আলমগীর মানিক,রাঙামাটি :

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পাড় দখল করে নির্মাণ করা কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট পল্লব হোম এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম। অভিযানে এসপি বাংলোর সামনে হ্রদের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ দখল করে নির্মিত ৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান, অভিযান পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট পল্লব হোম বলেছেন, এ উচ্ছেদ অভিযান কার্যত: পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা অভিযানে জেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে। আমরা সহায়তা দিচ্ছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম জানান, সারাদেশে প্রত্যেক জেলায় নদী দখল উচ্ছেদ অভিযান চলছে। তার অংশে আমরা রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ওই এলাকায় উচ্ছেদ হওয়া অবৈধ দখলদার আবদুল লতিফ (৫৫), মো. আনোয়ার হোসেন (৫৮) ও শাহাব উদ্দিন (৪৮) বলেন, আমরা ভূমিহীন। থাকার জায়গা নেই। এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি। সরকার চলে যেতে বললে আমরা স্বেচ্ছাই চলে যাব। তবে এজন্য দশ দিনের সময় চাইছি।

এদিকে আইনে বলা আছে, হ্রদের সর্বোচ্চ উচ্চতার সীমারেখার ১২০ ফুটের মধ্যে কোনো রকম জমির বন্দোবস্তু দেয়া যাবে না। অবৈধভাবে বসবাস করা যাবে না। কিন্তু এ আইন লঙ্ঘন করে কাপ্তাই হ্রদের পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহু স্থাপনা। পিছিয়ে নেই সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাও। ফলে কাপ্তাই হ্রদ হারাচ্ছে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। আর বর্জ্যে দুষণের শিকার হচ্ছে হ্রদের পানি ও পরিবেশ। গভীরতা কমে হ্রদ হারাচ্ছে নাব্যতা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহল।

এদিকে সদরসহ জেলাজুড়ে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনা গড়ে তোলা হয়, শুস্ক মৌসুমে হ্রদের পানি কমে গেলে ভেসে উঠা জায়গায় ভরাট করে পাকা স্থাপনা এবং পাকা পিলার ও গাছের খুঁটি গেড়ে কাঁচা স্থাপনা নির্মাণ দিয়ে। এ ছাড়াও বৈধ-অবৈধ জায়গার নিজ নিজি বাড়িঘরের সামনে পেছনে ব্যাপক হারে দখল করা হচ্ছে হ্রদের জায়গা। কেবল রাঙামাটি শহর এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের পাড় দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে, কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনা নির্মাণের ফলে রাঙামাটিতে দিন দিন বেড়ে উঠছে প্রচুর অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিরোধী বস্তি। এসব দখলদারদের ত্যাগ করা মল-মূত্রসহ নিক্ষেপ করা ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি ও আশেপাশের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। ফলে কাপ্তাই হ্রদ ও পানি দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।