আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:
মুসলিমরা ধর্ম ও দেশ নিয়ে চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। তাদের কৌশলে ধ্বংস করা হচ্ছে, তারা পালিয়েও বাঁচতে পারছে না। অমুসলিম দেশে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলো ও ইসলাম অব্যাহতভাবে অন্তর্দ্বন্দ্ব, গৃহযুদ্ধ ও ব্যর্থ প্রশাসন ও অন্যান্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। এগুলো নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।

রাজধানী কুয়ালালামপুরে চার দিনব্যাপী ‘কুয়ালালামপুর সামিটে’ সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ডা. তুন মাহাথির মোহামাদ এসব বিষয় তুলে ধরেন।

কুয়ালালামপুর শীর্ষ সম্মেলন মুসলিমদের জন্য অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম প্রতিস্থাপন করবে না বা এটি বিভিন্ন শ্রেণি তৈরি বা অন্যান্য মুসলিম জাতিকে হীনমুক্ত করার পরিকল্পনাও করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী তুন ডা. মাহাথির মোহামাদ।

নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহকে সহযোগিতায় একমত হয়েছেন মুসলিম নেতারা। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে চার দিনব্যাপী কুয়ালালামপুর সামিটে গোলটেবিল বৈঠক ও সেমিনারে উঠে আসে নির্যাতিতদের কথা। ৫টি দেশের নেতা, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে প্রায় ৪৫০ জন প্রতিনিধি চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।

সম্মেলনে এসেছিলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েপ এরদোগান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তারা সবাই কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। মুসলিম দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী সৌদিভিত্তিক বৈশ্বিক সংস্থাকে হ্রাস করার জন্য সংগঠন ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) সমালোচনার মধ্যে রয়েছে।

মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, কেউ কেউ কেএল শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ধারণা পোষণ করেছেন এবং নেতিবাচক মতামত ভুল জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যা ন্যায়সঙ্গত হয়নি।

১৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ২১ ডিসেম্বর সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মুসলিম বিশ্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে। এ সংকট উত্তরণে তিনি মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ‘বাস্তবায়নযোগ্য‘সমাধান বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমার পক্ষে এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশেষ করে ইরান, বছরের পর বছর নিষেধাজ্ঞার পরেও অগ্রগতি ও বিকাশ অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং এটি গর্বের সাথে বিশ্বের এক চতুর্থ সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রকৌশলীর দেশ হিসাবে দাঁড়িয়েছে।

কাতারও নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে এবং ইরানের মতো এটিও এর ওপরে উঠতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রভাবশালীভাবে অগ্রগতি করেছে। ইরানের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে সংকেত ব্যবহারের ইরানি প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদ।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি কুয়ালালামপুর শীর্ষ সম্মেলনে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলিমদেশগুলোর অভিন্ন ডিজিটাল বাজার গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সমর্থন দিয়ে মাহাথির বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার দেশগুলো ডলার ব্যবহার করলে তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে; তাই আমরা এক্ষেত্রে নিজস্ব মুদ্রা বা অভিন্ন মুদ্রা ব্যবহার করতে পারি।

ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে মালয়েশিয়া মুসলিম এই দেশটির বিশাল বাজারে শরিক হতে পারছে না বলে মাহাথির ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে কুয়ালালামপুর বৈঠক শুরুর আগে গত বুধবার প্রেসিডেন্ট রুহানির সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, মার্কিন চাপের মোকাবেলায় ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতিরোধ মালয়েশিয়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে।

চলমান সংকট থেকে বের হয়ে আসতে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলিম দেশগুলোকে কাজ করার আহ্বান জানালেও কুয়ালালামপুর সম্মেলনকে দেখা হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের বিভক্তির সূত্রপাত হিসেবে। এ সম্মেলনে আয়োজনের বিরোধিতা করেছে সৌদি আরব। সৌদি আরবকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, দেশটি অংশগ্রহণ করেনি।

এই সম্মেলন মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আলোচনার জন্য উপযুক্ত নয় বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। বিশ্লেষকদের মতে, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান, কাতার ও তুরস্কের মাধ্যমে কূটনীতিকভাবে পৃথক হয়ে পড়ার ভয় করছে সৌদি আরব।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, মাহাথিরের সঙ্গে মঙ্গলবার এক কথোপকথনের সময় সৌদি বাদশা সালমান বলেছেন, মুসলিমদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো ইসলামি সহযোগিতা সংগঠন (ওআইসি)-এর আওতায় হওয়া উচিত।

এই সম্মেলনে সৌদি আরবের অনুপস্থিতিকে মুসলিম বিশ্বের মধ্যে বিভেদের লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আপত্তির কারণে সম্মেলনে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান।