ডেস্ক নিউজ:

পতন থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিদিনই বাজার খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমতে কমতে ৪ হাজার ৫১৪ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই বড় পতন হয়েছে। লেনদেন কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। পতনের বাজারে মোটা অঙ্কের বাজার মূলধনও হারিয়েছে ডিএসই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের শেয়ারবাজারের প্রতি ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের ভরসা দেওয়ার মতো কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ডিএসই -এর কোনও মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে খারাপ ও দুর্বল কোম্পানি বাজারে আসছে, অথচ ঠেকানো যাচ্ছে না। দুর্নীতি বছরের পর বছর ধরে চলছে। বছরের পর বছর লোকসান গুনছে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা।’ তিনি বলেন, ‘যেসব নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের দেখার কথা, তারা দেখছেন না। বাজারে সুশাসন বলতে কিছুই নেই। যে কারণে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আসছে না। ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট এখনও কাটেনি। তবে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির একটা প্রভাব এই বাজারে পড়ছে হয়তো।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সুদের হার বেশি হওয়ায় সবাই ব্যাংকেই টাকা রাখছে। শেয়ারবাজারের দিকে আসছে না। একই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও হচ্ছে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, এখন প্রত্যেকটি শেয়ারের মূল্যই আকর্ষণীয়। এখন শেয়ার কেনার সময়। বাজারের প্রতি আস্থা ফিরলে বা বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনা শুরু করলে এই পতনের বাজারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে বাজার অব্যাহতভাবে পতন হওয়ায় ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। পতন ঠেকাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করতে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বড় অঙ্কের মূলধন হারানোর পাশাপাশি সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭৭টির। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
এদিকে পতনের বাজারে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ তিন শ’ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৬২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এছাড়া ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৫৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছিল ৬০ দশমিক ১০ পয়েন্ট । অর্থাৎ দুই সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক হারালো ২১৭ পয়েন্ট। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, এই বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে টানা পতন শুরু হয়। বছরজুড়েই পতনের এ ধারা থেকে বের হতে পারেনি শেয়ারবাজার। গত নভেম্বরের কিছু দিন কিছুটা চাঙাভাব এলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই আবারও হোঁচট খায় শেয়ারবাজার।