্বাস পথিকের মতো ভারাক্রান্ত দেহে সামনে এগোতে থাকলাম।

রামু সেনানিবাস বা ক্যান্টেনমেন্টের পাশ দিয়ে আসতেই “সবার উপরে দেশ” লেখা বড় সাইনবোর্ড ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কর্মকুশল দেখে ক্লান্ত দেহটা আবার সতেজ হয়ে গেল। সবুজ পাহাড়ঘেরা প্রকৃতির মাঝে প্রশস্ত ও টেকসই রাস্তাঘাটসহ পরিকল্পিত সেনা ক্যাম্পাস অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়। তবে, সেগুলো বেশীক্ষণ দেখার সুযোগ হয়নি।

মাথায় পাগড়ি ও সাদা পোশাক পরিহিত একজন মাওলানা মুহূর্তেই সামনে এসে বললো, আমি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আত্মা। জীবিত থাকতে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মজলুম রাজনীতিবিদ ছিলাম।

তুমি শুধু রোহিঙ্গা সমস্যার কথা ভাবছ কেন? এর চেয়ে বড় বিপদ হতে পারে ভারতের নাগরিকত্ব (এনআরসি) সংশোধনের অন্তরালে মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী সাজানোর অপকৌশল।

সাম্প্রতিক কট্টর হিন্দুত্ববাদি মোদি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনের নামে প্রায় ১৯ লক্ষ হিন্দু-মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়। তবে, মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে ভারতের রাজ্যেসভায় নাগরিকত্ব (এনআরসি) সংশোধন আইন সংসদে পাশ হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, তিনটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, ফার্সি ও খ্রিস্টানদের ভারতে নাগরিকত্ব দেয়া হবে।

এর থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, বিজেপির মোদি সরকার মুসলিম ধর্মালম্বীদের টার্গেট করে অসাম্প্রদায়িক ভারতকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ক্ষমতাসীন বিজেপির দলীয় স্বার্থনেষী ও মানবাধিকারবিরোধী এই আইন কার্যকর হলে ভারতে লক্ষ লক্ষ মুসলমান রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে।

ভারতে নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত মুসলমানরা প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ইতিমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন। ভারতে কোন অবৈধ বাংলাদেশী থাকলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁর বক্তব্যে দেশের জনগণ আশ্বস্ত হতে পারতো, যদি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করতেন। এনআরসি সংশোধনীতে বাদ পড়া ভারতীয় মুসলিমদের জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের মতো বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করবে না। তাছাড়া বাংলাদেশে কোন অবৈধ ভারতীয় থাকলে তাদেরও ফিরিয়ে নেয়া হবে।

ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলেও তাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও দুর্বল মানসিকতার। স্বার্থ হাসিল ছাড়া বাংলাদেশের অধিকারের প্রতি ভারত মোটেও সচেতন নয়। মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের যখন বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফরে গিয়ে অংসান সুচির সাথে হাত মিলিয়ে তাদের পাশে থাকার ঘোষণাই এর দৃষ্টান্ত উদাহরণ।

স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে সশস্ত্র পাকহানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল পুরো বাঙ্গালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বাংলার প্রতিটি মায়ের সন্তানেরা সেই যুদ্ধে শামিলসহ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

গুটিকয়েক বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাসহ পাকহানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিল। ভারত-পাকিস্তান যেহেতু হিন্দু-মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আলাদা হয়েছে। বৃহত্তর পাকিস্তান আলাদা হয়ে গেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ওপর ভারতের হিন্দুত্ববাদি সরকারের আধিপত্য বাড়বে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে বন্ধু বলে বলে বিনাপয়সায় ট্রানজিটসহ অনেককিছুই আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে শুধু আশ্বাস ছাড়া তিস্তার পানিসহ উল্লেখযোগ্য কিছুই আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই সত্যটা বলে দিয়েছেন, “ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা আজীবন মনে রাখবে” প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পতি ভারতকে পুরোটা দিয়ে দিলেও আইনগত কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রের সম্পদ কাউকে দিতে হলে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান স্পষ্ট বলে দিয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক “জনগণ” জনগণের সম্পদ আজীবন মনে রাখার মতো ভারতকে দিতে হলে আন্তর্জাতিক চুক্তি আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতির নিকট পেশসহ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনুমতিসাপেক্ষে দিতে হবে। বর্তমানে সেই সংস্কৃতি সংবিধানে তালাবদ্ধ।

তোমরা কি ভুলে গেছ? বাংলাদেশের মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য জাতির প্রতি আহবান জানিয়ে ১৬ মে ১৯৭৬ সালে রাজশাহী থেকে ভারত অভিমুখী লংমার্চ (অভিযাত্রা) করেছিলাম।

তোমাদের মনে আছে? মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকালে বলেছিলাম। এতদিন আমাদের ঢাকা রাওয়ালপিন্ডি-ইসলামাবাদ দৌড়াতে হয়েছে। দেশ স্বাধীন হলে আবার ঢাকা-দিল্লি দৌড়াতে হবে না’তো?

সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী যদি বলেন, “উই দ্য বাংলাদেশী ইজ উই আর অলসো পার্ট অব ইন্ডিয়া” তাহলে’কি আমি যে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর স্বাধীন, সার্বভৌম ও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভৌগোলিক বা ভূ-প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ’তো বটে। প্রতিহিংসাপরায়ণ নোংরা রাজনীতি, ঘুষ, দুর্নীতিসহ সবক্ষেত্রে দলীয়করণ বন্ধ হলে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড়ানো অসম্ভব কিছু নয়।

তবে, জনগণকে জিম্মি করে ভোটাধিকার হরণ করা যাবে না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা অবশ্যই জরুরী।

মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে বাঙ্গালি জাতি পাকিস্তানী ইয়াহিয়া-ভুট্টো লুঠেরাদের হাত থেকে রক্ষা পেলেও এদেশের সাধরণ মানুষের মুক্তির সনদ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। শাসকগোষ্ঠীর আধিপত্য, ঘুষখোর, দখলবাজ, টাউট-বাটপাড়সহ সংঘবদ্ধ দলীয় লুঠেরাদের হাতে জিম্মি।

স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ হওয়া ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের প্রতিদান, মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনার বাস্তবায়ন ও দেশের সমৃদ্ধি চাইলে দলমত নির্বিশেষে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। “বিভক্ত জাতি তলাশূন্য ঝুড়ির মতো”

বড় রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের প্রত্যেক নাগরিককে মৌলিক কিছু বিষয়ে একমত হতে হবে।

যেমন- প্রতিহিংসাপরায়ণ নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। রাজনীতিবিদ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন ও পররাষ্ট্রনীতিতে কোন ধরণের ঘষাঘষি করা যাবে না। এসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকবে দেশ, এবং দেশের মানুষ।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো শুনতে শুনতে যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তখনই আমার ছেলে রনবীর ছিদ্দিক ডাক দিয়ে বললো, আব্বু সকাল হইছে, আযান দিছে, নামাজ পড়তে যাবে না।

 

লেখক: কলামিস্ট, সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, দৈনিক কক্সবাজার বাণী। মোবাইলঃ- ০১৫৫৮৩৬৩৩৪৩,