মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:
চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার কেওছিয়া গ্রামের বাসিন্দা উপেন্দ্র লাল দাশ ও যশদা বালা দাশের ছেলে সুশীল চন্দ্র দাশ। ১৯৫৫ সালের ১০ আগস্ট জন্ম তার। ১৯৭১ সালে সাত কোটি বাঙ্গালীর স্বাধীন আশ্রয় লাভের বুকভরা আশা নিয়ে রণাঙ্গনে জীবনবাজি রেখে ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বাধীনতা অবয়বে আজ নিজেই আশ্রয়হীন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও গেজেটে ঠাঁই মিলেনি এ মুক্তিযোদ্ধার। নিজস্ব ভিটেমাটি না থাকায় বাস করছেন একমাত্র মেয়ে জামাতার আশ্রয়ে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি হায়দারনাশী গ্রামে। গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তি করতে সংবাদপত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ জাতির জনক কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন সুশীল চন্দ্র দাশ।

সুশীল চন্দ্র দাশের যাবতীয় কাগজপত্রাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশ রক্ষা বিভাগ কর্তৃক ইস্যুকৃত ক্রমিক নং-১৯৭১৬৩, (ভারতীয় তালিকা নং-এফ এফ ১৭৪) “বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক মুহাম্মদ আতাউল গনী ওসমানী ও ১ নং সেক্টর আঞ্চলিক অধিনায়ক রফিকুল ইসলাম” এর যৌথ স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রটি শুধু স্মৃতি স্বাক্ষর হিসেব রয়েছে এই বীর সেনানির কাছে। এ সময় সুশীল চন্দ্র দাশ জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার ডাক দিলে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক স্বপন চৌধুরীর সাথে মুক্তি বাহিনী হিসেবে রণ প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান তিনি। সেখানে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বদেশে ফিরে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১নং সেক্টরের আঞ্চলিক কমান্ডার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সহযোদ্ধাদের সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মরণপন সংগ্রাম করেন সুশীল চন্দ্র দাশ। মুক্তিযোদ্ধা ডাটা বেইজ ফরম পূরন করে ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্রেজেট-এ নাম অন্তর্ভুক্তি করার জন্য আবেদন করেন এ মুক্তিযোদ্ধা। আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গোল সীলমোহর দিয়ে রিসিভও করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অদ্যাবদি কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না এ মুক্তিযোদ্ধা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল চন্দ্র দাশ আক্ষেপ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে ঠাঁই পাওয়া দূরে থাক; স্বাধীনতার ৪৮ বছরে কোন সুযোগ সুবিধাও পাইনি। শেষ জীবনে হলেও গেজেটে ঠাঁই পেলে মরেও শান্তি পাব। এক সময় গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তি করাতে তার সহযোদ্ধা মো: আইয়ুব আলীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ততবির করেছি। অদ্যাবদি কোন সুরাহা হয়নি। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করার মত কেউ নেই। তাই গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তি করতে সংবাদপত্রের মাধ্যমে জাতির জনক কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত হস্তক্ষেপ কামনা করেন সুশীল চন্দ্র দাশ।

তবে লামা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, সুশীল চন্দ্র দাশ যুদ্ধের যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে গ্রেজেটে অন্তর্ভুক্তি হতে পারবেন।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, সুশীল চন্দ্র দাশ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত না হওয়ায় হয়তো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। তছাড়া তিনি এ বিষয়ে কখনো অভিযোগও করেননি।