হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর

২৭ ডিসেম্বর ( জুমাবার) জুমার নামাজ শেষে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলাম কক্সবাজার শহরের তারাবানিয়ার ছড়া জামে মসজিদের সামনে। এসময় একজন অশীতিপর মুরুব্বীকে দেখলাম কয়েকরকম স্থানীয় পত্রিকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। একহাতে লাঠি, অপর হাতে পত্রিকা। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া প্রবীণ এ মানুষটি তখন কাঁপছিলেন। পত্রিকার আমি নিয়মিত পাঠক হলেও পত্রিকার আকর্ষণে নয়; বরং জীবন সায়াহ্নেও পত্রিকা ফেরী করে হালাল জীবিকা উপার্জনে বৃদ্ধ মানুষটির সক্রিয়তায় আকৃষ্ট হয়ে ছুটে গেলাম তাঁর কাছে। সালাম দিলাম। তিনি সরবে জবাব দিলেন। কেমন আছেন জানতে চাইলে হাসিমুখে জবাব দিলেন আলহামদুলিল্লাহ। এরপরে মুরুব্বীর কাছে প্রশ্নটা ছিল- আপনার বাড়ি কোথায়? তিনি সরলভাবেই জবাব দিলেন “কবরস্থানে”..। সেই সাথে বললেন, দুনিয়ার ক্ষণিকের এই বাড়ি-গাড়ির কোন মূল্য নেই। কবরই আসল বাড়ি।” এরপরে আমি কোন প্রশ্ন করার সাহস করিনি। কারণ আমার মনে হলো তিনি প্রকৃত অর্থেই দুনিয়াতে মুসাফিরি জিন্দেগীকে বরণ করে নিয়েছেন। এরপরে আমি এক কপি দৈনিক হিমছড়ি পত্রিকা নিয়ে মুরুব্বীকে দশ টাকার একটি নোট দিলাম। তিনি আমাকে আরও দু’টি পত্রিকা দিতে চাইলেন তার বিনিময়ে। আমি না করে বললাম আপনার কাছ থেকে ১০ টাকার বিনিময়েই একটি পত্রিকা নিলাম স্বেচ্ছায়। একথা শুনে তিনি মাথার ওপর হাত বুলিয়ে দু’আ করলেন “আল্লাহ তোমাকে ঈমানের হালতে মৃত্যু নসীব করুন।” এই দু’আয়ও প্রমাণ হলো আসলে তিনি পার্থিব বিষয়ে নির্লোভ, নির্মোহ একজন মানুষ। আর তাইতো হালাল রুজির অন্বেষায় এক হাতে লাঠিতে ভার করে অপর হাতে পত্রিকা ফেরী করে জীবন সায়াহ্নেও পথ চলছেন প্রবীণ এ মানুষটি। দু’আ আসলো মন থেকে এ মুরুব্বীর জন্য। এরকম সৎকর্মনিষ্ঠ, দুনিয়াবিমুখ মানুষেরা হালাল জীবিকা নির্বাহে আমাদের প্রেরণা। দু’আ করি আল্লাহ মুরুব্বীর হায়াত ও রিযিকে বরকত দান করুন। আমিন।
আসুন, এরকম দরিদ্র, সৎকর্মনিষ্ঠ প্রবীণ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই।