ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা

বার্তা পরিবেশকঃ

ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের অভিভাবক প্রার্থী শফিউল আলমের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাধারণ অভিভাবক ও জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে ঈদগাহ প্যানেলের অন্যতম প্রার্থী শফিউল আলম ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় অপর অভিভাবক প্রার্থী আবদুর রহিম মুন্সীর নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ইসলামাবাদ ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, মেম্বার সাইফুলের ভাই বেলালসহ ৭/৮ লোক সশস্ত্র হামলা চালায়। নির্যাতিত প্রার্থী শফিউল আলম জানান, তিনি তার কয়েকজন শুভাকাংঙ্খীসহ হিন্দু পাড়ায় প্রচারণা চালানোর সময় দেখতে পান, অভিযুক্ত শিক্ষক দেলোয়ার নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে কয়েকজন প্রার্থীর প্রতীক নম্বর জানিয়ে দিয়ে ভোটারদের ভোট দিতে প্রলুদ্ধ করছেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে প্রার্থী রহিম মুন্সীকে ঘটনাস্থলে পাঠান। এ সময় তার মোটর সাইকেলে আরো দুইজন ছিল। পরক্ষণে সাইফুল মেম্বারের নের্তৃত্বে তার নিজের ভাইসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮জন এসে আচমকা প্রার্থী শফিউল আলমের উপর হামলা চালায়। তারা লাঠিসোটার ব্যবহার ও কিল ঘুষি মেরে তাকে মারাত্মক জখম করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে এলাকা ত্যাগ করতে বলে। স্থানীয়রা আহত শফিউলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

শফিউলের উপর হামলার প্রতিবাদে বিকেলে ঈদগাঁও বাজারের শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখেন, জালালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ, জেলা যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির চৌধুরী হিমু, ইসলামাবাদ ইউপি সদস্য ও সদর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী, অভিভাবক মাহুমুদুল করিম গুন্নু, প্রার্থী শহিদ উল্লাহ মিয়াজী। উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি মিজানুল হক, প্রার্থী এসএম সরওয়ার কামাল, কামাল উদ্দিন, শামিমা আকতারসহ বিপুল সংখ্যক বিক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও জনতা।

সভায় বক্তারা ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। পাশাপাশি ভোটের দিন যাতে সম্মানিত অভিভাবকেরা সকল প্রকার ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে অবাধ ও নির্বিঘেœ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, এ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং নির্বাচনী বিধি লংঘনকারী চিহ্নিত শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার আহবান জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ১৫ ডিসেম্বর রোববার জেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক পদে (সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত বক্তব্যে প্রাথী শফিউল আলম দুঃখের সাথে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত তার অনুগত ও মনোনীত প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে বিভিন্ন মোবাইল নং ব্যবহার করে প্রতিদিন অভিভাবকদের নিকট ভোট প্রার্থনাসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন। তাদের মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহিমকে বিজয়ী করতে বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক আবদুল মজিদ খান প্রার্থীসহ অভিভাবকদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। খন্ডকালীন শিক্ষক মোজাম্মেল হক, মোঃ আলম এবং আনিসুর রহমান প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য অভিভাবকেেদর নিকট গোপনে-প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনা করে আসছে। ভোট না দিলে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে টের পাবে বলেও অনেক শিক্ষার্থীকে হুমকি দিচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক মোঃ আলম ছাত্রাবাসে অবস্থানরত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিকট গভীর রাতে প্রার্থী আবদুর রহিমকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নিজ হাতে এ প্রাথীর প্রচারপত্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলি করেছেন। তাদের বুঝানো হয়, তাদের পিতা/মাতা যেন অবশ্যই আবদুর রহিমসহ প্রধান শিক্ষক মনোনীত অপরাপর প্রার্থীদের বিজয়ী করেন। উল্লেখিত শিক্ষকেরা ঈদগাঁওর চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম, বর্তমান কমিটির সদস্য আবদুর রহিম ও কমিটির অপর সদস্য নুরুল হাকিম এবং সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক পদের রেনু আরাকে ভোট দিতে বিশেষভাবে তাগাদা দিচ্ছেন, যা নির্বাচনী আচরনবিধির সুস্পষ্ট লংঘন।

প্রার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সম্ভাব্য ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সফল করতে প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত বিদ্যালয়ের অপরাপর শিক্ষকদের নিয়ে দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে নীলনকশা চূড়ান্ত করছেন। বর্তমান সভাপতি মাহমুদুল করিম মাদু ও প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতার দাপট, কালো টাকা ও নানা ছলচাতুরীর কাছে আমরা সম্পূর্ণ জিম্মি হয়ে পড়েছি। বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসারকে বারবার অবগত করলেও আশ্বাস ছাড়া আমরা আর কিছুই পাইনি। ফলে আমরা চরম উৎকন্ঠা ও উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছি। দলীয় সাধারণ সম্পাদকের পদকে পুঁজি করে বর্তমান সভাপতি নেতাকর্মীদের নিয়ে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে এলাকায় তার পেশিশক্তির মহড়া জানান দিচ্ছেন। আমরা ইতেমধ্যে জানতে পেরেছি যে, তাদের মনোনীত প্রার্থীদেরকে যেকোন উপায়ে জিতিয়ে আনতে ভোটের দিন বহিরাগত প্রায় ৪/৫শ লোক জড়ো করে প্রভাব বিস্তার ও জোর জবরদস্তি করা হবে। তাদের জন্য নাকি সেদিন খাবারেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিষয়টি এলাকার সর্বত্র চাউর হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় হতাশ হওয়া ছাড়া আমাদের করার আর কিছুই নেই।

মহিলা অভিভাবক প্রার্থী শামিমা আকতার বলেন, মহিলা অভিভাবক প্রার্থী রেনু আরাকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী বাবুলদে সহ ২জন জাগির পাড়ার মহিলা ভোটারদের কাছে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রার্থী শহিদ উল্লাহ মিয়াজী বলেন, ভোটের দিন যাতে সম্মানিত অভিভাবকেরা সকল প্রকার ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে অবাধ ও নির্বিঘেœ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে ব্যাপারে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি চিহ্নিত শিক্ষকদেরকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার আহবান জানাচ্ছি। ঈদগাঁহর আপামর জনসাধারণ মনোনীত ‘ঈদগাঁহ প্যানেল’কে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে জয়যুক্ত করে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ে স্থানীয় নেতৃত্ব প্রতিষ্টা করতে আমরা সম্মানিত অভিভাবকদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের সম্ভাব্য বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে বৃহত্তর ঈদগাঁওবাসীর প্রতি সর্নিবন্ধ অনুরোধ করছি।