যুবরাজ চৌধুরী :

আমি কক্সবাজার। আমাতেই তোমাদের বসবাস। প্রায় চব্বিশ লক্ষ লোকের ঠাই আমার অভ্যন্তরে। দেশের দক্ষিন পূর্বাঞ্চলে আমার অবস্থান। পশ্চিমের বঙ্গোপ সাগর ও অভ্যন্তরে বাকঁখালি ও মাতামুহুরি নদী জুড়েই আমার বসবাস।বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আমি ধারন করি। তাই আমাকে ঘিরেই তোমাদের যত সম্ভাবনা। প্রতি দিন হাজারো পর্যটকের সীমাহীন সমাগম ঘটে আমার মাঝে। এভাবে প্রতিনিয়ত হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। লক্ষ লক্ষ মানুষের নির্গত বর্জ্য আমাকে ধ্বংসের সম্মুখিন করছে।
আর অতিরিক্ত রোহিঙ্গা ধারনে আমার দেহের গাছপালা কেটে কত বন উঝাড় করা হল সেটা সকলেই জানো। আচ্ছা মানবতার খাতিরে আমি যে পরিমান নির্যাতিত রোহিঙ্গা ধারন করে আছি, অন্য কোন জেলা কিংবা জেলাবাসী কি তাদের এভাবে আশ্রয় দিতো? কিংবা? এতদিন সহ্য করতো? কিন্তু আমিই করেছি।
দেশের অন্যতম স্বাস্থ্যসম্মত নগরী হিসেবে খ্যাত কক্সবাজারে আগের রুপ কি তোমরা ধরে রাখতে পেরেছো? পারোনি কেউ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে প্রতিনিয়ত আমার দেহাভ্যন্তরীণ বায়ু আর পানি দূষিত হয়েই চলছে। একই স্থানে পাহাড় আর সাগরের মিলিত অপরূপ সৌন্দর্য্যে একমাত্র আমিই ধারন করি৷ কিন্তু নগরায়নের দোহাই দিয়ে আমার বেঁচে থাকার স্তম্ভ পাহাড় কেটে বিলীন করে তাতে তোমরা বহুতল ভবন নির্মান করছো।
তোমাদের আঞ্চলিক প্রধান শিল্প পান, চিংড়ি, লবণ সারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কিন্তু আমার পশ্চিমে সাগর দীপে যে কইলা বিদ্যুৎ স্থাপন করছো তাতে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় নামবে। সেখান থেকে যে দূষিত পদার্থ বের হবে, তা ছড়িয়ে পড়বে পুরো জেলা জুড়ে।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে ১৭টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে সেখান থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ টন কার্বন ডাই–অক্সাইড, কয়েক হাজার টন ছাই ও ৫ হাজার ৮০২ কেজি পারদ নির্গত হবে।
চিংড়ি, পান ও লবণ উৎপাদনের জন্য প্রায় ১২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। দেশে উৎপাদিত লবণের ৭০ শতাংশ তৈরী হই আমার অভ্যন্তরে।
প্রতি বছর ৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার মিষ্টি পান উৎপাদিত হয়। তুমাদের সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাবে বিলীন হয়ে যাবে এসব শিল্প। পরিবেশের উপর এত অত্যাচার করা সত্ত্বেও তুমাদের নিজ সন্তানের মত আগলে রাখি আমি৷ আর আজ আমার অস্থিত্ব ও গৌরব প্রায়ই বিলীন হবার পথে। আমার আর্তনাদ কেউ শুনেনা।
তোমাদের ভাল থাকার জন্য হলেও তুমরা তুমাদের এই জন্মস্থল ও বেড়ে উঠার স্থান কক্সবাজারকে রক্ষায় উদ্যোগ নাও।

ইতি,

তোমারই কক্সবাজার