রামুতে মিলেছে প্রাচীন সভ্যতার অসংখ্য নিদর্শন

কামাল হোসেন,রামু :
কক্সবাজারে প্রাথমিক পর্যায়ের ৪টি উপজেলার মাসব্যাপী প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
গত ১৬ নভেম্বর (শনিবার) থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কক্সবাজার জেলাধীন সদর, রামু, উখিয়া ও মহেশখালীতে প্রাথমিকভাবে ৪ টি উপজেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কাজ আজ (১৫ ডিসেম্বর) সমাপ্ত করেছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগ।তাদের অনুসন্ধানে এই চার উপজেলায় সন্ধান মিলেছে অসংখ্য পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বিশেষ করে রামুতে মিলেছে প্রাচীন সভ্যতার স্থাপনার অসংখ্য প্রত্নবস্তু ও প্রত্ননিদর্শন। প্রত্নস্থল ও আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে প্রাচীন সভ্যতার ১৫০০ থেকে ১০০০ বছর আগের বিভিন্ন আমলের ভিন্ন ভিন্ন পেটানের বেশকিছু প্রাচীন ইট, টেরাকোটা, প্রাচীন শিলালিপি, ব্রিটিশ আমলের কয়েন, খাবারের প্লেট, কম্পাস, হাতির পায়ের কঙ্কাল সংগ্রহ করেছেন অনুসন্ধান দলটি। সংগৃহীত প্রত্নবস্তুর অধিকাংশই রামু থেকে প্রাপ্ত। রামুর প্রত্নস্থানে প্রাপ্ত কিছু ইটের সাথে কুমিল্লার শালবন বিহারের ইটের মিল রয়েছে বলেও জানা যায়। এখান থেকে সংগৃহীত প্রত্নবস্তুগুলো আঞ্চলিক কার্যালয়ের সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করা হবে। ভবিষ্যতে রামুতে নির্মিত জাদুঘরে সংগৃহীত প্রত্নবস্তুগুলো প্রদর্শন করা হবে বলে আশাবাদব্যাক্ত করেন জরিপ দলের কর্মকর্তারা।
প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান দলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.শাহীন আলম জানান,৪ টি উপজেলায় ৫০ টি স্থানে আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করেছি।এর মধ্যে ২০টি স্থানের প্রাপ্ত পুরাকীর্তির প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। ২০টির মধ্যে ৮টি পুরাকীর্তি ও প্রত্নস্থলকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করার সুপারিশ করার চেষ্টা করা হবে।এগুলো হলো রামুর কাউয়ারখোপের উখিয়ারঘোনার কানারাজার গুহা,লট উখিয়ারঘোনা পাহাড়ের চূড়ার লাওয়ে জাদি, পশ্চিম মনিরঝিল দরগাপাড়া পুরাতন জাদি, উত্তর মিঠাছড়ির প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার,রাজারকুল রামকোট বৌদ্ধ স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষের ঢিবি,অফিসেরচর ক্যাপ্টেন কক্সের বাংলো,ছোট মহেশখালী মৈনাক পাহাড়ের জাদি,সদর ঝিলংজার সাচী চৌধুরী জামে মসজিদ। এই ৮ টি পুরাকীর্তি ও প্রত্নস্থলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় মুসলিমপূর্ব থেকে ব্রিটিশ আমলের নিদর্শন বলে আমাদের কাছে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান দলের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড.মো.আতাউর রহমান জানান,আমরা কক্সবাজার জেলার প্রাথমিক পর্যায়ে ৪টি উপজেলাতে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করেছি।মাসব্যাপী এ জরিপ ও অনুসন্ধান চলাকালে আমরা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থানগুলোকে তালিকাকরণ ও ডকুমেন্টেশন করার চেষ্টা করেছি।আমাদের জরিপ ও অনুসন্ধানকালে মুসলিমপূর্ব থেকে ব্রিটিশ আমলের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছি। প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব বিবেচনা করে জাতীয় ঐতাহ্য হিসেবে সরকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.হান্নান মিয়া জানান,কক্সবাজার কেবল পর্যটন এলাকা নয় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদে ভরপুর জনপদও।আর রামু হচ্ছে পুরাকীর্তির শহর। রামুতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণের পাশাপশি একটি সমৃদ্ধশালী প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর গড়ে তোলা হবে।শুধু তাই নয় প্রতিটি জেলাতে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশে গুহা ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর নেই বললেই চলে। রামুর কাউয়ারখোপের কানারাজার গুহাটি ব্যতিক্রমী এবং অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এ গুহাটি যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি এর আশপাশের পরিবেশও চমৎকার। আগামী শুস্ক মৌসুমে এ গুহাটি খনন করা হবে।

ড. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে এই দলে আরও ছিলেন ফিল্ড অফিসার শাহীন আলম, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, গবেষণা সহকারী কাজী মো. ওমর ফারুক রুবেল, সার্ভেয়ার চাই থোয়াই মারমা, পটারী রেকর্ডার ওমর ফারুক ও অফিস সহকারী লক্ষ্মণ দাস প্রমুখ।