কামাল হোসেন,রামু :
রামু উপজেলার কাউয়ারখোপের পশ্চিম মনিরঝিল সোনাইছড়ি ছড়ার উপর নির্মাধীন মাত্র ৩৬ মিটার দীর্ঘ ব্রিজের কাজ ৪ বছরেও শেষ হয়নি। চরম দুর্ভোগে আছে এলাকার কয়েক হজার মানুষ। দফায় দফায় ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হওয়ার তারিখ দিয়েই যাচ্ছেন ঠিকাদার। মিথ্যা আশ্বাসে কেবল প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে এলাকাবাসী। প্রতিক্ষা যেন শেষ হয়না। বিষয়টি এখন মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পের মতো হয়ে গেছে।
জানা যায়,রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন এবং রাজারকুল ইউনিয়নের মানুষের মাঝে সহজ যোগাযোগ এবং জীবনযাত্রা সহজ করা লক্ষে সোনাইছড়ি ছড়ার উপর ব্রিজ নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালে প্রায় ৩ কোটা টাকা ব্যায়ে সোনাইছড়ি ব্রিজটি টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যাদেশ দেয়া হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে। ২ বছরের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৪ বছরেও ব্রিজের কাজ শেষ করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৪ বছরে ব্রিজের কাজ হয়েছে মাত্র দুই তৃতীয়াংশ। বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। সবকিছুর জন্য ঠিকাদারের অবহেলাকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী।আর এসব জেনেও রামু উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস নিরব ভুমিকা পালন করছেন বলে জানাগেছে । ব্রিজের উভই পাশের পাকা রাস্তা শুধু ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে দুই পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা থমকে আছে।এসব কারণে নষ্ট হচ্ছে সরকারের ভাবমুর্তি। ব্যাহত হচ্ছে সরকার ঘোষিত গ্রামকে শহর করার প্রক্রিয়াও।

স্থানীয় অধিবাসী কবি ও প্রাবন্ধিক এম সুলতান আহমদ মনিরী এবং স্থানীয় ইউপি মেম্বার জহির উদ্দিন জানান, ব্রীজটি নির্মানের পূর্বে আমাদের অতি প্রয়োজনে বছর বছর শুকনো মৌসুমে জনগন উক্ত ছড়ায় কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী কাঠের ব্রীজ নির্মান করে ঐ ব্রিজ দিয়ে অতি কষ্টে লোক চলাচল ও উদৃত্ত উৎপাদিত ফসল ও মালামাল পরিবহন করে আসছিল। ব্রীজ নির্মান শুরুর প্রয়োজনে ঐ ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মান স্থলের পাশে কোন প্রকার লোকচলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করে দেননি। তখন ১/২ বছরের মধ্যে ব্রীজটির কাজ শেষ করার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষীয় আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু প্রায় দেখা যায় কিছু মিস্ত্রী বেশিরভাগ সময় বর্ষাকালে নামমাত্র কাজ করে উধাও হয়ে যায়। শেষমেষ জনগনকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল গত বর্ষা মৌসুমের আগে অবশ্যই ব্রীজের কাজ সমাপ্ত করা হবে। কিন্তু চলতি শুষ্ক মৌসুমেও কখনো কাজের ধীরগতি এবং কখনো দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ রাখা দেখে জনগনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। জনগন চায় অতি শীঘ্রই নির্মান কাজ শেষ করে যেন লোকচলাচল ও যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে জনদূর্ভোগ থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করা হয়।
ব্রিজের কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো: আসাদ উল্লাহ বলেন,কয়েক বার ব্রিজের ডিজাইন পরিবর্তনের কারনে কাজ সমাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে। এর আগেও কাজ সমাপ্ততির একাধিক তারিখ দিয়ে বরখেলাফের জবাবে তিনি বলেন,এমপির লোকজন ডিষ্টার্ব করাতে কাজ বন্ধ রেখেছিলাম।পরে এমপি এ সমস্যা সমাধা করে এখন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করাচ্ছেন। এমপির লোকজন কি ধরনের ডিষ্টার্ব করেছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে প্রতিবেদককে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।এখন ব্রিজের কাজ সমাপ্তিতে কোন বাধা নেই বলেও জানান তিনি।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহামদ জানান,ব্রিজটির কারণে আমার মনিরঝিলবাসী চরম দুর্ভোগে আছে।ব্রিজটির কাজ দ্রুত শেষ করে জনদুর্ভোগ থেকে মনিরঝিলবাসীকে রক্ষাকরার জন্য আমি যতাযত কতৃপক্ষের কছে জোর দাবী জানাচ্ছি।আর এমপির লোকজন ব্রিজের কাজে ডিষ্টার্ব করে বলে ঠিকাদার যে অভিযোগ তুলেছে তা সম্পুন্ন মিথ্যা।আমি খবর নিয়ে জেনেছি ঠিকাদার একাদিক সাইডে কাজ নিয়ে ব্যাস্থ থাকেন। মুলত লোকবল সংকটের কারণে ব্রিজের কাজ শেষ করতে দেরী হচ্ছে তার।
রামু উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলি মো.খায়রুল আলম ব্রিজের ডিজাইন পরিবর্তনে কারণে কাজের বিলম্বের বিষয়টি স্বিকার করে বলেন,গার্ডারের কাজ শেষ হয়েছে,বাকি আছে শুধু ডালাইয়ের কাজ।আশা করছি দ্রুত শেষ হবে।
তবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে এত দীর্ঘ সময় বিলম্ব করাটা সরকারি দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলা বলেও মনে করছেন অনেকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন,আমি ইন্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলেছি।অতি দ্রুত ব্রিজের কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন।আমি কয়েকদিনের মধ্যে পরিদর্শনে যাবো।বিষয়টি সমন্বয় সভায় উত্তাপন করা হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন,আমার অগ্রাধিকার প্রকল্প থেকে সোনাইছড়ি ব্রিজের এ টাকাটুকু বরাদ্দ দিয়েছিলাম।আজ থেকে ৩ বছর আগে কাজ শেষ করার কথা।ঠিকাদারের গাফলতি, অযোগ্যতা, অক্ষমতার কারণে কাজটি এখনো শেষ হয়নি।আমি জেলা অফিসে যোগাযোগ করবো। তাকে নোটিশ দেয়া হবে।