মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, রাঙ্গাঝিরি থেকে ফিরেঃ
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ী এলাকার রাঙ্গাঝিরি গহিন বনাঞ্চলের ভেতর অবৈধ ইটভাটা গিলে খাচ্ছে বনের কাঠ। এ কারনে বনাঞ্চল উজাড় ও বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী ও রোগোআক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খাদ্য সংকটে পড়ে বন্য হাতির পাল লোকালয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। অপরদিকে ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় রোগাক্রান্ত হয়ে একের পর এক মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণী নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

সূত্র মতে লামা বন বিভাগের গভীর বনাঞ্চলে আগে শত শত হাতির পাল অবাধ বিচরণ করতে দেখা গেলেও এখন গুটিকয়েক হাতির পাল বিচরণ করতে দেখা যায়। তাও খাদ্য সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমন ও বোরো মৌসুমে হাতির পাল খাদ্যের সন্ধানে ধানক্ষেতে ছুটে যায়। এ সময় অসহায় কৃষকরা আগুনের গোলা ও দেশি অস্ত্র ব্যবহার করে হাতির পাল তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

সম্প্রতি লামার বনাঞ্চলে পাঁচটি হাতি মারা যাওয়ার খবরও রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি বন্য হাতির পাল খাবার সন্ধানে ঢুকে পড়ছে লামার পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। তবে পর্যটকদের যাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি করতে না পারে হাতির পালটির প্রতি সেভাবে গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী তত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম বলেছেন, কক্সবাজার উত্তর বিভাগের আওতাধীন ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বিভিন্ন বনভূমিতে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় নিধনে হাতির খাবারযোগ্য গাছপালা, বাঁশঝাড় ধ্বংস করে ফেলায় সেখানে খাবার সংকটে পড়েছে। এছাড়া আমন ধান কাটাও শেষপর্যায়ে তাই ক্ষুধার্ত বন্যহাতিগুলো খাবার সন্ধানে সাফারি পার্কের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে।
সূত্রে জানা যায় প্রতি বছর লামা উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও শুরু হয়েছে ইটভাটায় কাঠ পুড়ানো। এতে বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বনের হাতিগুলো লোকালয়ে ছুটে চলছে। রাঙ্গাঝিরি গহীন বনে পাহাড় কেটে পাহাড়ের মাঠি দিয়ে ইট তৈরীর কাজে ব্যস্ত ডুলাহাজারা এলাকার মোঃ ইমরান ও আনিছ। তারা বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছে ইটভাটা। টিনের চিমনী আইনে নিষিদ্ধ হলেও এসব ইটভাটায় বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে দেদারছে টিনের চিমনী দিয়ে। ঐ চিমনীর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণী। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছে এলাকার বৃদ্ধা, শিশু কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানান, বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর রাঙ্গাঝিরি, ফাইতং, ইয়াংছা, কুমারীতে গভীর বনাঞ্চলে ছিল হাতির অভয়ারণ্য। বর্তমানে এসব এলাকায় হাতি বিচরণের তেমন কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই। এসব বনাঞ্চলে গত তিন দশকে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বসতবাড়ি ও ইটভাটা। ফলে বনে হাতির বিচরণ, খাওয়ার কোনো লতাপাতা, বাঁশঝাড় ও গাছপালা অবশিষ্ট নেই। এ ছাড়া ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় হাতি, হরিণ, বনমোরগ, অতিথি পাখিসহ সব ধরনের বন্যপ্রাণী অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। এক সময় শীতের রাতে শিয়াল ও হরিণের ডাক শোনা গেলেও এখন তেমন শোনা যায় না। এভাবে বন নিধন, জনবসতি ও ইটভাটার কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে স্বল্পসংখ্যক হাতিও আর বনে দেখা যাবে না।

প্রতিবছর ইট পোড়ানোর মৌসুমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও মামলা করলেও পরিস্থিতির কোনো প্রকার উন্নতির দেখা মিলছে না। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ রেঞ্জের পাঁচটি বনবিটেই হাতির অভয়ারণ্য ছিল। বর্তমানে বন উজাড় ও বনভূমি জবরদখলের কারণে বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র ছোট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ইটভার ম্যানেজার বেলাল থেকে জানতে ছাইলে তিনি মালিক ইমরান ও আনিছের মোবাইল নম্বার দেন। এই প্রতিবেদক ইমরানের মুটো ফোনে জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে প্রশাসন ও সাংবাদীকদের ম্যানেজ করে ইট তৈরীর কথা বলেন।